দৈনিক দেশজনতা অনলাইন ডেস্ক:
মিয়ানমার সেনাদের নির্যাতনে ইতিমধ্যে প্রায় ছয় লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। প্রতিদিনই বর্মি এফএম রেডিওতে রোহিঙ্গাদের উদ্দেশে ঘোষণা দেয়া হচ্ছে- টোয়ে মিলং, অর্থাৎ পালিয়ে যাও। এখনো প্রতিদিন দলে দলে আসছে রোহিঙ্গা। তাদের অনেকে শিক্ষিত। বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া এসব রোহিঙ্গা শিক্ষিতজনরা বলছেন, রোহিঙ্গাদের ইতিহাস-সংস্কৃতি-পরিচয় মুছে দিতে শিক্ষক, পেশাজীবী, ধর্মীয় নেতাদের খুঁজে খুঁজে বের করে হত্যা করছে বর্মি সেনারা। আরসা মিয়ানমার সামরিক জান্তার ছায়া সংগঠন হিসেবে সৃষ্টি করা হয়েছে দাবি কওে তারা বলছেন, আরসার নাম তারা ককনো শোনেননি।
মিয়ানমারের বুচিদং টংবাজার হাই স্কুলে অনেক দিন ধরে শিক্ষকতা করেছেন মাস্টার আমিন উল্লাহ (৫২)। তিনি বলেন, ২৫ আগস্ট মিয়ানমারে সেনা ক্যাম্পে নাটকীয় হামলার পর থেকে আরসার নাম শুনেছেন তারা। আরসার অজুহাতে মিয়ানমার সেনা, পুলিশ, উগ্রপন্থী দেড় মাস ধরে রাখাইন গোষ্ঠী সম্মিলিতভাবে রোহিঙ্গাদের ওপর হত্যা, অগ্নিসংযোগ, দমন-নিপীড়ন চালাচ্ছে। উখিযা ক্যাম্পে সম্প্রতি আশ্রয় নেয়া এই স্কুল শিক্ষক বলেন, রাখাইনের গ্রামে গ্রামে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে গ্রামবাসীদের নির্দেশ দিয়েছে- থো থো যাই যাই। অর্থাৎ তাড়াতাড়ি গ্রাম ছাড়ো। দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সোর্স হিসেবে কাজ করে আসছিলেন বুচিদং এলাকার গর্জনদিয়া গ্রামের আনু মিয়া (২৪)। সাইনবোর্ড টানানোর পরপর স্ত্রী-পরিজন নিয়ে গ্রাম ছেড়ে গর্জনদিয়ার গভীর জঙ্গলে আশ্রয় নেন তিনি। কারণ তিনি জেনেছেন তখনই বর্মি সেনারা হামলা করবে। তাকে না পেয়ে বর্মি সেনারা তার বাড়িটি পুড়িয়ে দেয়। রোহিঙ্গা আবু শামা (২৭), ফকির আহমদ (৩৪) জানান, রোহিঙ্গাদের মাতৃভূমির স্মৃতি বিজড়িত স্থান একেবারে মুছে দিতে এবং তাদের ইতিহাস, সংস্কৃতি নষ্ট করার লক্ষ্যে শিক্ষক, পেশাজীবী, ধর্মীয় নেতাদের নিশ্চিহ্ন করতে চিরুনি অভিযান চালাচ্ছে সেনারা।
রাখাইনে সেনা অভিযান বন্ধ বলে মিয়ানমার সরকারের দাবিকে মিথ্যা বলছেন আকিয়াব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া শরিফুল। তিনি বলেন, মিয়ানমার সরকারকে বিশ্বাস করা যায় না। তাদের কথায় ও কাজের মিল নেই। শরিফুল্লাহ নিয়মিত রেডিওর খবর শোনেন। এ দেশে এসেও এফএম রেডিওর খবর শুনছেন। মিয়ানমারের রেডিওর খবরের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, এখনো ঘোষণা দিচ্ছে- টোয়ে মিলং, অর্থাৎ পালিয়ে যাও।
বিদ্রোহী সংগঠন আরসা মিয়ানমারের সৃষ্টি বলে দাবি করে উখিয়ায় আশ্রিত রোহিঙ্গা নেতা ডাক্তার জাফর আলম বলেন, ভয়াবহ নির্যাতন, নিপীড়নের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা শিক্ষিত ও সচেতন রোহিঙ্গারা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম উদ্বিগ্ন। জেনারেল মিন অং লেইন বুঝিয়ে দিলেন মিয়ানমারের ভূখন্ড থেকে রোহিঙ্গাদের নাম চিরতরে মুছে দিতে চায় তারা। কারণ গণতান্ত্রিক উত্তরণের পর মিয়ানমারের রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় এলেও মূলত দেশটির সাংবিধানিক ক্ষমতার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করছে সে দেশের সেনাবাহিনী।
মংডুর দুয়েলতলীর চেয়ারম্যান (হুক্কাট্টা) জামাল হোসেন সিকদার সপরিবারে থাইংখালী হাকিমপাড়া বস্তিতে থাকেন। তিনি বলেন, ১৯৮৭ সালে তাদের পরিচয়পত্রে জাতি হিসেবে লেখা ছিল রোহিঙ্গা। ১৯৮৯ সালে তাদের নতুন ফরম পূরণ করিয়ে জাতি হিসেবে মুসলিম লেখা হলেও ১৯৯৫ সাল থেকে লেখা শুরু করে বাঙালি। এর আগের সেনাপ্রধান থেইন সেইনের সময় রোহিঙ্গাদের সব ধরনের কার্ড কেড়ে নেয়া হয়। পরে ন্যাশনাল কার্ড দেয়ার নামে যেসব ফরম পূরণ করা হয় সেগুলো বার্মিজ ভাষায় লেখা থাকলেও পূরণ করতে বলা হয় বাংলায়। রোহিঙ্গারা বাংলা লেখা জানা না থাকায় নতুন কোনো কার্ড রোহিঙ্গাদের আর মিলেনি।
সোহেল আহমদ (৩৮) নামের এক শিক্ষিত যুবক বলেন, তার বাবা মৃত আমির শরীফ দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমার সরকারের চাকরিতে ছিলেন। তাদের অনেক জমিজমা সহায়-সম্পত্তি ছিল। তিনি বলেন, আমরা মৌলিক অধিকার ও নাগরিকত্ব নিয়ে দেশে ফিরতে চাই।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি