৩রা ডিসেম্বর, ২০২৪ ইং | ১৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১১:১৭

ইলিশ শিকারে নেমেছে ভোলার দেড় লাখ জেলে : পল্লীগুলোতে উৎসবের আমেজ

 ভোলা প্রতিবেদক:

ভোলার মেঘনা ও তেতুঁলিয়া নদীতে দীর্ঘ ২২ দিন পর ইলিশ শিকারে নেমেছে ১ লক্ষ ৫২ হাজার জেলে। দীর্ঘ ২২ দিন পর আবার তারা পুরোদমে মাছ শিকারে নেমেছে। প্রথম দিনেই প্রচুর ইলিশ পেয়ে খুশি তারা। অনেকদিন পরে নদীতে নামতে পেরে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে জেলেপাড়াগুলোতে। এ ক’দিনের ক্ষতি পুষিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয়ে জেলে পরিবার, পাইকারি ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গতবারের তুলনায় এবারের ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান আরও বেশি সফল হয়েছে। এ ২২ দিনে জেলায় ৩০ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ সংরক্ষিত হয়েছে বলে জানিয়ে অভিযানের সফলতা দাবি করছে মৎস্য বিভাগও।
সূত্রে জানা যায়, মা ইলিশ রক্ষায় সরকার ইলিশের প্রজনন মৌসূম চিহ্নিত করে ১ অক্টোবর থেকে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ২২ দিন ইলিশের অভয়াশ্রমগুলোতে মাছ শিকার, মাছ আহরণ, বাজারজাতকরণ, বিক্রি ও পরিবহণ নিষিদ্ধ ছিল। জেলেদের একমাত্র পেশা মাছ ধরতে না পারায় জেলার ৭ উপজেলার প্রায় ১ লক্ষ ৫২ হাজার জেলে বেকার হয়ে পড়েছিলেন। এতদিন নদীতে মাছ ধরতে না পারায় বহু জেলে পরিবারে ছিল অভাব-অনটন। নিষেধাজ্ঞা শেষে জেলেরা আবার নদীতে মাছ শিকারে যেতে পারায় তাদের মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।
জেলেরা জানান, প্রধান প্রজনন মৌসুমে ইলিশ সংরক্ষণে ০১ থেকে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন মাছ ধরা বন্ধ থাকায় বেকার হয়ে পড়েছিলেন তারা। ধার-দেনা করে অভাব-অনটনে দিন কাটাতে হয়েছে। এবার মাছ বিক্রির টাকায় দেনা পরিশোধ ও অভাব দূর হবে। তবে জেলে পুনর্বাসনের চাল অনেকেই পাননি বলে অভিযোগ করছেন কেউ কেউ।
ইলিশা জেলেপল্লির জেলে কামাল হোসেন ও আ: রহমান বলেন, ‘২২ দিন মাছ শিকারে যাইনি। রোববার ভোরে নদীতে নেমেই প্রচুর ইলিশ পেয়েছি। এভাবে পেতে থাকলে দেনা পরিশোধ করে ঘুরে দাঁড়াতে পারবো’।
পাইকারি ব্যবসায়ী জসিম বলেন, ‘৩ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। এখন নদীতে ঝাঁকে ঝাঁকে মাছ পড়ছে। আশা করি, সেই লোকসান পুষিয়ে উঠতে পারবো’। প্রচুর ইলিশ আসায় খুশি আড়ৎদাররাও। অভিযান সফল হয়েছে বলে মন্তব্য তাদের।
চরযতিন গ্রামের ইব্রাহীম মাঝি, মোছলেউদ্দিন মাঝি, মাইনুউদ্দিন মাঝি বলেন, অবরোধের সময় সরকার যদি জেলেদের একটি কর্মসংস্থানের ব্যাবস্থা করত; তাহলে জেলে পরিবারগুলোর ছেলে-মেয়েরা একটু ভালো থাকত। আমরা আর ধার-দেনা করতে হতোনা।
ইলিশা মৎস্যঘাটে ঘুরে দেখা গেছে, জেলে-পাইকারি ব্যবসায়ী আর আড়ৎদারদের হাক-ডাকে মুখরিত আড়ৎগুলো। হালিপ্রতি বড় সাইজের ইলিশ ১ হাজার ২শ’ থেকে দেড় হাজার টাকা ও মাঝারি সাইজের ইলিশ ৯শ’ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ মুহূর্তে জাটকা ইলিশ নেই বলেও জানান জেলেরা।
মাছ ধরার এই নিষিদ্ধ সময়ে অনেকে অতি উৎসাহ দেখিয়ে নদীতে মাছ ধরতে গেলেও বেশীরভাগ জেলেই সরকারের সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধা জানিয়ে নদীতে মাছ ধরতে যায়নি। যারা অবরোধের সময়ে সরকারের সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাংগুলি দেখিয়ে মাছ ধরতে গিয়েছিলো তাদের অনেকেই ভ্রাম্যমান আদালতের কবলে পড়ে জাল, ট্রলার, মাছ হারিয়েছে। আবার অনেকে জেল ও জরিমানা দুটোই জুটেছে।
এ ব্যাপারে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, ২২ দিন মাছ ধরা বন্ধ থাকা কালিন সময়ে জেলেদের জন্য পুর্নবাসনের জন্য ২০ কেজি করে যে চাল বরাদ্দ হওয়ার কথা ছিল তা দেরিতে বরাদ্দ হয়েছে। এছাড়া দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে সর্বত্র বিতরণ করা সম্ভব হয়নি। দ্রুত দু-এক দিনের মধ্যে ওই বরাদ্দকৃত চাল বিতরণ করা হবে।

দৈনিক দেশজনতা /এন আর

প্রকাশ :অক্টোবর ২৩, ২০১৭ ৯:১২ অপরাহ্ণ