নিজস্ব প্রতিবেদক:
লাগামহীন পেঁয়াজের দাম। রাজধানীর খুচরা বাজারে রোববার প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৮৫ থেকে ৯০ টাকায়। আমদানি করা পেঁয়াজ ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়। অথচ এক মাস আগে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়। আমদানি করা পেঁয়াজ ৩৫ থেকে ৩৮ টাকায়। সে হিসাবে গত এক মাসের ব্যবধানে কেজিতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৩০ টাকা। এর মধ্যে এক সপ্তাহের ব্যবধানে তিন দফায় দাম বেড়েছে ২০ থেকে ২৫ টাকা। গতকাল ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ টিসিবির দৈনিক বাজার দরের তালিকায় দেশি পেঁয়াজের দাম দেয়া আছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ৫০ থেকে ৬০ টাকা ছিল। এক মাস আগে দাম ছিল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। এক মাসের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ৭৩ দশমিক ৬৮ শতাংশ। এছাড়া বছরের তুলনায় দাম বেড়েছে ১৫৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ।
অন্যদিকে আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৪৮ থেকে ৫৫ টাকা। আর এক মাস আগে ছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। সেক্ষেত্রে এক মাসের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ৭৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ। বছরের তুলনায় দাম বেড়েছে ১৭০ দশমিক ৮৩ শতাংশ। জানতে চাইলে ক্যাবের চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, পণ্যের দাম কোনো সময় কমতে পারে আবার বাড়তেও পারে। যখন কোনো পণ্যের দাম বৃদ্ধি পায়, তখনই জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে আসে। তাই এটা দূর করতে সরকারকেই অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ও আমদানির মাধ্যমে চাহিদা নিরূপণ করে সরবরাহ স্বাভাবিক করতে হবে। সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলে পণ্যের দাম কমতে বাধ্য।
এদিকে গতকাল সরেজমিন রাজধানীর কারওয়ান বাজার ঘুরে দেশি ও আমদানি করা পেঁয়াজের কোনো সংকট দেখা যায়নি। বাজারে পাইকারি আড়তে পর্যাপ্ত পরিমাণ পেঁয়াজের বস্তা দেখা গেছে। আর খুচরা বাজারেও কোনো ধরনের সংকট লক্ষ করা যায়নি। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশের পেঁয়াজের বাজার ভারত থেকে আমদানির ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। ভারতের বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়েছে, তাই দেশেও এর প্রভাব পড়েছে। এছাড়া ভারতীয় পেঁয়াজের আমদানিও কমে গেছে। এ কারণে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম একটু বাড়তি। অন্যদিকে পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে দেশি পেঁয়াজ আছে, তবে তা পর্যাপ্ত নয়। দেশি পেঁয়াজের পর্যাপ্ত সরবরাহ নেই, তাই দাম একটু বাড়তির দিকে।
কারওয়ান বাজারের পাইকারি পেঁয়াজ ব্যবসায়ী আবদুল মালিক বলেন, বাজারে পুরান পেঁয়াজ শেষের দিকে। নতুন করে আবাদ করা পেঁয়াজ এখনও কৃষকের জমিতে আছে। সেই নতুন পেঁয়াজ আসতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে। তাই বাজারে দেশি পেঁয়াজের ঘাটতি রয়েছে, যার কারণে দাম একটু বাড়তির দিকে। তিনি বলেন, নতুন পেঁয়াজ এলেই দাম আবার কমতে থাকবে। একই বাজারের খুচরা পেঁয়াজ বিক্রেতা মো. হোসাইন আলী বলেন, আড়তদাররা বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করছেন। যে কারণে তাদেরও বেশি দামে পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে। আর বিক্রিও করতে হচ্ছে বেশি দামে। পাইকারি বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ার কারণেই শেষ পর্যন্ত এর প্রভাব গিয়ে পড়ছে ভোক্তার ওপর।
পেঁয়াজের রফতানি মূল্য টনপ্রতি ২০০ ডলার বাড়িয়েছে ভারতের ব্যবসায়ীরা। হঠাৎ করেই রোববার থেকে পেঁয়াজের এলসি মূল্য টনপ্রতি ২০০ ডলার বাড়িয়ে দিয়েছে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে কমেছে ভারত থেকে পেঁয়াজের আমদানি। এ অবস্থায় হিলি স্থলবন্দরের পাইকারি বাজারে দু’দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ১২ থেকে ১৪ টাকা।
দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারক বাবলুর রহমান বাবলু জানান, দফায় দফায় পেঁয়াজের এলসি মূল্য বাড়িয়ে এক সপ্তাহ আগে টনপ্রতি ৪০০ থেকে ৫০০ ডলারে উন্নীত করে ভারতের পেঁয়াজ রফতানিকারকরা। রোববার হঠাৎ করেই ভারতের ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের এলসি মূল্য ৫০০ ডলার থেকে ৭০০ ডলারে উন্নীত করে।
আমদানিকারক বাবলুর রহমান জানান, ভারতীয় ব্যবসায়ীরা তাদের জানিয়েছেন বন্যার কারণে সে দেশের পাটনা, বিহার, কানপুর, ইন্দর, গুজরাট, রাজস্থান রাজ্য থেকে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ রয়েছে। শুধু নাসিক ও বেঙ্গালোর থেকেই পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে। তবে আমদানি না বাড়ালে দাম আরও বাড়তে পারে। এলসি মূল্য বৃদ্ধির পাশাপাশি হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আশঙ্কাজনক হারে কমেছে পেঁয়াজ আমদানি। চাহিদার তুলনায় কম পেঁয়াজ আমদানি হওয়ায় এর প্রভাব বাজারে পড়েছে বলে জানান আমদানিকারকরা।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি