নিজস্ব প্রতিবেদক:
রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে দিন দিন বাড়ছে এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী। গত বুধবার পর্যন্ত ৩৩ জন রোগী শনাক্তের খবর পাওয়া গেছে। আর তাতে উখিয়া ও টেকনাফের মানুষের মধ্যে আতঙ্কে ভর করছে। খোদ চিকিৎসকরা বিব্রত রোহিঙ্গা এইডস রোগী বৃদ্ধির প্রবণতায়।
রোহিঙ্গা এইডস রোগীদের কথা উল্লেখ করে প্রতিদিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন স্থানীয় সিটিজেন সাংবাদিকরা। রোহিঙ্গারা যাতে কোনো দালাল-ফড়িয়ার মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে যেতে না পারে সেজন্য কড়াকড়ি আরোপের তাগিদ দিচ্ছেন তারা।
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যা, ধর্ষণ, গৃহে অগ্নিসংযোগসহ পৈশাচিক নির্যাতন থেকে বাঁচতে এ পর্যন্ত সাড়ে ছয় লাখ রোহিঙ্গা তাদের দেশ ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। উখিয়া ও টেকনাফের ১২টি স্থায়ী ও অস্থায়ী ক্যাম্পে আশ্রয় দেয়া হয়েছে তাদের।
রোহিঙ্গা নারী ও শিশুদের অধিকাংশই পুষ্টিহীনতা, চর্মরোগ, কানপচা, যক্ষ্মা, সর্দি, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, হেপাটাইটিস-‘বি’সহ নানা রোগে আক্রান্ত। চিকিৎসাসেবার মাধ্যমে কিছু রোগ নিরাময় করা গেলেও মরণব্যাধি এইচআইভি এইডস রোগীদের নিয়ে বিব্রত চিকিৎসকরা। অনিরাপদ শারীরিক মেলামেশাজনিত কারণে এ রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন তারা। তবে কক্সবাজারের সিভিল সার্জন বলছেন, মাঠ পর্যায়ে স্ক্যানিং করে এইডস রোগী শনাক্ত করার কাজ চলছে।
সিভিল সার্জন ডা. আব্দুস সালাম বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এইডস রোগী শনাক্ত দিন দিন বাড়ছে। এক সপ্তাহে ১৯ জন এইডস রোগী থেকে বেড়ে ৩৩ জন হয়েছে। এদের মধ্যে ১৮ জন নারী, ১০ জন পুরুষ ও ৫ জন শিশু।
যেসব রোগী পরীক্ষার জন্য চিকিৎসা ক্যাম্পে এসেছে কেবল তাদের রোগ শনাক্ত করা হয়েছে জানিয়ে সিভিল সার্জন সন্দেহ প্রকাশ করেন, এ ছাড়া বিশাল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মাঝে এই রোগ আরো থাকতে পারে। ইতিমধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে একজন এইডস রোগী।
সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানায়, ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত এ দেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মাঝে ৭ হাজার গর্ভবতী নারীকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়েছে। এ সময়ে জন্ম নিয়েছে ৬৬৫ জন শিশু। ৮ জন ম্যালেরিয়া রোগীকে শনাক্ত করা হয়েছে। ৬ লাখ ৭৯ হাজার রোহিঙ্গাকে কলেরার ভ্যাকসিন খাওয়ানো হয়েছে। ১৬ হাজার ৮৩৩ জন এতিম শিশুর সন্ধান পাওয়া গেছে।
সমন্বিত টিকাদান কার্যক্রমের সমন্বয়কারী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মিজবাহ উদ্দিন জানান, রোহিঙ্গারা প্রাণ বাঁচাতে এ দেশে পালিয়ে এসেছে ঠিকই। কিন্তু তাদের অনেকে সঙ্গে নিয়ে এসেছে মরণব্যাধি এইচআইভি এইডসসহ বিভিন্ন সংক্রামক রোগ।
মিজবাহ উদ্দিন বলেন, রোহিঙ্গাদের মধ্যে প্রায় সব রোগই রয়েছে। তবে আতঙ্কের বিষয় হলো এ পর্যন্ত চিহ্নিত ৩৩ জন এইডস রোগীর চিকিৎসা নিয়ে। এ রোগ দিন দিন বাড়তে থাকায় এলাকায় ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এইডস রোগ যাতে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য আক্রান্তদের নিবিড় পরিচর্যা ও তাদের চলাচল সীমিত রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।
শারীরিক মেলামেশা জনিত কারণে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশংকায় উখিয়া টেকনাফের বৃহত্তর জনসাধারনের মাঝে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা। তবে সিভিল সার্জন বলছেন, মাঠ পর্যায়ে স্ক্যানিং করে এইডস রোগী সনাক্ত করণের কাজ চলছে।
কুতুপালং ক্যাম্প এলাকায় বসবাসরত ইউপি সদস্য বখতিয়ার আহমদ, স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা নুরুল হক খানসহ একাধিক রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যক্তিত্ব রোহিঙ্গা এইডস রোগী নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেন। তারা উচ্চ পর্যায়ের মেডিকেল টিম ও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে দ্রুত এইডস প্রতিরোধক পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান।
গত ২৪ আগস্ট মিয়ানমারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ফাঁড়িতে হামলার অভিযোগ তুলে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা বাড়িঘরে হামলা চালায়। তারা নির্বিচারে রোহিঙ্গাদের হত্যা-ধর্ষণ ও তাদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করে আসছে এখনো। দলে দলে বাংলাদেশে আশ্রয় নিচ্ছে রোহিঙ্গারা।
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ