নিজস্ব প্রতিবেদক:
হু হু করে বেড়ে চলছে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম। এ যেন কিছুতেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। যতদিন যাচ্ছে নিত্যপণ্যের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। কিন্তু হঠাৎ করে কেন নিত্যপণ্যের দাম মানুষের নাগালের বইরে চলে গেল? আর কেনই বা তা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না এমন আলোচনা-সমালোচনা এখন সর্বত্র। রোববার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত কয়েকদিনে চালের দাম কিছুটা কমলেও এখনও চড়া মূল্যেই বিক্রি হচ্ছে। চালের বাজারের অস্থিরতায় সাধারণ মানুষ চ্যাপ্টা হয়ে গেছে। নতুন করে এবার চালের উচ্চমূল্যের প্রভাব পড়েছে সবজি ও মাছের ওপর। কেননা গত এক সপ্তাহে হাতে গোনা দুই একটি সবজি ছাড়া সবগুলোর দাম বেড়েছে কয়েকগুণ।
এই মুহূর্তে বাজারে কাঁচামরিচের দাম সবচেয়ে বেশি। গত সপ্তাহে প্রতি কেজি কাঁচামরিচ ১২০ টাকা বিক্রি হলেও চলতি সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকায়। খুচরা বাজারে কোথাও কোথাও প্রতি কেজি কাঁচা মরিচের দাম ৩০০ টাকা পর্যন্ত হাঁকছেন বিক্রেতারা। এ ছাড়া প্রতি কেজি চিচিঙ্গা ৬০, করলা ৬০, টমেটো ১৪০, ধুন্দুল ৪০ ও প্রতি কেজি মুলা ৬০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। লাউ প্রতি পিস ৩০-৫০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৬০, লালশাক প্রতি আঁটি ৩০, ডাঁটাশাক ৩০, কলমিশাক ২০, পুঁইশাক ৬০ ও পাটশাক ১৫ টাকা আঁটি দরে বিক্রি হয়েছে। চালসহ নিত্যপণ্যের এই ব্যাপক দরবৃদ্ধির প্রভাবে সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় পড়েছে মধ্যবিত্ত ও নিম্নআয়ের মানুষ। এদের অনেকেই দরাদরি করতে গিয়ে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা-কাটাকাটিতেও জড়িয়ে পড়ছেন।
রাজধানীর কাওরান বাজারে গিয়ে কথা হয় মো. রাশেদের সাথে। তিনি বলেন, ‘কিছুই কেনার মতো নেই। কিভাবে কিনবো? সব জিনিসের এতো দাম। আমরা পড়ছি গ্যাড়াকলে। না, শান্তিমতো থাকতে পারছি, না আয় বাড়াতে পারছি। কেউ তো দেখার নাই।’ এ বছর কোরবানির ঈদের পর কোনো কারণ ছাড়া হঠাৎ করেই অস্থির হয়ে উঠেছে দেশের চালের বাজার। মাত্র কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে বেপরোয়া সিন্ডিকেটে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে বেড়েছে প্রায় ১০ টাকা। তবে এই দাম বাড়ার নানা কারণ দেখালেও সদুত্তর দিতে পারছেন না ব্যবসায়ী, আড়তদার ও মিল মালিকরা। সরকারের তরফে মজুতদারি ও সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কড়া হুঁশিয়ারি দেয়া হলেও বাজারে তার কোনো প্রভাবই পড়েনি।
গত ৩ সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীতে মোটা চালের দাম কেজি প্রতি ৪ থেকে ৬ টাকা কমে এখন বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫০ টাকায়। তবে এখনও অপরিবর্তিত রয়েছে চিকন চালের দাম। প্রতি কেজি চিকন চাল খুচরা বাজারে এখনও বিক্রি হচ্ছে ৬৫-৬৭ টাকায়। বিক্রেতারা জানান, আড়তদাররা দাম বাড়িয়েছে, সে কারণে খুচরা বাজারে চালের দাম বেড়েছে। মিলাররা চাল ছাড়ছে না, বাজারে চালের সরবরাহ কম। এসব কারণে নতুন করে চালের দাম বেড়েছে। এ ছাড়া বাজারে কঠোর মনিটরিং প্রয়োজন বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা। কাওরান বাজারের চাল ব্যবসায়ী আলম হোসেন বলেন, মোকামে চালের দর বেশি। আমরা যে দামে কিনি এর সঙ্গে কিছু মুনাফা যুক্ত করে খুচরা বাজারের ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করি। এখানে কোনো কারসাজি নেই। কারসাজি যদি হয়ে থাকে তাহলে তা মিলাররা করে।
এদিকে, অবৈধভাবে চাল মজুদ, ও বেশি দামে চাল বিক্রিসহ নানা অপরাধে গত কয়েক সপ্তাহে সারাদেশে একাধিক মিল মালিককে জারিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। কিন্তু তাতেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। কোনোভাবেই কমছে না চালের দাম। বাংলাদেশে চালের দাম বেড়ে যাওয়া নিয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)। সংস্থাটি বলেছে, গত তিন মাসে দেশে চালের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ার পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। এই সময়ে দেশে খাদ্যের দাম, খাদ্যের সহজলভ্যতা ও খাদ্যের মান, এই তিন ক্ষেত্রেই পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এবারই প্রথম বাংলাদেশের জন্য এমন সতর্কবার্তা আসলো সংস্থাটির পক্ষ থেকে।
এদিকে, চাল ব্যবসায়ীদের বড় ধরনের সিন্টিকেড ও চালের বাজারে সরকারের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলাকে চালের দাম বৃদ্ধির জন্য দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। চালের দামসহ নিত্যপণ্যের বাজার কেন নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয় ভোক্তাদের সংগঠন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘চালের বাজারে ব্যবসায়ীদের একটা কারসাজি তো আছেই। চাল ব্যবসায়ীদের মধ্যে বড় ধরনের সিন্ডিকেড রয়েছে তা আমরা সবাই জানি। এ ছাড়া দেশে বড় দুটি বন্যা গেল। এসব কারণে কিন্তু চালের দাম হঠাৎ করে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। এ ছাড়া সরকারের গুদামের মজুদ একেবারে তলানিতে চলে এসেছে। ফলে সুযোগ বুঝে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘মার্কেট নিয়ন্ত্রণে সরকারের যে ক্ষমতা ছিল গুদামে চালের মজুদ কমে যাওয়ায় সরকার সেই ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে।’
‘মোটা চালের বাজারে সরকারের ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে কিন্তু কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। কিন্তু যারা চিকন চাল খায় তারা যত দামই হোক চিকন চাল কিনে খাচ্ছে। আর এই সুযোগটা ব্যবসায়ীরা নিচ্ছে বলে চিকন চালের দাম কমছে না’- যোগ করেন গোলাম রহমান। এ প্রসঙ্গে জানতে খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি