আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতন ও গণহত্যার শিকার হয়ে দেশটি থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের দেখতে বাংলাদেশে আসছেন জাতিসংঘ মহাসচিবের যৌন সহিংসতাবিষয়ক বিশেষ দূত প্রমীলা প্যাটেন। আগামী নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে তিনি বাংলাদেশে আসবেন বলে জানা গেছে। যুক্তরাষ্ট্র সফররত বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ডা. দীপু মনির সঙ্গে এক বৈঠকে প্রমীলা প্যাটেন তার বাংলাদেশে আসার কথা জানিয়েছেন।
শনিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা পরিবর্তন ডটকমকে এ তথ্য জানিয়েছেন। রোহিঙ্গাদের মানবিক সংকট নিয়ে ডা. দীপু মনি গত সোমবার নিউইয়র্কের জাতিসংঘ সদরদফতরে প্রমীলা প্যাটেনের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে প্রমীলা প্যাটেন বলেন, সম্পদ ও সামর্থ্যের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বাংলাদেশ যেভাবে মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মানুষদের স্বাগত জানিয়েছে, আশ্রয় দিয়েছে তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের এই অবদান বিশ্ব আজীবন স্মরণ রাখবে। সম্প্রতি জাতিসংঘের ভিকটিম সাপোর্ট ফান্ডে ১ লাখ ডলার প্রদান করায় বাংলাদেশ সরকারকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান প্রমীলা প্রাটেন। আলাপকালে তিনি নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশ সফরে আসার কথা জানান।
তিনি আরও জানান, মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের বিশেষ করে নারীদের ওপর যৌন নির্যাতন বিষয়ে তিনি সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল। বাংলাদেশ সফরকালে তিনি এসব নির্যাতিত নারীদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলবেন। কক্সবাজারে বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের ক্যাম্প পরিদর্শনকালে নারীর প্রতি সহিংস যৌন নির্যাতনের যে ভয়াবহ চিত্র দীপু মনি দেখেছেন, তা তিনি প্যাটেনের সামনে তুলে ধরেন।
উল্লেখ্য, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী অভিযানের ঘোষণা দিয়ে আগে থেকেই রাখাইনের রোহিঙ্গা গ্রামগুলো অবরুদ্ধ করে রাখে। এরই মধ্যে রোহিঙ্গা যোদ্ধারা অন্তত ২৫টি পুলিশ পোস্ট ও একটি সেনা ক্যাম্পে গত ২৪ আগস্ট মধ্যরাতের পরে প্রবেশের চেষ্টা করলে শুরু হয় সংঘর্ষ। ওইদিনের পর থেকে রোহিঙ্গাদের ওপর নেমে আসে অমানবিক নির্যাতন। সেনা অভিযানে এখন পর্যন্ত ৫ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম নিহত হয়েছেন।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর’র হিসাবে, সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে ২৫ আগস্ট থেকে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে ৬ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। গত বছরের অক্টোবরে একই ধরনের ঘটনায় পালিয়ে আসে প্রায় ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা। এভাবে কয়েক দশক ধরে শুধুমাত্র বাংলাদেশেই ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে।
জাতিসংঘ বলছে, এখন পর্যন্ত বিশ্বে সবচেয়ে দ্রুত বেড়ে ওঠা শরণার্থী সংকট হচ্ছে রোহিঙ্গারা। সংস্থাটি মিয়ানমার সেনা বাহিনীর এই নির্মমতাকে ‘গণহত্যা’ ও ‘জাতিগত নিধন’ বলে উল্লেখ করেছে। এর আগে তুরস্কের ফার্স্ট লেডি এমিনে এরদোয়ান, জর্ডানের রানী রানিয়া আল আব্দুল্লাহ ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানরা রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছেন।
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ