নিজস্ব প্রতিবেদক:
সংকটের স্থায়ী সমাধান না হওয়া পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের থাকা-খাওয়া ও ভরণপোষণের দায়িত্ব নিয়েছে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচিসহ (ডব্লিউএফপি) উন্নয়ন সহযোগীরা। সম্প্রতি সচিবালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব মো. শাহ কামালের সঙ্গে বৈঠক করে এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তারা। এ ক্ষেত্রে মিয়ানমার থেকে আসা বাস্তুচ্যুত এসব রোহিঙ্গা নাগরিককে শরণার্থী মর্যাদাও দিতে হবে না। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য। আরও জানা গেছে, তুরস্কের শরণার্থী শিবির পরিদর্শন ও রোহিঙ্গাদের বিষয়ে দু’দেশের সহযোগিতার কৌশল প্রণয়নে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী-সচিবের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল সোমবার তুরস্কে যাচ্ছে। ২৪ নভেম্বর প্রতিনিধি দল দেশে ফেরার পর আগামী ডিসেম্বরে রোহিঙ্গাদের দেখতে বাংলাদেশ সফরে আসবেন তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদিরিম।
এ প্রসঙ্গে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া গতকাল রোববার সচিবালয়ে নিজ দফতরে বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের থাকা-খাওয়ার বিষয়ে উন্নয়ন সহযোগীরা অতীতেও আমাদের সঙ্গে ছিল। আগামীতেও থাকবে, চিন্তার কোনো কারণ নেই। জাতিসংঘসহ উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ রয়েছে। তারা এ বিষয়ে আমাদের আশ্বস্ত করেছে।’ জানা গেছে, মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের বিষয়ে গত ১৩ নভেম্বর সচিবালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শাহ কামালের সঙ্গে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি), জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর), জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা (ইউনিসেফ), বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও), আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম), জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা), টার্কিশ ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর রিহেবিলিটেশন (টিকা), নরওয়েজিয়ান রেড ক্রসসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী ও দাতা সংস্থার প্রতিনিধি। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, দেশে নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত মিলে ১০ লাখ ৪৭ হাজার ৪৫৫ জন রোহিঙ্গা অবস্থান করছে।
প্রতিদিন জনপ্রতি ১০০ টাকা হারে এসব শরণার্থীর জন্য খরচ হচ্ছে কমবেশি সাড়ে ১০ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রতি মাসে খরচ ৩১৫ কোটি টাকা। ডব্লিউএফপি বর্তমানে ৬ লাখ ৭৭ হাজার ৭৪৫ জনকে এবং তুরস্ক সরকার প্রতিদিন ৩০ হাজার লোকের খাবার সরবরাহ করছে। এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন এনজিও, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি রোহিঙ্গাদের খাবার দিচ্ছে। ডব্লিউএফপি আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত খাদ্য সহায়তা দেয়ার আশ্বাস দিয়েছে। দিন দিন খাদ্য সহায়তা কমে আসছে এবং প্রতিশ্রুত বিদেশি সহায়তার অর্থও এখনও পুরো পাওয়া যায়নি। কবে নাগাদ রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফেরত যেতে পারবে সে বিষয়ও স্পষ্ট নয়। সংকট দীর্ঘস্থায়ী হলে বাংলাদেশের পক্ষে এ বোঝা বহন করা সম্ভব হবে না উল্লেখ করে সরকারের সীমাবদ্ধতা তুলে ধরা হয় বৈঠকে।
এ সময় ডব্লিওএফপির প্রতিনিধি বাংলাদেশকে আশ্বস্ত করে বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধান না হওয়া পর্যন্ত তাদের খাবারসহ সব ধরনের ভরণপোষণের দায়িত্ব নেবে তারা। সংস্থাটির আগামী বাজেটে এ খাতের বরাদ্দ বাড়ানো হবে। বিষয়টি নিশ্চিত করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শাহ কামাল বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা নাগরিকদের খাবারের দায়িত্ব নিয়েছে ডব্লিউএফপি। এটা আমাদের জন্য বড় সাফল্য। রোহিঙ্গারা যতদিন পর্যন্ত বাংলাদেশে থাকবে ততদিন তারা খাবার সরবরাহ করবে। পাশাপাশি জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা, তুরস্ক, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপানসহ উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশ রোহিঙ্গাদের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে। এ ছাড়া মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন দেশও এ বিষয়ে এগিয়ে আসছে।’
এ ক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের শরণার্থীর মর্যাদা দিতে হবে কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না, এখন যে অবস্থায় আছে, সেটাই থাকবে।’ দুর্যোগ সচিব আরও জানান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার নেতৃত্বে তিনিসহ ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল আজ সোমবার সকালে তুরস্ক যাচ্ছে। এই প্রতিনিধি দল শরণার্থী শিবির পরিদর্শন ছাড়াও দেশটির প্রধানমন্ত্রী ও উপ-প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবে। সময়-সুযোগ হলে তুরস্কের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ হতে পারে দলটির।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার তথ্য অনুযায়ী শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার ক্ষেত্রে তালিকার শীর্ষে রয়েছে তুরস্ক। দেশটি সর্বোচ্চ ২৯ লাখ মানুষকে আশ্রয় দিয়েছে। এ ছাড়া রোহিঙ্গা সংকট শুরু থেকেই দেশটি সাহায্যের হাত নিয়ে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। ইতিমধ্যে দেশটির ফার্স্টলেডি, পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ রাষ্ট্রীয় পদস্থ ব্যক্তিরা রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে খাদ্যসহ বিভিন্ন সহায়তা দিয়েছে। প্রতিদিন এক লাখ লোকের খাওয়াসহ ৩০ হাজার আশ্রয় শেল্টার নির্মাণ করে দিতে চায় দেশটি।
এ ছাড়া তাদের শরণার্থী শিবিরের আদলে রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প স্থাপনসহ ৫টি বিষয়ে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে পানি, চিকিৎসা, টিউবওয়েল ও টয়লেট নির্মাণ। আগামী ডিসেম্বরে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে আসতে চায়। তাকেও আনুষ্ঠানিকভাবে আমন্ত্রণ জানানো হবে।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি