২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১২:১৫

স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রোহিঙ্গারা, এইচআইভি রোগী ১৫

কক্সবাজার প্রতিনিধি:

বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের অমানবিক নির্যাতন, নিপীড়নের শিকার থেকে প্রাণে বাঁচলেও তারা অপুষ্টিসহ নানা রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। রাখাইনে নৃশংসতার স্বাক্ষী এই শিশুদের অনেকেই ভুগছে, মানসিক সমস্যায়। আবার অনেকে বিস্ফোরণেও জখম হয়েছে। রোহিঙ্গাদের অধিকাংশ, পুষ্টিহীনতা, চর্ম রোগ, কান পঁচা রোগ, যক্ষা, সর্দি- কাশি, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, হেপাটাইটিস-বি, হেপাটাইটিস-সি সংক্রামক নানান রোগ সহ এইচআইভি রোগীর তালিকাও দিন দিন দীর্ঘতর হচ্ছে। আশ্রয় নেওয়া শরণার্থীদের মধ্যে দেড় লাখের বেশি শিশু রয়েছে। এক্ষেত্রে নবজাতকরা বেশি সমস্যায়। তাদের সুস্থভাবে বেড়ে ওঠাও এখন শঙ্কার মুখে। যারা এখন টেকনাফ, উখিয়ার বিভিন্ন শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে অবস্থান করছে।
মা-বাবা, ভাই-বোনের লাশ ফেলে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শিশু আনাছ মিয়া উখিয়ার কুতুপালং অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ডি-ব্লকে দাদা-দাদির সাথে বসবাস করছে। সে এখনো স্বজন হারানোর বেদনায় প্রায় মানসিক ভারসাম্যহীন। ক্যাম্প গুলোতে এরকম অসংখ্যা স্বজন হারানো শিশু-কিশোরের স্থান রয়েছে। আনাছ মিয়ার মতে, সরকারি-বেসরকারি ভাবে যতই ত্রাণ পায় না কেন, স্বজন হারানোর যন্ত্রণা ভুলতে পারছে না কোন ভাবে। বেশিরভাগ শিশু সামনের দিনগুলো কিভাবে কাটবে সেই শঙ্কার পাশাপাশি, নানা রকমের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে। কারণ দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে গিয়ে তারা বিভিন্ন রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছে। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় খাবারের কষ্ট আর চিকিৎসা সেবার সংকটতো ছিলোই।
বিএসএমএমইউ’র ৫০ জনের চিকিৎসক দল নিয়ে দুই ব্যাপী ফ্রি-মেডিকেল ক্যাম্পে বৃহস্পতিবার উদ্বোধনকালে উপাচার্য অধ্যাপক ডা: কামরুল হাসান বলেন, আমরা জানি মিয়ানমার এইচআইভি ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। সে জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সহ সংশ্লিষ্ট সকলে আন্তরিক ভাবে কাজ করছে। তিনি বলেন ১৮-২০ হাজার গর্ভবতী রোহিঙ্গা নারীর মধ্যে এ পর্যন্ত ৩৫৩ জন ডেলিভারীর কথা।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিএসএমএমইউ ফ্রি-মেডিক্যাল টীমের প্রতিনিধির দলের সদস্য প্রফেসর ডা: একেএম মোশাররফ হোসেন বলেন, দুইদিনে প্রায় ২ হাজার রোগীকে চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়েছে। ফাঙ্গাল (দাউদ) ও ডায়রিয়া জনিত সমস্যাটা প্রকট। সে জন্য তাদের স্বাস্থ্যজনিত শিক্ষা দেওয়া উচিত। তাছাড়া অনেকে ওষুধ নিয়ে গেলেও যথাযথ ভাবে সেবন করছে কিনা সন্দেহ তাঁর। তিনি মনে করেন দ্রুত সঠিক রোগ নির্ণয় পূর্বক চিকিৎসার জন্য ভালো স্থাপনা দরকার।
কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা: আবদু সালাম বলেন, নানা রোগের পাশাপাশি এ পর্যন্ত ১৫ জন এইচআইভি রোগী শনাক্ত হয়েছে। তার মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে। আশার আলো নামে একটি সংস্থা কক্সবাজার সদর হাসপাতালে আলাদা ইউনিটে তাদের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে ।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালে দায়িত্বরত মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা: শাহীন আব্দুর রহমান চৌধুরী বলেন, মিয়ানমার থেকে আগত রোহিঙ্গাদের ০.৮% এইচআইভি শনাক্ত হতে পারে। দিন দিন এইচআইভি রোগীর তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। এ পর্যন্ত চিকিৎসা সেবা দেয়ার পূর্বে একজন এইচআইভি রোগী মারা গেছে। তিনি জানান ১৫ জন এইচআইভি রোগী শনাক্ত হলেও শনিবার পর্যন্ত ৯জন এইচআইভি রোগীকে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে। তিনি আরো বলেন, সিভিল সার্জন অফিসের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে স্ক্যানিং করে চিকিৎসা সেবা দেয়ার প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।
বালুখালী ক্যাম্পে চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার ডা: মো: আলম বলেন, রোহিঙ্গারা শতভাগই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। তার মধ্যে শিশুগুলো চরম অপুষ্টিতে ভুগছে। তাছাড়া রোহিঙ্গারা নানা সংক্রামক রোগে আক্রান্ত। তিনি আরো বলেন, বালুখালী ক্যাম্পে প্রতিদিন ৬-৭শ রোগীর চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়।
ক্যাম্পে দায়িত্বরত ডা: দীপায়ন বলেন, ক্যাম্প গুলোতে যতই মেডিকেল টীম কাজ করুক না কেন, সবাই প্রাথমিক চিকিৎসা দিচ্ছে মাত্র। তিনি মনে করেন জটিল ও সংক্রামক রোগে আক্রান্ত রোগীদের আলাদা করে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা জরুরী। উখিয়ার থাইংখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দায়িত্বরত বেসরকারি মেডিকেল টীমের সদস্য নুরুল আবছার একই অভিমত ব্যক্ত করেন। তার মতে, সরবরাহকৃত ওষুধ সেবনে অনিয়মের কারণে রোগ ব্যধি ছড়িয়ে পড়ছে।

দৈনিকদেশজনতা/ আই সি 

প্রকাশ :অক্টোবর ৯, ২০১৭ ১০:৪৮ পূর্বাহ্ণ