২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ১১:০৬

নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের পক্ষে বেশিরভাগ দল :কে এম নুরুল হুদা

নিজস্ব প্রতিবেদক:

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে অংশীজনদের সঙ্গে পমর্শ নেওয়ার অংশ হিসেবে ধারাবাহিকভাবে ৪০টি নিবন্ধিত দলের সঙ্গে সংলাপ শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় পার্টি (জেপি) ও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সঙ্গে সংলাপের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ইসির সংলাপ শেষ হয়। গত ৩১ জুলাই নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার মধ্যে দিয়ে ইসির এবারের সংলাপ শুরু করে। ১৬ ও ১৭ অগাস্ট গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করে ইসি। এরপর ২৫ আগস্ট থেকে নিবন্ধিত ৪০টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ শুরু করে নির্বাচন কমিশন, যা শেষ হয় বৃহস্পতিবার।

সংলাপে ইসি ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী সাতটি করণীয় ঠিক করে দেয়া হলেও বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল ইসির এখতিয়ার বহির্ভূত অনেক বিষয়ে প্রস্তাবনা দিয়েছেন। তাদের মধ্যে ২০টি দল নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের পক্ষে মত দিয়েছেন। আর অন্যান্য দলগুলো সেনা মোতায়েনের পক্ষে সরাসরি মত না দিলেও বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের উপর ছেড়ে দিয়েছেন।

এছাড়া দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাঁচটি প্রধান বিষয়ে পরস্পরবিরোধী প্রস্তাব দিয়েছে। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে অংশ নেয়া রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তাবগুলো পর্যালোচনা করে এমনটাই চিত্র পাওয়া গেছে।

নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের পক্ষে মত দেয়া দলগুলো হলো- মুসলিম লীগ বাংলাদেশ, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপা, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল (পিডিপি), বিকল্পধারা বাংলাদেশ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএল। এই দলগুলো নির্বাচনে বিচারিক ক্ষমতাসহ সেনা মোতায়েন চেয়েছে।

এছাড়া ইসলামী আন্দোলন, খেলাফত মজলিশ, কল্যাণ পার্টি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, তরীকত ফেডারেশন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), জাতীয় পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ শুধুমাত্র সেনা মোতায়েনের পক্ষে মত দিয়েছেন।

এর মধ্যে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ও তরীকত ফেডারেশন স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সেনা মোতায়েনের পক্ষে মত দিয়েছে। ইসলামী ঐক্যজোট ঢালাওভাবে সেনাবাহিনী মোতায়েন না করে ‘স্পর্শকাতর’ এলাকায় সেনা মোতায়েন চেয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে ঢালাওভাবে সেনাবাহিনী মোতায়েন না করার কথা।

তবে নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ জানিয়েছে নির্বাচনের সময় কোন পরিস্থিতিতে প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা যাবে, তা ফৌজদারি কার্যবিধি ও সেনা বিধিমালায় সুস্পষ্টভাবে বলা আছে।

ইসির জনসংযোগ পরিচালক এস এম আসাদুজ্জামান জানান, বৃহস্পতিবার নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সফল সংলাপ শেষ হয়েছে। প্রতিটি দলই সংলাপে অংশ নিয়েছে এটা ইসির বড় সফলতা।

ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ সংলাপে পাওয়া প্রস্তাবগুলো সম্পর্কে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, সংলাপে পাওয়া সুপারিশগুলো একটি বই আকারে প্রকাশ করা হবে। সংলাপে উঠে আসা একই ধরনের (কমন) প্রস্তাবগুলো ইসি বিবেচনা করতে পারে। যেগুলো ইসির এখতিয়ারে নেই সেই বিষয়গুলো সরকারের কাছে পাঠানো হবে।

সংলাপের উল্লেখযোগ্য সুপারিশগুলো

ইসির সঙ্গে রাজনৈতিক দলের উল্লেখযোগ্য সুপারিশগুলোর মধ্যে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন, সীমানা পুনঃনির্ধারণ ও আইন সংস্কারের সময় বড় ধরনের পরিবর্তন না আনা, সেনা মোতায়েন ও না-ভোটের পক্ষে-বিপক্ষে মত এসেছে।

পর্যবেক্ষক নিয়োগে সতর্কতা অবলম্বন, ভোটের দায়িত্বে থাকা গণমাধ্যম কর্মীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ও সংবাদ সংগ্রহে গণমাধ্যমকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, প্রার্থীর হলফনামা যাচাই করে ভুল তথ্যদাতার প্রার্থিতা বাতিল, ই ভোটিংয়ের পক্ষে-বিপক্ষে মত, ভোটের ফলাফল দ্রুত ও সঠিকভাবে প্রচারের ব্যবস্থা করা, নির্বাচন ঘিরে ধর্মীয় ও জাতিগত ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা, ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের তালিকা এখনই প্রস্তুত রেখে ব্যবস্থা নেয়া, নিবন্ধিত দলগুলোকে নিয়ে জাতীয় পরিষদ গঠন, সহায়ক সরকারে অধীনে নির্বাচন, নির্বাচনে লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরি কারা, ইসির ক্ষমতা যথাযথ প্রয়োগ করা, স্বতন্ত্র প্রার্থিতায় ১% সমর্থন তালিকা বাতিল; স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় নির্বাচনকালীন সময়ে নির্বাচন কমিশনের অধীনস্ত রাখা; নিবন্ধিত দলকে রাষ্ট্রীয় অনুদান, যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত ও জঙ্গি তৎপরতায় যুক্ত ব্যক্তি, মিয়ানমার থেকে আগত রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত না করা; ফৌজদারি দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না দেয়ার পক্ষেও মত এসেছে।

এছাড়া নির্বাচনে ধর্মের সর্বপ্রকার ব্যবহার, সাম্প্রদায়িক প্রচার প্রচারণা ও ভোট চাওয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে নিষিদ্ধ করা; স্বাধীনতাবিরোধী ও ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক দলকে নিবন্ধন না দেওয়া; প্রার্থীর নাম, দল ও প্রতীকের উল্লেখ সম্বলিত অভিন্ন পোস্টারের ব্যবস্থা করা; নির্বাচনী বিরোধ তিন মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করা, নির্বাচন কালো টাকা ও পেশিশক্তির প্রভাবমুক্ত রাখা, নৈতিক স্খলনের অভিযোগে দণ্ডিতদের দুই বছর পর সংসদ নির্বাচনে প্রার্থিতার সুযোগ বাতিল করা, যে সব দল ৩০ এর বেশি প্রার্থী মনোনয়ন দেবে সেসব দলকে বেতার ও টিভিসহ সরকারি প্রচারমাধ্যমে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সুযোগ দেওয়া, রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা- কর্মচারীদের কমিশন থেকে প্রত্যাহার করাসহ বিভিন্ন প্রস্তাব এসেছে।

আগামী বছরের শেষ দিকে একাদশ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে একটি পথনকশা তৈরি করে নির্বাচন কমিশন। আইন সংস্কার, সীমানা পুনঃনির্ধারণসহ ঘোষিত পথনকশা নিয়ে এই সংলাপের আয়োজন করে ইসি।

গত ৩১ জুলাই সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংলাপের মধ্য দিয়ে সংলাপ শুরু করে নির্বাচন কমিশন। পরে ১৬ ও ১৭ আগস্ট অর্ধশত গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে সংলাপ করে তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন পরামর্শ গ্রহণ করে ইসি। ধারাবাহিক সংলাপের অংশ হিসেবে ২৪ আগস্ট থেকে নিবন্ধিত ৪০টি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচন কমিশন।

প্রতিটি সংলাপেরই সভাপতিত্ব করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা। সংলাপে চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব ও সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

আগামী ২২ অক্টোবর পর্যবেক্ষক, ২৩ অক্টোবর নারী নেত্রী এবং ২৪ অক্টোবর নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সংলাপসূচি নির্ধারণ করেছে ইসি।

প্রকাশ :অক্টোবর ২০, ২০১৭ ১২:৪৫ অপরাহ্ণ