নিজস্ব প্রতিবেদক:
দীর্ঘ অপেক্ষার পর অবশেষে যান চলাচলের জন্য পুরোপুরি খুলে দেয়া হচ্ছে রাজধানীর মগবাজার-মৌচাক-মালিবাগ ফ্লাইওভার। আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই উড়ালসড়কের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে থাকবেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন। ভিডিও কনফারেন্সের সময় মৌচাক অংশ থাকবেন ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন ও রাজনৈতিক নেতারা। উদ্বোধনের পর কালই ঢাকা সিটি করপোরেশনের কাছে উড়ালসড়ক হস্তান্তর করবে এলজিইডি।
উড়ালসড়কটি উন্মুক্ত করা হলে মৌচাক, মালিবাগ, বাংলামোটর, রাজারবাগ, শান্তিনগর, মগবাজার এলাকার যানজট অনেকটাই কমে যাবে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও উড়াল সড়কটির প্রকল্পের পরিচালক সুশান্ত কুমার পাল এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী সময় দেয়ার পর উদ্বোধনের সার্বিক প্রস্তুতি প্রায় শেষ করেছে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এবং স্থানীয় সরকার অধিদপ্তর। উড়াল সড়কে ধোয়ামোছা, রঙ, বিদ্যুতের খুঁটি ও বাতি লাগানোর কাজও শেষ পর্যায়ে। শোভা পাচ্ছে রং বেরংয়ের পতাকা। কোনো কাজ বাকি আছে কি না তা দেখে নিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান বলেন, ‘উড়ালসড়কের নিচের সড়ক ও ফুটপাতের সংস্কারকাজও প্রায় শেষ।’
চার লেনের উড়ালসড়কটি ছয়টি মোড় অতিক্রম করেছে। এগুলো হলো সাতরাস্তা, বিএফডিসি, মগবাজার, মৌচাক, শান্তিনগর ও মালিবাগ মোড়। এর মধ্যে মগবাজার, মালিবাগ ও কারওয়ান বাজারে রেললাইন অতিক্রম করেছে এই উড়ালসড়ক প্রকল্প।
ওই উড়ালসড়কটি তিন ভাগে করা হয়েছে। একটি অংশ সাতরাস্তা-মগবাজার-হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল। এটা নির্মাণ করেছে নাভানা কনস্ট্রাকশন। গত বছরের মার্চ মাসে এ অংশ যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়।
গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর নিউ ইস্কাটন থেকে মৌচাক পর্যন্ত উড়ালসড়কের এক দিক খুলে দেয়া হয়। এই অংশ নির্মাণ করেছে তমা কনস্ট্রাকশন।
তৃতীয় ধাপে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) মোড় থেকে কারওয়ান বাজার অংশ যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয় গত ১৭ মে। এই অংশও তৈরি করেছে নাভানা কনস্ট্রাকশন।
এখন খুলে দেয়ার অপেক্ষায় আছে উড়ালসড়কের মৌচাক-মালিবাগ-শান্তিনগর-রাজারবাগ-মগবাজার অংশ। এটা নির্মাণ করেছে তমা কনস্ট্রাকশন।
এলজিইডি সূত্র জানায়, ২০১৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি প্রায় ৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই সমন্বিত উড়ালসড়কটির নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই ফ্লাইওভার প্রকল্পটি ঢাকা শহরের স্ট্রাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্ল্যানের (এসটিপি) অন্তর্ভুক্ত।
২০১৪ সালের ডিসেম্বরে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এর মধ্যে কয়েক দফায় প্রকল্পের সময় বাড়ানো হয়।
প্রথমে এই প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল ৭৭২ কোটি ৭০ লাখ টাকা। পরে নকশায় পরিবর্তন আনা হয়। শেষ পর্যন্ত ব্যয় বাড়তে বাড়তে ১ হাজার ২১৮ কোটি ৮৯ লাখ টাকায় গিয়ে ঠেকে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকার অর্থায়ন করেছে ৪৪২ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। ৭৭৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা দিয়েছে সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট (এসএফডি) এবং ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ওএফআইডি)।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ফ্লাইওভারটি রিখটার স্কেলে ১০ মাত্রার ভূমিকম্প সহনীয়। প্রতিটি পিলার পাইলের গভীরতা প্রায় ৪০ মিটার গভীর। ফ্লাইওভারটি আটটি মোড় যথাক্রমে- সাতরাস্তা, এফডিসি, মগবাজার, মৌচাক, শান্তিনগর, মালিবাগ, চৌধুরীপাড়া ও রমনা থানা। ফ্লাইওভারটি মগবাজার, মালিবাগ ও সোনারগাঁসহ তিনটি রেলক্রসিং অতিক্রম করেছে।
চার লেনের এই ফ্লাইওভারে ওঠানামার জন্য ১৫টি র্যাম্প আছে। তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা, এফডিসি, মগবাজার, হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল, বাংলামটর, মগবাজার, মালিবাগ, রাজারবাগ পুলিশ লাইন এবং শান্তিনগর মোড়ে ওঠানামা করার ব্যবস্থা রয়েছে।
দেশে এখন পর্যন্ত যে কয়টি উড়ালসড়ক নির্মাণ করা হয়েছে, তার মধ্যে মৌচাক-মালিবাগ উড়ালসড়কটি দৈর্ঘ্যে দ্বিতীয়। প্রথম স্থানে আছে ১০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মেয়র মোহাম্মদ হানিফ উড়ালসড়ক (গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী)।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ