নিজস্ব প্রতিবেদক:
বরিশালের কৃতি সন্তান সাবেক রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আব্দুর রহমান বিশ্বাসের প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার সকাল সাড়ে ১১টায় বরিশাল জিলা স্কুল মাঠে তার নামাজে জানাজায় কয়েক হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করেন। মরহুমের ৫ম ছেলে শিবলী বিশ্বাস নামাজে জানাজায় ইমামতি করেন।
এতে বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব ও বরিশাল মহানগর বিএনপি’র সভাপতি সাবেক মেয়র অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার, মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলাল, সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র হাজী কেএম শহীদুল্লাহ সহিদ, বিভাগীয় কমিশনার মো. শহীদুজ্জামান, মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আবুল কালাম আজাদ, জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান, পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম সহ বিভিন্ন দল-মতের কয়েক হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
জানাজা শেষে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক দলের পক্ষ থেকে মরহুমের কফিনে ফুলের শ্রদ্ধা জানানো হয়। এ সময় রহমান বিশ্বাসের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের নানা দিক নিয়ে কথা বলেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।
জিলা স্কুল মাঠে নামাজে জানাজা শেষে কিছু সময়ের জন্য তার মরহেদ নগরীর গোড়াচাঁদ দাস রোডের নিজ বাস ভবনের সামনে নিয়ে রাখা হয়। দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে একটি বিশেষ চার্টার বিমানযোগে তার মরহেদ ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। এর আগে সকাল ১০টা ৩১ মিনিটে তার মহদেহবাহী চার্টার বিমান বরিশাল বিমান বন্দরে অবতরণ করে।
বাদ আছর গুলশান আজাদ মসজিদ চত্ত্বরে নামাজে জানাজা শেষে তার মরদেহ বনানী গোরস্থানে দাফন করার কথা জানিয়েছেন মরহুমের ৫ম ছেলে শিবলী বিশ্বাস। এর আগে ঢাকার পুরানা পল্টনের বিএনপি দলীয় কার্যালয়ের সামনে এবং হাইকোর্ট চত্ত্বরে তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা বলে জানিয়েছেন শিবলী বিশ্বাস।
১৯২৬ সালের পহেলা সেপ্টেম্বর বরিশাল সদর উপজেলার শায়েস্তাবাদ ইউনিয়নের হবিনগর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন রহমান বিশ্বাস।
বরিশাল জিলা স্কুল থেকে মেট্রিকুলেশন পাশ করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী পাশ করে ৫০ দশকে বরিশালে আইন পেশায় যুক্ত হন তিনি। ১৯৬২ ও ১৯৬৫ সালে তিনি দুই বার পূর্ব পাকিস্তান আইন সভার সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৬৫ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তান সংসদীয় সচিব ছিলেন তিনি।
১৯৬৭ সালে পাকিস্তান প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে জাতিসংঘের ২২তম অধিবেশনে যোগদান করেন। ১৯৭৪ ও ১৯৭৬ সালে তিনি দুই বার বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন।
১৯৭৭ সালে তিনি বরিশাল পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালে তিনি বরিশাল সদর আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৭৯ সাল থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত জিয়াউর রহমানের মন্ত্রীসভার পাটমন্ত্রী এবং ১৯৮১ সাল থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত বিচারপতি আব্দুস সাত্তার সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছিলেন। ১৯৯১ সালের ফেব্রুয়ারীতে ৫ম জাতীয় সংষদ নির্বাচনে তিনি বরিশাল সদর আসন থেকে ফের সংসদ সদস্য নির্বাচিতন হন। একই বছরের ৪ এপ্রিল তিনি ৫ম জাতীয় সংসদের স্পিকার এবং পরবর্তীতে একই সরকারের রাস্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের ৮ অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশের রাস্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
বেশ কয়েক বছর ধরেই বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন রহমান বিশ্বাস। গত শুক্রবার রাত পৌঁনে ৯টার দিকে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ৯১ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। গত জুন মাসে তার সহধর্মীনি হোসনেয়ারা বেগম ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে রহমান বিশ্বাস ৫ ছেলে ও ২ মেয়ে, নাতি-নাতনী সহ অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে গেছেন।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ