নিজস্ব প্রতিবেদক:
২৩ দিন ধরে নিখোঁজ অনলাইন নিউজ পোর্টাল পূর্বপশ্চিম বিডি ডট নিউজের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক উৎপল দাস। এখনো তার কোনো সন্ধান না পেয়ে চরম উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন পরিবারের সদস্যরা। র্যাব-পুলিশের কাছে ধর্ণা দিয়েও সন্তানের খোঁজ পাননি তার বাবা চিত্তরঞ্জন দাস। ছোট ভাইয়ের খোঁজে বাবার সাথে রাস্তায় রাস্তায় কাঁদছেন ভাইবোনেরা। উৎপল কোথায় কেমন আছেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় সহকর্মীরাও। ৪০ বছরের শিক্ষকতা জীবন চিত্তরঞ্জন দাসের। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা থেকে অবসর নিলেও এখন শিক্ষকতা ছাড়েননি তিনি। স্থানীয় একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের অধ্যক্ষ৷ কিন্তু ছেলের সন্ধানে বৃদ্ধ বয়সে তাকে ঘুরতে হচ্ছে পথে পথে, নামতে হয়েছে রাজপথে। ছেলেকে পেতে বাবার চোখের পানি আর শুকায় না। সংবাদ সম্মেলন করে জাতির সামনে ছেলেকে ফিরে পাওয়ার আকুতি জানিয়েছেন। তাতেও উৎপলের সন্ধানের তদন্তের গতি বাড়েনি। উৎপল দাসের মা বিমলা রানী দাসের কান্না কিছুতেই থামছে না। ছেলের জন্য তিনি এখন শয্যাশায়ী। ছোট ছেলেটি প্রতিবছর জন্মদিনে মাকে ফোন করে আশীর্বাদ চাইতেন। গত মঙ্গলবার ছিল ছেলেটির ২৯তম জন্মদিন, কিন্তু মায়ের ফোন আর বাজেনি। দিনভর অপেক্ষায় কেটেছে তার। তিনি শুধু জানতে চান, তার নিখোঁজ ছেলেটি বেঁচে আছেন কি না।
অসুস্থ মাকে বিছানায় রেখে বাবাকে সাথে নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন উৎপলের ভাইবোনেরা। কিন্তু কোথাও ভাইয়ের খোঁজ পাচ্ছেন না তারা। রাস্তায় রাস্তায় কেঁদে চোখের পানি মুখছেন তারা। তাদের এই কান্না যেন দেখার কেউ নেই। বুধবার উৎপলের সন্ধানের দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)। এ খবর জানতে পেরে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার রাধানগর গ্রাম থেকে ঢাকায় ছুটে এসেছিলেন তার বাবা চিত্তরঞ্জন দাস। বাবার সাথে এসেছিলেন দুই বোন বিনিতা রানী দাস ও ববিতা রানী দাসসহ পরিবারের সদস্যরা। উৎপলের বাবা সমাবেশে বলেন, কথা বলার মতো আর শক্তি নেই। এখন শুধু রয়েছে কান্না। ২৩ দিন ধরে তিনি ও উৎপলের মা বিমলা রানী দাস কেঁদেই যাচ্ছেন; কিন্তু ছেলের সন্ধান পাচ্ছেন না। আমি শুধু আমার ছেলেকে ফিরে পেতে চাই। এসময় তিনি ছেলেকে ফেরত পেতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
কেউ তার ছেলেকে তুলে নিয়ে গেছে, এ ধারণাও করতে পারছেন না জানিয়ে চিত্তরঞ্জন দাস। ‘সারাজীবন মাস্টারি করলাম, শেষ বয়সে ছেলে হারানোর কষ্ট নিয়ে পথে পথে ঘুরছি।’ কথাগুলো বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
পাশে থাকা উৎপলের দুই বোন বিনিতা রানী দাস ও ববিতা রানী দাসও বাবাকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। মা-মাসি কথা বলতে না পারায় তাদের পক্ষে সমাবেশে কথা বলে উৎপলের নয় বছর বয়সী ভাগ্নে রুদ্র বিশ্বাস। ক্রন্দনরত এ শিশু কেবল একটি কথাই বলল, ‘ফিরিয়ে দিন আমার মামাকে।’
উৎপলের পরিবারের সদস্যদের আহাজারিতে আবেগাপ্লুত হয়ে চোখ ভিজিয়েছেন সমাবেশে উপস্থিত সাংবাদিকরাও। সমাবেশ শেষে উৎপলের বোন বিনীতা দাস বলেন, মা ভীষণ অসুস্থ। মা সব সময় আমাদের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে, কোনো খোঁজ এলো কি না। আর কত কাঁদবেন ছেলের জন্য? কাঁদতে কাঁদতে মা নির্বাক হয়ে বসে থাকে। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, র্যাব-পুলিশ সবার সঙ্গেই যোগাযোগ করেছি, কিন্তু কারো কাছ থেকে আশ্বস্ত হওয়ার মতো কোনো তথ্য পায়নি। তারপরও আমরা বুকে আশা বেঁধে রেখেছি। উৎপল বেঁচে আছে, আমাদের মাঝে ফিরে আসবে।
এদিকে পুলিশও আগের মতোই দাবি করেছে, তারা উৎপলের সন্ধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মতিঝিল থানার ওসি ওমর ফারুক বলেন, পুলিশ চেষ্টা করে যাচ্ছে। তবে কবে নাগাদ উৎপলের সন্ধানের তদন্ত শেষ হবে, তা জানাতে পারেননি তিনি। গত ১০ অক্টোবর থেকে উৎপলের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। নিখোঁজের ঘটনায় গত ২২ ও ২৩ অক্টোবর মতিঝিল থানায় দুটি পৃথক সাধারণ ডায়েরি করা হয় তার পরিবার ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষে। উৎপলের সহকর্মী ও বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন এক সপ্তাহ ধরে তার সন্ধানের দাবিতে আন্দোলন করছে।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ