২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ৯:৪৮

রাজধানীর দুঃসহ যানজট নিরসনে ইউলুপের নির্মাণকাজ শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজধানীর দুঃসহ যানজট নিরসনে নানা প্রকল্প ব্যর্থ হওয়ার পর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নতুন একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। উত্তরা থেকে সাতরাস্তা পর্যন্ত নির্বিঘ্নে যান চলাচল নিশ্চিত করতে ১১টি স্থানে নির্মাণ করা হচ্ছে ইউলুপ। এই প্রকল্প শেষ হলে এই মোড়গুলোতে গাড়িগুলোতে আর সিগন্যালে আটকে থাকতে হবে না বলে জানিয়েছে সিটি করপোরেশন।

রাজধানীতে প্রতিনিয়ত বেড়ে চলা যানজট মোকাবেলায় যখন কোনো কিছুই কাজে আসছে না তখন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রধান প্রকৌশলী কামরুল হাসানের গবেষণায় এই বিষয়টি সামনে আসে দুই বছর আগে। আর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় তার সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং মেয়র আনিসুল তার আগ্রহের কথা জানান।

ইংরেজি বর্ণ ‘ইউ’য়ের মতো দেখতে এই পদ্ধতিকে সংক্ষেপে বলা হচ্ছে ‘ইউলুপ’। উদ্ভাবকের দাবি, কম খরচে এবং কম সময়ে এত কার্যকর পদ্ধতি অতীতে কারো মাথায় আসেনি। শুধু কথা নয়, যত দ্রুত এটি বাস্তবায়ন সম্ভব হবে, তত শিগগিরই মিলবে সুফল।

সে সময় কামরুল হাসান বলেন, ‘আমার এই বিশেষ কৌশল বাস্তবায়ন হলে সড়ক-মহাসড়কে গাড়ি চলতে এক মুহূর্তে থামতে হবে না। সিগন্যালে আটকে থাকতে হবে না। ট্রাফিক পুলিশের প্রয়োজন হবে না। লাগবে না সিগন্যাল বাতিও। এ পদ্ধতিতে একাধিক রাস্তার সংযোগস্থল বা ইন্টারসেকশনে কিছুটা পরিবর্তন আনতে হবে। সেই সঙ্গে ক্রসিংয়ের কাছাকাছি সড়কের ভেতরে বিশেষ ধরনের ইউটার্ন স্থাপন করতে হবে।’

সিটি করপোরেশনের ইউলুপ প্রকল্প কর্মকর্তা মাহবুব আলম এসব স্থাপনা তৈরি হলে ডান বা বাম দিকে যাওয়ার জন্য গাড়িগুলোকে সিগন্যালের জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। যেসব গাড়ি সোজা যাবে, সেগুলো বামের লেন দিয়ে সোজা চলে যাবে। আর যেগুলো ডানে মোড় নেবে সেগুলো মোড় পেরিয়ে ইউলুপ দিয়ে ঘুরে এসে বামের রাস্তা ধরে চলে যাবে। এতে মোড় ঘুরতে আগের চেয়ে গাড়িগুলোকে বেশি চলতে হবে। তবে সিগন্যালে আটকে থাকবে না বলে আগের তুলনায় দ্রুত গন্তব্যে যেতে পারবে সেগুলো।

মেয়র আনিসুলের পরিকল্পনা অনুযায়ী ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন উত্তরা পর্যন্ত ১১টি এবং গাজীপুর সিটি করপোরেশন উত্তরা থেকে গাজীপুর পর্যন্ত আরও ১০টি ইউলুপ নির্মাণ করবে।

সাতমাসের মধ্যে এসব ইউলুপের নির্মাণ কাজ শেষ করার বিষয়ে আশাবাদী সিটি করপোরেশন। ২০১৮ সালের মে মাসে এগুলো যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হলে উত্তরা থেকে নির্বিঘ্নে সাতরাস্তা পর্যন্ত চলাচল করা যাবে বলে আশা করছে সিটি করপোরেশন।

গাজীপুর থেকে সাতরাস্তা পর্যন্ত মোট খরচ হবে ৫০ কোটি টাকা। তবে উত্তরা থেকে সাতরাস্তা পর্যন্ত ব্যয় হবে ২৫ কোটি টাকা। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে এই কাজ চলছে।

যানজট কমিয়ে আনার লক্ষ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আনিসুল হক বছর দুয়েক আগেই গাজীপুর থেকে সাতরাস্তা পর্যন্ত মোট ২১টি ইউলুপ নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলেন। তবে যে সময়ের মধ্যে এগুলো নির্মাণের প্রতিশ্রুতি ছিল, সেই সময়সীমা পেরিয়ে গেছে বহু আগেই।

নানা জটিলতায় প্রকল্প আটকে থাকার পর অবশেষে উত্তরা থেকে সাতরাস্তা পর্যন্ত ছয়টি ইউলুপের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন প্রকল্প পরিচালক ও ডিএনসিসির অঞ্চল-৩ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুব আলম। এগুলোর মধ্যে এখন পর্যন্ত মহাখালী এলাকায় প্রকল্পের কাজ দৃশ্যমান।

রাজধানীর সাতরাস্তা, নাবিস্কো, মহাখালী বাস টার্মিনাল, মহাখালী ফ্লাইওভার, বনানী ওভারব্রিজ, কাকলী, উত্তরা র‌্যাব কার্যালয়, উত্তরা হাউজ বিল্ডিং, রাজলক্ষ্মী হয়ে আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত এই ১১টি ইউলুপগুলো নির্মাণের স্থান নির্ধারিত হয়েছে।

সিটি করপোরেশন জানিয়েছে এই ১১টি ইউলুপ তৈরি হবে (এ, বি এবং ডি) এই তিনটি ক্যাটাগরিতে।

‘এ’ ক্যাটাগরির মধ্যে থাকছে বাসা ও ট্রাকের মতো বড় বাহন চলাচলের সুযোগ। ‘বি’ ক্যাটাগরি থাকছে ছোট গাড়ি ও ট্যাক্সির জন্য। এখানে শুধু ‘এ’ এবং ‘বি’ ক্যাটাগরিতে একটি লেন থাকছে যেখানে পাশাপাশি দুটি গাড়ি যাওয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না। যেমন: আর্মি গলফ ক্লাবের সামনের অংশ (বি), বনানী উড়াল সড়ক সংলগ্ন (এ-বি) এর সমন্বয়, চেয়ারম্যানবাড়ি বনানী (বি), কহিনুর ক্যামিকাল-তেজগাঁও শিল্প এলাকা (বি)।

যেখানে দিয়ে দুই লেনের বা পাশাপাশি দুটি গাড়ি ইউটার্ন নেয়ার সুযোগ থাকছে সেখানে ডাবল বা ‘ডি’ ক্যাটাগরি হিসেবে ধরা হয়েছে। যেখানে ‘এ’, ও ‘বি’ ক্যাটাগরিতে দুটো গাড়ি পাশাপাশি চলতে পারবে। যেমন: উত্তরার জসিমউদ্দিন,  (রাজলক্ষ্মী) (বি-ডি), উত্তরা র‌্যাব-১ কার্যালয় সংলগ্ন  (বি-ডি), ফিলিং একাডেমি (এ-ডি), বনানী/কাকলী রেল স্টেশন (বি-ডি), মহাখালী ফ্লাইওভার (এ-ডি), মহাখালী বাস টার্মিনাল (এ-ডি), সাতরাস্তা মোড় (এ-ডি)।

প্রকল্প পরিচালক মাহবুব আলম বলেন, এখানে মূল সড়কের কোনো লেন কমানো হবে না বরং ঠিক ইউলুপ সংলগ্ন অংশটিতে অতিরিক্ত জায়গা নিয়ে ইউলুপের লেন বাড়ানো হবে।

ডিএনসিসি অঞ্চল-৩ এর এই প্রকৌশলী বলেন, ‘আমরা প্রকল্পটিকে দুই ভাগে ভাগ করেছি। এক ভাগে ছয়টি ইউলুপ হবে ও যার ব্যয় ১২ কোটি ১৬ লাখ টাকা এবং দ্বিতীয় ভাগে পাঁচটি ইউলুপের ব্যয় ১১ কোটি ২০ লাখ টাকা ধরা হয়েছে।’

গত বছরের ২৮ নভেম্বর ইউটার্ন নির্মাণের বিষয়ে আয়োজিত এক সভায় ডিএনসিসির পক্ষ থেকে জানানো হয়, গাজীপুর থেকে হাতিরঝিল পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার সড়ক ট্রাফিক সিগন্যালমুক্ত করতে ছোট-বড় মিলিয়ে মোট ৬৯টি ক্রসিং বন্ধ করে মোট ২১টি ইউলুপ নির্মাণ করা হবে। একটি ইউলুপ থেকে আরেকটি ইউলুপের সর্বনিম্ন দূরত্ব ৮০০ মিটার আর সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ২ কিলোমিটার হবে।

দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ

প্রকাশ :নভেম্বর ১৬, ২০১৭ ৯:২৪ পূর্বাহ্ণ