আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
১৯৬৩ সালে প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডিকে হত্যার ঘটনার ব্যাপারে আরও ২৮ শ’ গোপন নথি প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এসব গোপন নথি প্রকাশের যুক্তি তুলে ধরে বলেন, জনগণের অধিকার আছে ঠিক কী ঘটেছিল, তা জানার। কিন্তু সব গোপন নথি প্রকাশের কথা থাকলেও জাতীয় নিরাপত্তার অজুহাতে একেবারে শেষ মুহূর্তে কিছু নথির প্রকাশ স্থগিত রাখা হয়েছে। একটি নথিতে দেখা গেছে, প্রেসিডেন্ট কেনেডির হত্যাকারী লী হার্ভি অসওয়াল্ড নিজেই হত্যার হুমকির মধ্যে ছিল এবং এ ব্যাপারে পুলিশকে সতর্ক করে দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল তদন্ত সংস্থা এফবিআই। এফবিআই এর তৎকালীন ডিরেক্টর এডগার হুভার নথিতে লিখেছেন, আমরা তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ প্রধানকে বিষয়টি জানিয়েছিলাম এবং পুলিশ প্রধান আশ্বাস দিয়েছিলেন যে তাকে যথাযথ নিরাপত্তা দেয়া হবে।
লী হার্ভি অসওয়াল্ড ছিলেন একজন সাবেক মার্কিন মেরিন সেনা। তিনি নিজেকে ‘মার্কসবাদী’ বলে দাবি করতেন। প্রেসিডেন্ট কেনেডি হত্যাকান্ডের দুদিন পরে তাকে ডালাসের পুলিশ বিভাগের একটি কক্ষে গুলি করে হত্যা করা হয়। সেসময় তাকে আরও কড়া নিরাপত্তার একটি কারাগারে নেয়ার প্রস্তুতি চলছিল। খবর সংগ্রহ করতে সেখানে জড়ো হওয়া সাংবাদিকদের এবং লাইভ টিভি ক্যামেরার সামনে তাকে গুলি করে হত্যা করেন ডালাসের এক নাইট ক্লাবের মালিক জ্যাক রুবি।বৃহস্পতিবার প্রকাশ করা গোপন নথিগুলো এখন অনেকেই বিচার বিশ্লেষণ করে দেখছেন এতে কেনেডি হত্যকান্ড সম্পর্কে নতুন কোন ক্লু পাওয়া যায় কীনা।
প্রকাশ করা একটি সিআইএ নথিতে দেখা গেছে, লী হার্ভি অসওয়াল্ড মেক্সিকো সিটিতে গিয়ে একজন কেজিবি অফিসারের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। এই কেজিবি অফিসারের কাজ ছিল অন্তর্ঘাত এবং গোপন হত্যাকান্ডে সাহায্য করা। আরেকটি নথিতে দেখা যায়, প্রেসিডেন্ট কেনেডির হত্যাকাণ্ডের পর সোভিয়েতদের মধ্যে এমন একটা আশংকা ছিল যে কোন দায়িত্বজ্ঞানহীন মার্কিন জেনারেল হঠাৎ সোভিয়েত ইউনিয়নকে লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু করতে পারে। তা থেকে শুরু হয়ে যেতে পারে বড় আকারের যুদ্ধ।
আরেকটি নথিতে দাবি করা হয় ব্রিটেনের একটি আঞ্চলিক সংবাদপত্র, ‘ক্যাম্ব্রিজ নিউজ’ একজন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির কাছ থেকে একটি ফোন কল পেয়েছিল কেনেডি হত্যাকাণ্ডের অল্প আগে। তাতে যুক্তরাষ্ট্রে শীঘ্রই এক বড় খবর হতে যাচ্ছে বলে হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছিল। ১৯৯২ সালে মার্কিন কংগ্রেসে এক বিল পাশ করা হয়, যাতে কেনেডি হত্যাকাণ্ড সম্পর্কিত সমস্ত গোপন দলিল ২৫ বছরের মধ্যে প্রকাশের অঙ্গীকার করা হয়। বৃহস্পতিবার সেই ২৫ বছর শেষ হয়েছে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে সিআইএ, এফবিআই এবং পররাষ্ট্র দপ্তর সরকারের সঙ্গে দেন-দরবার করেছিল কিছু নথি এখনই প্রকাশ না করতে। কেনেডির হত্যাকান্ড নিয়ে চালু আছে অনেক ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’ এর ফলে কেনেডি হত্যা রহস্য সম্পর্কে ষড়যন্ত্র এবং জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটানো কঠিন হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
প্রসঙ্গত, ১৯৬৩ সালের ২২শে নভেম্বর যখন প্রেসিডেন্ট কেনেডিকে হত্যা করা হয় তখন তিনি একটি ছাদ-খোলা লিমুজিনে চড়ে ডালাসের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। ঐ রাস্তার ওপর নজর রাখা যায় এমন একটি ভবনের জানালা দিয়ে লী হার্ভি অসওয়াল্ড গুলি করে তাঁকে হত্যা করেন বলে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ারেন কমিশনের রিপোর্টে দাবি করা হয়। তবে এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে নানা রকম ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ছড়িয়ে পড়েছিল। ওয়ারেন কমিশন অবশ্য বলেছিল লী হার্ভি অসওয়াল্ড, বা তাকে হত্যকারী জ্যাক রুবি আসলে কোন বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অংশ ছিল না। কিন্তু তার পরও কেনেডি হত্যাকাণ্ড নিয়ে জল্পনা-কল্পনা থামেনি।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি