নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশের বিভিন্ন জায়গায় অবিরাম বর্ষণে জনজীবন অচল হয়ে পড়েছে। এর বেশি প্রভাব পড়েছে উপকূলীয় এলাকায়। সেখানকার নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। জোয়ারের পানি ঢুকে পড়েছে বিভিন্ন জায়গায়। তলিয়ে গেছে ফসলের ক্ষেত এবং মাছের ঘের। দুর্ভোগ বেড়েছে সাধারণ মানুষের। বন্ধ রাখা হয়েছে নৌ-চলাচল। সাগর ও নদী উত্তাল রয়েছে। এদিকে বৈরী আবহাওয়ার কারণে ছোট আকারের লঞ্চ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল কর্তৃপক্ষ, বিআইডব্লিউটিসি।
নিম্নচাপের প্রভাবে ভারী বৃষ্টিপাত ও ঝড়ে উপকূলীয় খুলনার পাইকগাছায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ে উড়ে গেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের টিনের ছাউনি। ধসে পড়েছে ছোট ছোট কাঁচা ঘরবাড়ি। ভারী বৃষ্টিপাতে তলিয়ে গেছে বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলি জমি। ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে ওয়াপদার বেড়িবাঁধ। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন।
গত বৃহস্পতিবার থেকে পাইকগাছার সর্বত্রই শুরু হয় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। গভীর রাত থেকে শুরু হয় ভারী বৃষ্টি। যা গতকাল শুক্রবার দিনভর অব্যাহত থাকে। সমস্যায় পড়েছেন নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষ। পৌরসভা, গদাইপুর, চাঁদখালী, গড়ইখালী ও দেলুটির বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলি জমি ও চিংড়িঘের তলিয়ে যায়।
বরগুনার আমতলীর বালিয়াতলী ও তালতলী উপজেলার তেঁতুলবাড়িয়া গ্রামের বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেফু দুই উপজেলার ২০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়েছে। গত বুধবার, বৃহম্পতিবার ও শুক্রবারের লাগাতার বর্ষণে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা অচল হয়ে গেছে। আমতলী উপজেলার অনেক জমির আমনধান পানিতে তলিয়ে গেছে। গতকাল শুক্রবার দুপুরের পায়রা নদে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩-৪ ফুট পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তেঁতুলবাড়িয়ার নবনির্মিত বেড়িবাঁধটি ভেঙে যায়। বড়বগী ইউনিয়নের কৃষক আইউব আলী জানান, তার ২২ একর জমিতে রোপণ করা আমনধান পানিতে তলিয়ে গেছে। শিগগিরই পানি না কমলে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হবে।
বৈরী আবহাওয়ার কারণে শুক্রবার থেকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ধীরগতিতে ফেরি চলাচল করছে। এ ছাড়া রয়েছে ফেরি সংকট। ফলে এই নৌরুটের উভয়ঘাটে পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে ছয় শতাধিক যানবাহন। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকরা। এদিকে বৈরী আবহাওয়ার কারণে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া এবং আরিচা-কাজীরহাট রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রেখেছে কর্তৃপক্ষ।
দৌলতদিয়া ফেরিঘাট কার্যালয়ের বাণিজ্য বিভাগের সহকারী ব্যবস্থাপক রুহুল আমিন জানান, বৈরী আবহাওয়ায় ফেরি চলছে ধীরগতিতে। আবার বহরে থাকা ফেরির মধ্য থেকে তিনটি ফেরি মেরামতে রয়েছে। এই নৌরুটে এখন ছোট-বড় ১৩টি ফেরি চলাচল করছে।
এদিকে বৈরী আবহাওয়ার কারণে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ও আরিচা কাজীরহাট নৌরুটে সাময়িকভাবে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রেখেছে কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার দুপুর ১২টা থেকে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হয় দুর্ঘটনা এড়াতে। কারণ নদী উত্তাল রয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ আরিচা কার্যালয়ের ট্রাফিক বিভাগের সহকারী পরিচালক ফরিদুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, দুর্ঘটনা এড়াতে সাময়িক লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। আবহাওয়া স্বাভাবিক হলে ফের লঞ্চ চলাচল শুরু হবে।
পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় তিন নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলায় বন্ধ রয়েছে পায়রা সমুদ্র বন্দরের কার্যক্রম। পটুয়াখালীতে দুদিন ধরে দফায় দফায় দমকা বাতাসসহ বৃষ্টিপাত হচ্ছে। কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগর বেশ উত্তাল রয়েছে। জোয়ারের সময় ৩-৪ ফুট উঁচু সাগরের ঢেউ তীরে আছড়ে পড়ছে। স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে বিভিন্ন নদ-নদীতে পানি কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে কলাপাড়া, রাঙ্গাবালী, গলাচিপা, দশমিনা উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টের ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে এবং বেড়িবাঁধ উপচে পানি প্রবেশ করে প্লাবিত হয়েছে।
এদিকে, বৈরী আবহাওয়ার কারণে সারা দেশে ছোট আকারের লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখতে বলেছে অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল কর্তৃপক্ষ- বিআইডব্লিউটিএ। এ সংস্থার জনসংযোগ কর্মকর্তা মোবারক হোসেন মজুমদার গতকাল শুক্রবার বিকেলে বলেন, খারাপ আবহাওয়ার কারণে সারা দেশে ৬৫ ফুটের কম দৈর্ঘ্যরে সব ধরনের নৌযানের ক্ষেত্রে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আর উপকূলীয় এলাকা হাতিয়া, বেতুয়া ও রাঙ্গাবালীতে সব ধরনের লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকবে।
ঢাকা সদরঘাটে বিআইডব্লিউটিএর পরিবহন পরিদর্শক সৈয়দ মাহফুজুর রহমান জানান, বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ফারহার-৪ নামের একটি লঞ্চ হাতিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সমুদ্রবন্দরগুলোতে তিন নম্বর সতর্ক সংকেত থাকায় কর্তৃপক্ষ ওই রুটের সব লঞ্চের যাত্রা বাতিল করেছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলীয় এলাকায় কোনো ধরনের লঞ্চ চলবে না বলে জানান তিনি। মাহফুজ বলেন, নৌবন্দরে দুই নম্বর নৌ-হুশিয়ারি সংকেত থাকলে ৬৫ ফুটের কম দৈর্ঘ্যরে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখার নিয়ম। সে কারণেই সারা দেশে ছোট লঞ্চ না চালাতে বলা হয়েছে।
এদিকে পদ্মা উত্তাল হয়ে ওঠায় শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি রুটেও সব ধরনের নৌযান পারাপার বন্ধ রেখেছে কর্তৃপক্ষ। ফলে দুই ঘাটে কয়েক শ গাড়ি আটকা পড়েছে বলে আমাদের মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন।
মাওয়া নৌ-ফাঁড়ির ইনচার্জ সরোজিৎ কুমার ঘোষ বলেন, ‘ঘাটে যাত্রী নিরাপত্তায় পুলিশ কাজ করছে। কোনো রকম বিশৃঙ্খলা যাতে না হয় সে ব্যাপারে পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।’
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ