অনলাইন ডেস্ক:
রাখাইনের কমপক্ষে আশি হাজার শিশু ভয়াবহ খাদ্য সংকটে ভুগছে- এমন তথ্য উঠে আসে গত জুলাইয়ে জাতিসংঘের খাদ্য সহায়তা বিষয়ক কর্মসূচি ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামের (ডব্লিউএফপি) একটি রিপোর্টে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে মিয়ানমার সরকারের অনুরোধে সেই রিপোর্ট প্রত্যাহার করে নেয় ডব্লিউএফপি। সংস্থাটি এক বিবৃতিতে জানায়, এ রিপোর্ট কোনোভাবে প্রকাশ করা হবে না। দ্য গার্ডিয়ানের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে এ রিপোর্টটি প্রত্যাহার করে নেয়ার কারণ জানতে চাইলে ডব্লিউএফপি জানায়, মিয়ানমার সরকারের অনুরোধে তারা এমনটি করে। কারণ সে দেশের সরকার দাবি করে, এ বিষয়ে ডব্লিউএফপির সঙ্গে একটি যৌথ রিপোর্ট প্রকাশ করবে তারা। এ ক্ষেত্রে মিয়ানমারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ডব্লিউএফপির সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করবে বলে জানানো হয়। মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক এবং ভবিষ্যৎ সহায়তা কর্মকাণ্ড বজায় রাখতে ডব্লিউএফপি এ প্রস্তাবে রাজি হয় বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাতিসংঘে কর্মরত একজন কর্মকর্তা। প্রত্যাহার করে নেয়া ছয় পৃষ্ঠার ওই রিপোর্টে তথ্য ছিল যে, রাখাইনে বসবাসরত আশি হাজারেরও বেশি শিশু ভয়াবহ অপুষ্টিতে ভুগছে। তাদের ওজন ক্রমাগত কমছে, যা উদ্বেগজনক।
রোহিঙ্গা সংকটের পেছনে জাতিসংঘেরও হাত আছে এমন ধারাবাহিক সমালোচনার মধ্যে এই স্পর্শকাতর রিপোর্ট প্রত্যাহার করে নেয়ায় দেশে-বিদেশে জাতিসংঘের সমালোচনা হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, ১১ লাখ রোহিঙ্গার অধিকার রক্ষায় জাতিসংঘ যথাযথ ভূমিকা পালন করেনি। বরং রোহিঙ্গা নিধনের পক্ষে কাজ করেন মিয়ানমারে নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক রেনাটা লক ডেসালিয়েন। ডেসালিয়েন রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আলোচনা করা, শরণার্থী অধিকার নিয়ে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে কথা বলা, রাখাইনে মানবাধিকার কর্মীদের যেতে বাধা দেয়া, রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে জনমত গড়ে তোলার কর্মসূচি বন্ধ করে দেয়ার চেষ্টা এবং রোহিঙ্গাদের জাতিগতভাবে নির্মূলের চেষ্টার ব্যাপারে সতর্ক করেছেন যেসব কর্মকর্তা, তাদেরকে নিরুৎসাহিত করা ও বিচ্ছিন্ন করে রাখার চেষ্টা করেছিলেন বলে বিবিসির অনুসন্ধানে উঠে আসে। এমন পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের জ্যেষ্ঠ এ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতিসংঘ। অভিযোগ রয়েছে, চলমান এ সহিংস পরিস্থিতির সত্যতা সম্পর্কে বিশ্বকে অন্ধকারে রাখতে তিনি বেশকিছু স্পর্শকাতর তথ্য লুকান যা জাতিসংঘের নীতিমালার পরিপন্থী। এবার জানা গেল, রোহিঙ্গাদের ক্ষুধার রিপোর্ট গোপন করে ডব্লিউএফপি।
সম্প্রতি জাতিসংঘের এক ই-মেইলের বরাত দিয়ে দ্য গার্ডিয়ান জানায়, তারা মিয়ানমারের সঙ্গে করা ডব্লিউএফপির যৌথ রিপোর্টকেই সঠিক বলে বিবেচনা করছিল। তবে মিয়ানমারের আগস্টের সহিংসতা এ যৌথ রিপোর্টের গ্রহণযোগ্যতা নষ্ট করে দিয়েছে। অন্যদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডব্লিউএফপির একজন পরামর্শক জানিয়েছেন, রিপোর্ট গোপন করার খবরটি প্রকাশ হয়ে যাওয়ার ফলে জনমনে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। এর ফলে জাতিসংঘ ও বিশ্ব খাদ্য সংস্থায় প্রচণ্ড অস্বস্তি পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ ঘটনা পরিষ্কার ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, ডব্লিউএফপি রোহিঙ্গাদের খাদ্য সংকটের বিষয়টি জানা সত্ত্বেও গত দু’বছরে রোহিঙ্গাদের এই চলমান খাদ্য সংকটকে আরও বাড়তে দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, মিয়ানমারে অবস্থিত ডব্লিউএফপির প্রধান কার্যালয় তাদের মূল দায়িত্ব ভুলে সে দেশের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখাকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। জাতিসংঘকে একটি অনুদান সংগ্রহের প্রতিষ্ঠান বলে আখ্যায়িত করেন তিনি।
রোহিঙ্গাদের প্রতি এই তীব্র বিদ্বেষের খবর গোপন রাখতে চাওয়ায় যে অপূরণীয় ক্ষতি তাদের হয়েছে, এ দায় কে নেবে- প্রশ্ন রাখেন তিনি। গোপন করা এ রিপোর্টের ফলশ্রুতিতে আড়াই লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা সাহায্যবঞ্চিত হয়। এতে উল্লেখ ছিল, রোহিঙ্গারা নানাভাবে সেনাবাহিনী দ্বারা নিপীড়িত। তাদের জীবিকা নির্বাহের মৌলিক প্রক্রিয়া যেমন চাষাবাদ, ফসল বিক্রি- সবকিছুই সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ ব্যাপারে মিয়ানমার সরকারের মন্তব্য জানতে চেয়েছে দ্য গার্ডিয়ান। ডব্লিউএফপির সঙ্গে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে তারা এ নিয়ে কোনো সদুত্তর দেয়নি। তারা শুধু বলেছে, ডব্লিউএফপি সব সময় খাদ্য ও পুষ্টি সংক্রান্ত ঝুঁকি কমানোর লক্ষ্যেই মিয়ানমারে ছিল। এবং এটা নিয়ে তারা অবিরাম কাজ করে যাচ্ছে।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি