২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সন্ধ্যা ৬:৩৯

মেহেরপুরে শিমের ফলন ভাল চাষিদের মুখে হাসি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

আগাম শিম চাষ করে মেহেরপুরের চাষিরা ব্যাপক লাভবান হচ্ছেন। ভাল ফলন ও দাম পাওয়ায় চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে। ধান-পাট চাষের অব্যাহত ক্ষতি পুষিয়ে নিতে তাদের এ শিম চাষ। বিগত বছরের তুলনায় এবার তারা শিমের বেশী দাম পাচ্ছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবং আরো এক মাস ভাল দাম পেলে প্রতিটি শিম চাষির ঘরে আনন্দের বন্যা বইবে এমন প্রত্যাশা এ জেলার শিম চাষিদের।
মেহেরপুর সদর উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের কাঁঠালপোতা, সোনাপুর, পিরোজপুর, টুঙ্গি ও গহরপুরসহ কয়েকটি গ্রামের মাঠে প্রচুর পরিমাণ শিম চাষ হয়েছে। এলাকাঘুরে দেখা যায়, মাঠের পর মাঠ শিম ফুলে ভরে উঠেছে। চাষি শিমক্ষেতে সেচ ও বীজ দিচ্ছে। করছে শিম গাছের পরিচর্যা। কেউ তুলছেন শিম। সদর উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের কাঁঠালপোতা গ্রামের মাঠে প্রায় সাড়ে ৭শ’ বিঘা ও টুঙ্গি গ্রামের মাঠে প্রায় আড়াইশ’ বিঘা জমিতে শিম চাষ হয়েছে। এছাড়া সদর উপজেলার আমদহ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের মাঠে ও মুজিবনগর উপজেলার মহাজনপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের মাঠে প্রচুর পরিমাণে শিম চাষ হয়েছে।
টুঙ্গি গ্রামের মাঠে কয়েকজন চাষির সাথে কথা হয়। তারা জানান, স্থানীয়ভাবে তৈরি উন্নত জাতের বিস্কুট শিম চাষ করেছেন এলাকার চাষিরা। জানা যায়, ওই গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক সাড়ে ৪ বিঘা, রিহান ২ বিঘা, ইয়ামিন, মহাসিন, কাশেম, মধু ও আব্দুল হান্নান এক বিঘা করে জমিতে শিম চাষ করেছেন। তারা জানালেন, সাধারণত মাঝ আষাঢ়ে শিম চাষ করতে হয়। এবার এলাকার চাষীরা জ্যৈষ্ঠ মাসের মাঝামাঝি শিম চাষ শুরু করেছেন। আগাম শিম উঠছে। মেহেরপুরের বাজারে পাইকারি ২ হাজার ৮শ’ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা মন দরে এ শিম বিক্রি হচ্ছে।
পিরোজপুর গ্রামের চাষি আকাশ দেড় বিঘা জমিতে শিম চাষ করেছেন। তিনি জানালেন, এ পর্যন্ত তার ৬ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। শিমের আবাদ শেষ হওয়া পর্যন্ত তার দেড় বিঘা জমির পিছনে ১৫ হাজার থেকে ১৮ হাজার টাকা খরচ হতে পারে। গেল সপ্তা’য় তিনি প্রথম দিনে ২৫ কেজি শিম তুলেছেন। মেহেরপুর বাজারে ওই শিম ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন। তিনি এখন প্রতি সপ্তাহে শিম তুলবেন। তিনি বললেন, মাঘ মাস পর্যন্ত ক্ষেত থেকে শিম তোলা যাবে। ভাল দাম পেলে বিঘা প্রতি ৬০ হাজার টাকার শিম বিক্রি করতে পারবেন। যদি আরো এক দেড় মাস প্রতি কেজি শিমের দাম ৪০ টাকা বা তার বেশী পান তবুও বিঘা প্রতি ৪০ হাজার টাকার শিম বিক্রি করতে পারবেন।
টুঙ্গি গ্রামের চাষি হযরত আলী জানান, তিনি পঁচিশ কাঠা জমিতে শিম চাষ করেছেন। তিনি জানালেন, গেল সপ্তাহে প্রথম দিনে ক্ষেত থেকে ২ মন শিম তুলে মেহেরপুরে পাইকারি ৩ হাজার টাকা মন দরে বিক্রি করেছেন। তিনি বলেছেন, এ পর্যন্ত ওই জমিতে তার যে খরচ হয়েছে তা প্রথম দিনের বিক্রিত শিমের দামে ওঠে গেছে। তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে চাষ, বীজ-সেচ, সার-বিষ ও লেবার বাবদ প্রতি বিঘা শিমে ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা ব্যয় হবে। গত বছর তার মাত্র ১০ কাঠা জমিতে শিম চাষে খরচ বাদে ৪০ হাজার টাকা লাভ হয়েছিল। এবছরও তিনি মোটা টাকা লাভের আশাবাদী।
মেহেরপুর ছোট বাজারের সবজি ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেন জানান, বাজারে খুচরা শিম বিক্রির জন্য আসছে না বললেই চলে। গ্রামের শিম চাষিরা বিকেলে বিকেলে শিম নিয়ে আড়তে দিচ্ছে। রাতে ট্রাক ভর্তি হয়েছে রাজধানী ঢাকা, বন্দর নগরী চট্টগ্রাম, বরিশালসহ বিভিন্ন জেলার যাচ্ছে ওই শিম।
মেহেরপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জানান, এবছর শিম চাষ ভাল হয়েছে। আবহাওয়া বৈরি না হলে শিম চাষে চাষি খুব ভাল লাভবান হবেন। এবছর সদর উপজেলায় ২০৭ হেক্টর জমিতে শিম চাষ হয়েছে। এর মধ্যে শুধু পিরোজপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের মাঠে ১৬০ হেক্টর জমিতে শিম রয়েছে।
এদিকে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানিয়ে, এবছর জেলার ৩ উপজেলার বিভিন্ন মাঠে ২৬৫ হেক্টর জমিতে শিম চাষ হয়েছে। যার মধ্যে সদর উপজেলায় ২০৭ হেক্টর ও মুজিবনগর উপজেলায় ৫১ হেক্টর জমিতে শিম চাষ হয়েছে। শিমের ফলন ভাল হওয়ায় ও কৃষক ভাল দাম পাওয়ায় জেলা কৃষি বিভাগও খুশি।
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ
প্রকাশ :অক্টোবর ১৮, ২০১৭ ১২:২৪ অপরাহ্ণ