নিজস্ব প্রতিবেদক:
ক্লাস ফাঁকি, ছুটি ছাড়া বিভাগে অনুপস্থিতি সহ নানা অভিযোগ এসেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে। নাজুক পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে খুঁড়িয়ে চলছে ওই বিভাগের শিক্ষা কার্যক্রম। বিভাগের ২২ জন শিক্ষকদের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকজনকে বিভাগে নিয়মিত উপস্থিত পাওয়া যায়। বেশির ভাগ শিক্ষকরা বিশ^বিদ্যালয়ে ছুটি ছাড়া অনুপস্থিত থাকেন। উপস্থিত থাকলেও তারা ঠিকমত ক্লাস নেন না। ক্লাস নিলেও তড়িঘড়ি করে কোর্স শেষ করে দেন। এসব অভিযোগ উঠেছে খোদ বিভাগের সভাপতির বিরুদ্ধেও।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগের ভিত্তিতে জানা যায়, বিভাগে অধিকাংশ শিক্ষক নানা অজুহাতে বিভাগে আসেন না। কেউ কেউ ঘুরে বেড়ান। কেউ কেউ মাঝে মাঝে বিভাগে এসে চলে যান। অধিকাংশরাই নিয়মিত ক্লাস নেন না । বিভাগের অন্যান্য কার্যক্রম চলে ঢিলেঢালা ভাবে । ল্যাব কার্যক্রমে অধিকাংশ সময় ল্যাবে কর্মরত কর্মকর্তা কর্মচারীরাই থাকেন। শিক্ষকরা আসেন না। ফাঁকি দেয়া শিক্ষকরা ক্লাস নিলেও লম্বা কোর্স তারা একটি দুটি ক্লাস নিয়েই শেষ করে দেন। তথ্য উপাত্ত সহকারে ক্লাস না করিয়ে গোজামিলের আশ্রয় নিয়ে ক্লাস শেষ করে দেবার অভিযোগও দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এসব অনিয়মের বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিতে চাইলে অথবা মৌখিক অভিযোগ দিলে প্রশ্নপত্র কঠিন, কড়া করে খাতা দেখে রেজাল্ট কমিয়ে দেবার পরোক্ষ হুমকিও দেন তারা।
ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের সূত্রানুযায়ী, ওই বিভাগে ১১ জন অধ্যাপক, ৭ জন সহযোগী অধ্যপক এবং ৪ জন সহকারী অধ্যাপক নিয়ে মোট ২২জন শিক্ষক রয়েছেন। এদের মধ্যে, সহযোগী অধ্যাপক বশির আহমেদ, সহকারী অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম ও মোঃ আহসানুল হক শিক্ষাছুটিতে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন।
বিভাগের জোষ্ঠ্য শিক্ষকদের মধ্যে অধ্যাপক ড. এম. মনিরুজ্জামান ও অধ্যাপক ড. তানজীমা পারভীন বর্তমানে তাদের মেয়েদের বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং করানোর উদ্দেশ্যে ঢাকায় অবস্থান করছেন। ড. মনিরুজ্জামান মাঝে মাঝে ঢাকা থেকে এসে বিভাগে ক্লাস নিলেও ড. তানজিমা পারভীন একেবারেই আসছেন না। এছাড়া ড. তানজিমা পারভীন গত ৬ মাসের ও বেশি সময় ধরে ছুটি ছাড়া বিভাগে আসছেন না বলে জানা গেছে। তবে মনিরুজ্জামান ছুটি নিয়েছেন বলে জানা গেছে এবং ছুটি ছাড়া তিনি বিভাগের বাইরে কম থাকেন।
অধ্যাপক ড. ভূপেশ চন্দ্র রায় তিনি অধিকাংশ দিন বিশ^বিদ্যালয়ের বাইরে অবস্থান করেন। মাঝে মাঝে ক্যাম্পাসে এসে ক্লাস নেন। অধ্যাপক ড. মোঃ শামসুল আলম, বিজ্ঞান অনুষদের ডীন হওয়ায় বিভাগে উপস্থিত থাকার সুযোগ কম পান। ক্লাসেও কম অংশগ্রহন করেন। অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মামুন আল রশীদ, অধিকাংশ দিনই ঢাকার গাজীপুরে তার পৈত্রিক নিবাসে অবস্থান করেন। বিভাগে কম উপস্থিত থাকেন।
বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোঃ সাদিকুল ইসলামের একই অবস্থা। তিনি অধিকাংশ দিনেই ঢাকায় অবস্থান করেন। মাঝে মাঝে ক্লাস নেন। তবে তার বিরুদ্ধে কোন রকম তথ্য উপাত্ত ছাড়া গোজামিলের আশ্রয় নিয়ে ক্লাস নেবার অভিযোগ করেছে শিক্ষার্থীরা। বিভাগের আরেক সহযোগী অধ্যাপক মোসাঃ আয়শা আক্তার জামান দীর্ঘদিন ছুটি শেষে বিভাগে যোগদান করলেও নিয়মিত বিভাগে আসেন না।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪.৩০ করার পর থেকে অধিকাংশ শিক্ষকরাই দুপুর ২টার পর বিভাগে থাকছেন না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে বিভাগের শিক্ষক ও যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মোঃ আব্দুস সাত্তার পরপর দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন শেষে সম্প্রতি বিভাগে যোগদান করে ক্লাস নেয়া শুরু করেছেন। অন্যান্য শিক্ষকদের মধ্যে অধ্যাপক ড. অশোক কুমার চক্রবর্তী, অধ্যাপক ড. শরিফ মোঃ আল-রেজা, অধ্যাপক ড. মোঃ মিনহাজউল হক, অধ্যাপক ড. মোঃ হাফিজুর রহমান, সহযোগী অধ্যাপক ড. গাজী মোঃ আরিফজ্জামান খান, ড. মোছাঃ খোদেজা খাতুন, এস. এম. আব্দুর রাজ্জাক ও সহকারী অধ্যাপক কামরুন নাহার নিয়মিত ক্লাস পরীক্ষা নেন।
এদিকে বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মোঃ আতিকুর রহমানের বিরুদ্ধেও ক্লাস ফাঁকি, বিভাগে কম উপস্থিত থাকা, সকাল ৯টায় এসে দুপুর ১২টায় চলে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যেও ক্ষোভ বিরাজমান বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন ’ল্যাব শেষ হয়ে যাওয়ার ৫দিনের মাথায় আমাদের প্রথম বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। স্যাররা তড়িঘড়ি করে ক্লাস, ল্যাব শেষ করে দিলো। কিছুই শিখতে পারিনি। মুখস্ত করে রেজাল্ট করা ছাড়া আর কোনো উপায় দেখছি না।’
দ্বিতীয় বর্ষের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন,’অনেক সময় স্যাররা বলেন এ অধ্যায়টা সহজ তোমরা পড়ে নিও। অনেক সময় ক্লাসে আমরা কিছুই বুঝিনা। আবার বড় বড় অধ্যায় এক, দু দিনে শেষ করে দেন। আমরা নিরুপায় হয়ে বসে থাকি।’ তৃতীয় বর্ষের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, রুটিন মাফিক ক্লাস হয় না। কোনো কোনো আমরা ৫টা ক্লাস করি। কোন কোন দিন ক্লাসই হয় না।
চতুর্থ বর্ষের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের বিভাগের একেকজন শিক্ষককে প্রথম বর্ষ থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত সর্বোচ্চ ১০-১৫টি অধ্যায়ের ক্লাস নিতে হয় । অথচ সেখানেও তারা গোজামিলের আশ্রয় নেন। আমাদের ঠিকমত বোঝাতে পারেন না। এ বিষয়ে বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মোঃ আতিকুর রহমান বলেন, ”বিভাগের কোন সমস্যা নেই। আমাদের বিভাগ অনেক দ্রত এগোচ্ছে।”
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ