নিজস্ব প্রতিবেদক:
দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে কৃষকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে পোকা-মাকড় দমনে নতুন পদ্ধতি ‘আলোক ফাঁদ’। আমন ক্ষেতে ফসলের বালাই দমনে খরচ কমাতে কৃষিবান্ধব এই পদ্ধতির প্রতি দিনে দিনে আগ্রহী হয়ে উঠছেন কৃষকরা। ইতোমধ্যেই এই উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের ৩৬টি ব্লকে কৃষি অফিসের উদ্যোগে স্থাপন করা হয়েছে এই ‘আলোক ফাঁদ’।
চিরিরবন্দর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মাহমুদুল হাসান জানান, ফসলে পোকা-মাকড় আক্রমণ করলে কৃষকরা সাধারণত তা নিরূপণ না করেই বিভিন্ন কীটনাশক প্রয়োগ করে থাকেন। এতে অনেক ক্ষেত্রেই কাজ হয় না। ফসলে কোন পোকা আক্রমণ করেছে তা নিরূপণ করতে না পারায় বিভিন্ন প্রকার কীটনাশক প্রয়োগ করে কৃষকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তেমন উপকৃত হন না। কিন্তু ফসলে কোন পোকা আক্রমণ করেছে- তা নিরূপণ করে কীটনাশক প্রয়োগ করলে কৃষকরা কম খরচেই ফসলের বালাই নাশ করতে পারে। আর ফসলে কোন পোকা আক্রমণ করেছে তা নিরূপণ করার জন্যই এই আলোর ফাঁদ পদ্ধতি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাহমুদুল হাসান জানান, আলোর ফাঁদ পদ্ধতির মাধ্যমে ফসলে কোন পোকা আক্রমণ করছে তা নিরূপণ করে সময়মতো দমনে উদ্যোগ নেয়ায় ইতোমধ্যেই কৃষকরা বেশ উপকৃত হচ্ছে এবং ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে আমন ক্ষেত। এতে কম খরচেই ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব বলে জানান তিনি। কৃষি কর্মকর্তা জানান, ইতোমধ্যেই চিরিরবন্দর উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের ৩৬টি ব্লকে কৃষি অফিসের উদ্যোগে আলোক ফাঁদ স্থাপন করা হয়েছে।
এদিকে চিরিরবন্দর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ‘আলোক ফাঁদ’ পদ্ধতিতে আমন ক্ষেতের আইলে বা মাঝখানে কোথাও পানি ভর্তি পাত্রে আবার কোথাও কাগজের উপর আলো জ্বালিয়ে কৃষকরা ফসলে আক্রমণ করা পোকা ধরছেন। এরপর এটি কোন পোকা, তা সহজেই চিহ্নিত করতে পারছেন। পোকা চিহ্নিত করে তা কৃষি কর্মকর্তার সঙ্গে পরামর্শ করে শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় কীটনাশক প্রয়োগ করছেন ওই ফসলে। এতে একটি মাত্র কীটনাশক প্রয়োগ করেই পুরো ক্ষেত আক্রমণ করার আগেই ফসলের পোকা দমন করতে পারছেন তারা। ফলে বাড়তি খরচের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছেন কৃষকরা।
চিরিরবন্দর উপজেলার আব্দুলপুর গ্রামের কৃষক জাকির হোসেন, ফজলুর রহমান, নশরতপুর গ্রামের কৃষক রহিদুল, সাইদুর রহমান, নজরুলসহ অন্যান্য কৃষকরা জানালেন, আগে ক্ষেতে পোকার আক্রমণ হলে তারা একটির পর একটি কীটনাশক প্রয়োগ করতেন। এতে অনেক ক্ষেত্রে কাজ হতো, আবার অনেক ক্ষেত্রে কাজ হওয়ার আগেই জমির ক্ষেত পোকায় নষ্ট করে ফেলতো। কিন্তু এখন আলোর ফাঁদ পদ্ধতিতে পোকার উপস্থিতি নিরূপণ করে কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ অনুযায়ী একটি মাত্র কীটনাশক প্রয়োগ করেই ফসল রক্ষা করতে পারছেন তারা। এতে তাদের অর্থও সাশ্রয় হচ্ছে, আর ক্ষেতও পোকার হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে। এই পদ্ধতি অনুসরণ করায় এবার আমনের ভালো ফলন পাবেন বলে আশা করছেন তারা।
তারা জানান, ইতোমধ্যেই পরিবেশ বান্ধব এই পদ্ধতিকে এলাকার কৃষকরা সাধুবাদ জানিয়েছে। গত সোমবার সন্ধ্যায় আমন ক্ষেতের পোকার উপস্থিতি পর্যবেক্ষণে আলোক ফাঁদ পদ্ধতির পরিদর্শনে একযোগে যান চিরিরবন্দর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাহমুদুল হাসানসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা। তারা বিভিন্ন এলাকায় আলোক ফাঁদে আটকানো পোকার উপস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে কৃষকদের প্রয়োজনীয় কীটনাশক প্রয়োগের আহ্বান জানান।
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ