২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | বিকাল ৪:৫০

পুলিশ কনস্টেবলের সাহসিকতায় বাঁচল অর্ধশতাধিক যাত্রীর প্রাণ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

ঘড়ির কাটায় বিকালে ঠিক সাড়ে ৫টা। চালকবিহীন একটি যাত্রীবাহী বাস অর্ধশতাধিক যাত্রী নিয়ে চলছে আজানা গন্তব্যে। বাসের ভেতর শুরু হয়েছে হৈচৈ। মুহূর্তেই ঘটবে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। নিশ্চিত মৃত্যু জেনে অধিকাংশ যাত্রী শুরু করেছেন দোয়া-দরুদ পড়া। আবার কেউ কেউ দুর্ঘটনা এড়াতে খুঁজছে কৌশল। বিষয়টি সিনেমার কোনো কাহিনী নয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার বলদাখাল এলাকায় মঙ্গলবার বিকেল ঘটেছে এমন ঘটনা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ঢাকাগামী এশিয়া ট্রান্সপোর্টের যাত্রীবাহী একটি বাস দাউদকান্দি উপজেলার মালীখিল এলাকায় মো. জহিরুল ইসলাম (৪০) নামে এক মোটরসাইকেল আরোহীকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। এ সময় বাসটি দ্রুত গতিতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।

খবর পেয়ে গাড়িটিকে আটক করতে দাউদকান্দি হাইওয়ে থানা পুলিশের একটি দল বলদাখাল এলাকায় অবস্থান নেন। দূর থেকে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে চলন্ত গাড়ি থেকে চালক জানালা দিয়ে এবং কৌশলে হেলপারসহ সকল স্টাফ পালিয়ে যায়।

এসময় চালক ছাড়াই চলছিল গাড়িটি। মুহূর্তেই দাউদকান্দি হাইওয়ে থানার কনস্টেবল মো. সাইফুল ইসলাম জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলন্ত বাসটিতে লাফিয়ে উঠে চালকের আসনে বসেই বাসটিকে তার নিয়ন্ত্রণে নিতে সক্ষম হন। এসময় যাত্রীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসে। কনস্টেবল সাইফুলের ভূমিকা নিয়ে বর্তমানে কুমিল্লা জেলা জুড়ে চলছে ব্যাপক প্রশংসা। এ বিষয়ে কনস্টেবল সাইফুল ইসলাম জানান, মানবিক মূল্যবোধ থেকে আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছি। যাত্রীদের বাঁচাতে গিয়ে যদি মৃত্যু হতো এতেও কোনো দুঃখ থাকতো না।

এ বিষয়ে হাইওয়ে পুলিশের কুমিল্লা রিজিয়নের এসপি পরিতোষ ঘোষ জানান, কনস্টেবল সাইফুল জীবন বাজি রেখে অর্ধশতাধিক যাত্রীর প্রাণ বাঁচিয়ে গোটা পুলিশ প্রশাসনের জন্যে গৌরব অর্জন করেছে। তার সাহসী এ কর্মের জন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে তাকে ৫ হাজার টাকা পুরস্কার দিয়েছি। পুলিশ সুপার আরো জানান, তাকে জাতীয়ভাবে পুরস্কৃত করার জন্য আমরা পুলিশ সদর দপ্তরে প্রস্তাবনা পাঠাবো।

চলতি বছরের ৭ জুলাই সকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দাউদকান্দির গৌরীপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ঢাকা থেকে চাঁদপুরগামী একটি যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ডোবায় পড়ে যায়। এ সময় কুমিল্লার দাউদকান্দি হাইওয়ে থানায় কর্মরত কনস্টেবল পারভেজ ডোবার ময়লা দুর্গন্ধযুক্ত পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। নিজের জীবন বাজি রেখে তিনি বাসের জানালার কাঁচ ভেঙ্গে ৭ মাসের শিশুসহ প্রায় ২৬ জন যাত্রীর জীবন বাঁচান।

দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ

প্রকাশ :অক্টোবর ৫, ২০১৭ ৪:১৮ অপরাহ্ণ