নিজস্ব প্রতিবেদক:
দুই দিনের টানা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে রাজধানীবাসীর জীবনযাত্রা। ঘর থেকে নিত্যদিনের মতো কাজে বের হওয়া মানুষকে সকাল থেকেই পড়তে হয়েছে দুর্ভোগের মুখে।
নিম্নচাপের প্রভাবে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় গতকাল থেকে বৃষ্টি পড়ছে। বৃষ্টির এই ধারা শনিবারও অব্যাহত রয়েছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আজ সারাদিন কোথাও থেমে থেমে, আবার কোথাও টানা ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হবে। চট্টগ্রাম, মোংলা, পায়রা সমুদ্রবন্দর ও কক্সবাজারে আজও ৩ নম্বর সতর্কসংকেত বহাল রয়েছে।
টানা বৃষ্টির কারণে রাজধানীর অনেক এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে বিভিন্ন সড়ক। শনিবার বন্ধের দিন হওয়ায় অফিস ও স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের তেমন ভিড় না থাকলেও, প্রয়োজনে যারা বের হয়েছেন তাদের পোহাতে হচ্ছে চরম ভোগান্তি।
ভারী বৃষ্টিতে পুরান ঢাকার অধিবাসীদের দুর্ভোগ ছিলো চরমে। শুক্রবার থেকে চলা বৃষ্টিতে পুরান ঢাকার বেশিরভাগ সড়ক ছিলো পানির নিচে। অনেক জায়গায় গলি থেকে পানি উপচে পড়েছে মূল সড়কে। ফলে আশপাশের দোকানপাট বন্ধ রয়েছে।
শুধু পুরান ঢাকাই নয়, খিলগাঁও, ধানমন্ডি, গ্রীণরোড, মোহাম্মদপুর, মিরপুর ১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়াসহ অনেক এলাকাই বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে। অনেক জায়গায় মূল সড়কে পানি উঠার কারণে ধীরগতিতে চলছে যানবাহন। দেখা দিয়েছে বাস, সিএনজির সংকট।
শনিবার বেলা ১২টার দিকে পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার থেকে বংশাল, গুলিস্তান ঘুরে দেখা গেছে, অনেক জায়গায় গলি থেকে মূল সড়কে পানি উঠেছে। কোথাও আবার হাঁটু পানি। বংশাল মোড় থেকে ফুলবাড়িয়া বিআরটিসি বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশেই পানি থৈ থৈ করছে। যে কারণে সেখানকার দোকানপাটও বন্ধ রয়েছে। বংশালে থেকে বিহঙ্গ পরিবহনের বাসে ওঠা যাত্রী নাসির বলেন, ‘সাইকেলের দোকানে কাজ ছিলো। ফার্মগেট থেকে অনেক কষ্টে আসার পর দেখি দোকান বন্ধ। দোকান খুলবে কি সব তো পানির নীচে।’
বৃষ্টির কারণে পানির জমেছে মালিবাগ চৌধুরীপাড়াতেও। মো. মহিউদ্দিন নামের একজন তার ফেসবুকে দুটি ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘এটা একটি রাজধানীর রাজকীয় এলাকার ছবি। একখান রাজকীয় নৌকার খুবই দরকার।’
যোগাযোগ করা কলে তিনি বলেন, ‘সেগুনবাগিচায় অফিসে যাওয়ার দরকার ছিলো। যেতে পারিনি। যে কোনো উপায়ে অফিসে যাওয়ার জন্য অফিস থেকে ফোন করেছে। কিন্তু সিএনজি, রিকশা কিছুই নেই। এলাকাও পানির নীচে।’
সাইরাস মাহমুদ নামের একজন সংবাদিক ফেসবুকে দুটি ছবি পোস্ট দিয়ে লিখেছেন, ‘ধানমন্ডির ঝিগাতলা এলাকার রাস্তায় পানি। কি সুন্দর উন্নয়ন করছে। কদিন আগে রাস্তা কেটে ড্রেন বানালো। আমাদের কষ্টের টাকা দিয়ে তারা ফুর্তি মারে।’
ধানমন্ডি থেকে কলেজ শিক্ষক নুরুল ইসলাম নিজের বাসার সামনের ডুবে যাওয়া রাস্তার ছবি দিয়ে নিজের বাচ্চার সঙ্গে ছবি দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। পানির ছবি দেখেই ওই এলাকার মানুষের দুর্ভোগের কথা অনুমান করা যায়।
সাংবাদিক মঈন উদ্দিন খান থাকেন খিলগাঁয়ের তালতলা এলাকায়। তিনি বলেন, ‘এককথায় বললে বৃষ্টিতে এই এলাকার মানুষের দুর্ভোগ চরমে। টানা বৃষ্টিতে ডুবে গেছে আশপাশের সব রাস্তা। বাসা থেকে বের হওয়ার কোন উপায় নাই। বলতে গেলে সবাই পানিবন্দী। এর পাশাপাশি বিদ্যুতের লুকোচুরি চলছে। গ্যাসে চাপ নেই।’ গ্রীনরোড থেকে কাজী শাহাদাতুল ইসলাম বলেন, ‘সকাল থেকে বাসা হতে বের হতে পারিনি। বৃষ্টি এবং রাস্তায় পানি জমে থাকায় কোন গাড়ি পাচ্ছি না। এমনকি উবারও নাই। অনেক চেষ্টায় একটা উবার কানেক্ট হলেও রাস্তায় পানি থাকায় এসে পিক করার সাহস করেনি। সর্বশেষ দুপুরে মসজিদে নামাজের জন্য গেলে মসজিদের সামনে গিয়ে দেখি হাঁটুপানি।’
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আটটি বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় আগামী ২৪ ঘণ্টায় অস্থায়ী দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরগুলোকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। আর উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে নিরাপদে আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছ।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ