২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ৯:৪২

রোহিঙ্গা নির্যাতনের প্রতিবাদে ফানুস উড়াবে না বৌদ্ধরা

নিজস্ব প্রতিবেদক:

মিয়ানমারে বৌদ্ধ ও মগরা রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর নির্যাতন চালালেও রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন কক্সবাজারের বৌদ্ধ সম্প্রদায়। রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সরকারের জাতিগত নিধন, অত্যাচার, নির্যাতনের প্রতিবাদ জানাতে কক্সবাজারে বৌদ্ধরা আজ তাদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব শুভ প্রবারণা পূর্ণিমার সকল অনুষ্ঠানিকতা স্থগিত করেছেন।

কক্সবাজারের বৌদ্ধ সম্প্রদায় সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, রোহিঙ্গা নির্যাতনের প্রতিবাদে আজ প্রবারণা পূর্ণিমায় বাকঁখালী নদীতে কল্পজাহাজ ভাসা ও আকাশে ফানুস উড়াবেন না। বরং প্রবারণা উৎসব আয়োজনের সংগ্রহীত সকল অর্থ দিয়ে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করবেন।

কক্সবাজারের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সর্বোচ্চ ধর্ম গুরু ও রামু কেন্দ্রীয় সীমা বিহারের অধ্যক্ষ পণ্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথেররের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় কক্সবাজারের সকল বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষগণ উপস্থিত থেকে এই প্রতিবাদ কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নেন।

এ ছাড়া কক্সবাজারের বৌদ্ধ ঐক্য ও কল্যাণ পরিষদ আয়োজিত সভায় উপজেলার সকল বৌদ্ধ বিহার পরিচালনা কমিটির সম্পাদকগণ, বিভিন্ন বৌদ্ধ সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেন বৌদ্ধ নেতৃবৃন্দ।

বৌদ্ধ নেতারা জানিয়েছেন, ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর দুষ্কৃতকারীরা সহিংসতা চালিয়ে রামুর বৌদ্ধ মন্দির ও বৌদ্ধ পল্লীতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করেছিল। ওই সময় বাংলাদেশ সরকার ও দেশ-বিদেশের মানুষ রামুর অসহায় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের পাশে দাঁড়িয়েছিল। সহানুভূতি জানিয়েছিল জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে সকল সম্প্রদায়ের মানুষ। ধর্মের ওপর আঘাত হানায় সে সময়ও রামুর বৌদ্ধরা সকল প্রকার উৎসব বর্জন করেছিল।

তারা জানিয়েছেন, পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর সে দেশের সরকার অমানবিক নির্যাতন চালিয়ে নারী ও শিশুসহ মানুষ হত্যা করছে। তার প্রতিবাদে বৌদ্ধ সম্প্রদায় শুরু থেকেই প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধন করেছে। রোহিঙ্গাদের প্রতি অমানবিক নির্যাতন বন্ধের জোর দাবি জানিয়ে আর্ন্তজাতিক বিশ্বকে সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয় সভায়।

মিয়ানমারে যে সহিংসতা হচ্ছে তা বৌদ্ধ ধর্মের পরিপন্থী। বৌদ্ধ ধর্মে হিংসা, বিদ্বেষ, অন্যায়, অত্যাচার, হত্যা, নির্যাতন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। মিয়ানমারের সামরিক জান্তা যা করছে, ধর্মমতে তার ফল তাদেরকে ভোগ করতেই হবে বলে বৌদ্ধ নেতারা উল্লেখ করেন।

বৌদ্ধরা মনে করেন, ২০১২ সালের রামু সহিংসতা আর বর্তমানে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নির্যাতন এক ও অভিন্ন। তারা সকল নির্যাতনের বিরুদ্ধে। তাই রোহিঙ্গাদের প্রতি সহানুভূতি জানাতে এ বছর প্রবারণা পূর্ণিমায় জাহাজ ভাসানো ও ফানুস উড়ানো উৎসবসহ সকল প্রকার উৎসব বর্জন করা হয়েছে।
সেইসঙ্গে উৎসবের অর্থ রোহিঙ্গাদের মাঝে বিতরণ করা হবে। প্রবারণা পূর্ণিমার পরপরই একুশে পদকপ্রাপ্ত উপ-সংঘরাজ, রামু কেন্দ্রীয় সীমা বিহারের অধ্যক্ষ পণ্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথেররের নেতৃত্বে রামুর বৌদ্ধ সম্প্রদায় রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করবেন।

দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ

প্রকাশ :অক্টোবর ৫, ২০১৭ ১২:১০ অপরাহ্ণ