আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
চলমান রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীনের বিরোধিতা সত্ত্বেও মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য একটি খসড়া প্রস্তাব তৈরি করেছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ। আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হলে রোহিঙ্গা ইস্যুতে এটিই হবে ১৫ সদস্য বিশিষ্ট নিরাপত্তা পরিষদের প্রথম পদক্ষেপ। এতে মিয়ানমারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের কোনো বিষয় না থাকলেও চলমান সঙ্কট সমাধানে কয়েকটি প্রস্তাব করা হয়েছে। গতকাল বুধবার বার্তা সংস্থা এএফপি ওই প্রস্তাবের একটি কপি হাতে পায়। এএফপির খবরে বলা হয়েছে, ব্রিটেন ও ফ্রান্স ছয় পৃষ্ঠার ওই খসড়া প্রস্তাব তৈরি করেছে। এতে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে জরুরি ভিত্তিতে চলমান সেনা অভিযান বন্ধ এবং গত এক মাসে যেসব রোহিঙ্গা মুসলমান বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে তাদের ফিরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
খসড়া প্রস্তাবটিতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযানের পাশাপাশি আরাকান স্যালভেশন আর্মির (আরসা) সহিংস কর্মকাণ্ডের নিন্দাও জানানো হয়েছে। এ ছাড়া জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটি রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে যে সুপারিশ করেছে তাও বাস্তবায়নের দাবি জানানো হয়েছে ওই প্রস্তাবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নিরাপত্তা পরিষদের এক কূটনীতিক বলেছেন, চীনের তীব্র বিরোধিতা সত্ত্বেও উদ্ভূত রোহিঙ্গা সংকটে এই খসড়া প্রস্তাবই হবে জাতিসংঘের শীর্ষ কর্মকর্তাদের দেওয়া প্রথম আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া। তারপরও এ বিষয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর ব্যাপারে তারা আশাবাদী। ওই খসড়া প্রস্তাব চীনের বাধার মুখে পড়ে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘চীন যথার্থ অবস্থানে নেই। তারা চায়, আমরা এই বিষয়ে কিছুই না বলি।’ তবে কূটনীতিকরা জানান, চীন নিজেও চায় মিয়ানমার রোহিঙ্গা সংকটকে আমলে নিক। তারা সহিংসতার অবসানও চায়। তবে এই প্রসঙ্গে মিয়ানমারের সঙ্গে তারা দ্বিপাক্ষিক আলোচনার পক্ষে।
প্রসঙ্গত, এর আগে ১৩ অক্টোবর এই ইস্যুতে নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তাতে রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে ৩টি বিষয়ে ঐকমত্য হলেও মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কোনও প্রস্তাব আনার ব্যাপারে ইতিবাচক আলোচনা হয়নি। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, ভেটো ক্ষমতাসম্পন্ন চীন আর রাশিয়ার বিরোধিতার কারণে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা সংকট নিরসনে কোনও প্রস্তাব আনার ব্যাপারে ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে পারেনি।
উল্লেখ্য, গত ২৫ আগস্ট আরসার সদস্যরা মিয়ানমারের নিরাপত্তাবাহিনীর কয়েকটি চেকপোস্টে একযোগে হামলা চালায়। এতে ১২ জন নিরাপত্তা কর্মী নিহত হয় বলে নেইপিদোর দাবি। এরপর পরদিনই রোহিঙ্গা মুসলমানদের সাঁড়াশি অভিযান শুরু কর মিয়ানমার সেনাবাহিনী। আর তাদের সঙ্গে যোগ দেয় উগ্রপন্থী বৌদ্ধরা। এতে পাঁচ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা নিহত হয়। আহত হয়েছে কয়েক হাজার। আর জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা। যা এখনও অব্যাহত রয়েছে।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি