আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
কলকাতার বাগমারির মুসলিম কবরস্থান এটি। ঢুকতেই পৌরসভার বোর্ড। সেখানে লেখা, ১৪৭ বিঘার এই কবরস্থান শুধু কলকাতা বা ভারতের নয়, এশিয়ার সব থেকে বড় সমাধিক্ষেত্র। বয়সেও এটাই কলকাতার প্রাচীনতম, ৪০০ বছরেরও পুরনো।
কোনো সমাধির গায়ে সুদৃশ্য চাদর বিছানো। লোকবিশ্বাসে কিছু পীর বাবার মাজারও গড়ে উঠেছে। অবিভক্ত দেশে লাহোর, সিয়ালকোট, ঢাকার অনেক পরিবারের কবরও রয়েছে এখানে। একদা দারুণ ধনী, প্রতিষ্ঠিত পরিবারের পুরনো কবরের গায়ে চোখ ধাঁধানো মিনাকারির কাজ, উর্দু-ফারসির ক্যালিগ্রাফিতে কবিতার লাইন খোদাই করা। কয়েক প্রজন্ম পরের জমানায় তাদের অবস্থাই হয়ত পড়তির দিকে। পুরনো পারিবারিক সমাধিসৌধের দশা ভাঙাচোরা, মেরামতের ক্ষমতা নেই।
তবে কলকাতার গোরস্থান-বিশেষজ্ঞ, লেখক তথা উর্দু কাগজের সাংবাদিক শাকিল আফরোজ অবশ্য বয়সের দাবি বা ‘এশিয়ার বৃহত্তম’ তকমাটা মানতে চাইলেন না। তিনি বললেন, কোনো প্রমাণ নেই। বয়সের প্রাচীনত্বেরও নথি নেই বাগমারিতে। তার মতে, ‘বিক্ষিপ্তভাবে বহু আগে থেকে মাটি দেওয়ার রীতি থাকতেও পারে। পৌরসভার নথি বলছে, গোরস্থানের জন্য জমি অধিগ্রহণের সময়কাল গত শতকের গোড়ায়।’
শবযাত্রীদের আচার-অনুষ্ঠানের কাজে নিযুক্ত ইমাম মুফতি খালিদ আজম হায়দারি বলেন, ‘সাধারণত কবরের গায়ে গাছ পোঁতার রীতি ছিল দীর্ঘদিন। গাছেরও তো প্রাণ আছে। ওরাও দোয়া করে। আমাদের বিশ্বাস, গাছ থাকাটা শুভ।’ ১৯৩৫ সালের পুরনো কবরের মাথায় চাঁদোয়ার মতো ছেয়ে আছে লতাপাতা। নিচে মৃতের নাম, বাংলা ও ইংরেজিতে লেখা।
আশির দশক থেকে প্রিয়জনের জন্য আলাদা করে কবরের জায়গা কিনে সৌধ তৈরির চল কার্যত বন্ধ। আত্মীয়-পরিবারহীন পুরনো কবরগুলোর জমিও চিহ্নিত করা হয়েছে। জনসংখ্যার চাপে, মৃতদের দেশেও ঠাঁইয়ের অভাব। এখন পাঁচ বছর অন্তর কবরের জমি পুনর্ব্যবহার করা হচ্ছে। কবরের জন্য ৫৯টি ব্লক, দু’টি পুকুর বাগমারিতে। প্রিয়জনকে মাটি দেওয়ার আগে পুকুরে হাত-পা ধুয়ে ওজু করেন শোকার্ত আত্মীয়েরা। শবে বরাতের রাতে এই কবরস্থানেই লাখো লোকের ভিড় হয়। জ্বলে ওঠে মোমের শিখা, প্রদীপ।
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ