নিজস্ব প্রতিবেদক:
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে টানা দুই দিনের বৃষ্টিতে বরিশাল নগরীসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির পানির সঙ্গে জোয়ারের পানি এককার হয়ে জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। একই দুর্ভোগ বিরাজ করছে বরিশাল জেলার বিভিন্ন উপজেলাসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলে।
জোয়ারের পানিতে নদী-চর-জলাশয় ডুবে একাকার হয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন চর ও নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দারা। বৈরি আবহাওয়ার কারণে বরিশালের জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে।
ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে নগরীর প্রাণ কেন্দ্র সদর রোডের কাকলী সিনেমা হলের মোড়, নবগ্রাম রোডের বটতলা বাজার থেকে সিঅ্যান্ডবি রোড চৌমাথা পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার সড়ক, সদর অশ্বিনী কুমার হল চত্বর, সাংবাদিক মাইনুল হাসান সড়ক, বগুরা রোড মুন্সীর গ্রেজ, বরিশাল কলেজ সংলগ্ন মল্লিক বাড়ি রোড, কাউনিয়া, কলেজ রোড, ভাটিখানা, পলাশপুর, বান্দরোডসহ নগরীর অনেক এলাকার প্রধান সড়কে জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এসব এলাকার অনেক বসতবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি প্রবেশ করায় সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
এদিকে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে বরিশাল-ভোলা এবং বরিশাল-ইলিশা মজুচৌধুরীর হাট রুটের লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে।
আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র পর্যবেক্ষক মো. আনিচুজ্জামান বলেন, শনিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত বিগত ২৪ ঘণ্টায় ১৯৩.১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যা চলতি বছর একদিনে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত। এর আগে গত ২১ জুলাই বরিশালে একদিনে সর্বোচ্চ ১১৪.০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল। বিগত ৪৮ ঘণ্টায় রেকর্ড করা হয় ২৩০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত। আগামীকাল নাগাদ বরিশালের আবহাওয়া পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে বলে জানিয়েছেন সিনিয়র পর্যবেক্ষক মো. আনিচুজ্জামান।
বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপ-পরচিালক আজমল হুদা মিঠু জানান, অভ্যন্তরীণ নদী বন্দরের জন্য ২ নম্বর এবং সমুদ্র বন্দরের জন্য ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত বলবত রয়েছে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে বরিশাল-ভোলা এবং বরিশাল-ইলিশা মজুচৌধুরীর হাট রুটের লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।
বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. রমজান আলী জানান, ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে বরিশালের নদ-নদীর পানির লেভেল বেড়েছে। কীর্তণখোলা নদীর বরিশাল লঞ্চঘাট পয়েন্টে স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ ফুট উচ্চতা দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। তবে পানি বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার নিচে রয়েছে। এদিকে বৈরি আবহাওয়ার কারণে প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া অনেকেই বাসা থেকে বের হননি। বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার কারণে নগরীতে যানবাহনের সংখ্যাও ছিল অনেক কম । যারা বৃষ্টি মাথায় নিয়ে বেরিয়েছেন তারা বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে পরিবহন সংকটে পড়েন ।
নগরীর একাধিক বাসিন্দা জানান, কীর্তণখোলা নদীর পানি বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার নিচে থাকার পরও নগরীর প্রবাহমান খালগুলো দখল-ভরাট এবং ড্রেনগুলো ঠিকভাবে পরিষ্কার না করায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উদাসীনতা বা অবহেলার কারণে নগরবাসী জলবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাচ্ছে না।
তবে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আহসান হাবিব কামাল জানান, জোয়ার ও বৃষ্টির বেগের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ড্রেন দিয়ে পানি প্রবাহিত হতে না পারায় বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। পলিথিনসহ পলিথিন জাতীয় দ্রব্য ড্রেনে না ফেলার পরামর্শ দেন তিনি।
খালগুলোর যত্ন নেয়া হয়নি স্বীকার করে সিটি মেয়র বলেন, নগরীর ২৪টি খাাল পুনরায় খননের জন্য মন্ত্রণালয়ে ২৩০ কোটি টাকার প্রকল্প জমা দেয়া আছে। এই প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ পাওয়া গেলে জলাবদ্ধতা আর থাকবে না।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ