২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৮:৫০

স্পেনের অস্বস্তি বাড়িয়েছে কাতালান ভোট

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

ব্যালট ছিনতাই, ভোটকেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া, পুলিশি অভিযান, লাঠিচার্জ, রাবার বুলেট- এতো কিছুর পরেও ঠেকানো গেল না কাতালিয়ান গণভোট। শুক্রবার থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা কাতালানদের অনেকেই শেষ পর্যন্ত ভোট দিলেন। স্পেন সরকারের অস্বস্তি বহুগুণ বাড়িয়ে প্রদত্ত ভোটের ৯০ শতাংশই পড়েছে কাতালিনিয়ার স্বাধীনতার পক্ষে। স্পেনের প্রধানমন্ত্রী মারিয়ানো রাজয় তীব্র অসন্তোষ জানিয়ে বলেন, ‘এই গণভোটের কোনও বৈধতা নেই।’ অপরদিকে স্বাধীনতাপন্থীরা ঘোষণা করলেন, ‘কাতালিনিয়া স্বাধীন রাষ্ট্র হওয়ার অধিকার অর্জন করেছে।’

অর্থনৈতিক মাপকাঠিতে স্পেনের সবচেয়ে সমৃদ্ধ অঞ্চলগুলোর মধ্যে অন্যতম কাতালোনিয়া। কিন্তু স্পেনের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র হয়ে ওঠার দাবি ওই অঞ্চলের দীর্ঘ দিনের। কাতালান ক্ষোভ মূলত অর্থনৈতিক কারণেই, সাংস্কৃতিক পার্থক্যও রয়েছে। সব মিলিয়েই স্বাধীনতার দাবি প্রায় ৭৫ লাখ জনসংখ্যার স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলটিতে।

পরিসংখ্যান বলছে, কাতালোনিয়ায় স্পেনের মোট জনসংখ্যার ১৬ শতাংশের বাস। কিন্তু এক লাখ ১০ হাজার কোটি ইউরোর স্প্যানিশ অর্থনীতির ২০ শতাংশই এই স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের অবদান। বার্সেলোনা থেকে পরিচালিত কাতালোনিয়া সরকারের দীর্ঘ দিনের অভিযোগ, কাতালানদের তার প্রাপ্যটুকু দেয় না মাদ্রিদ। শুধু সরকার নয়, সাধারণ কাতালানরাও তাই মনে করেন।

স্পেনের জাতীয় সরকার কাতালোনিয়া থেকে যতটা পায়, ওই অঞ্চলের জন্য খরচ করে তার চেয়ে অনেক কম, অভিযোগ স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলটির বাসিন্দাদের। কাতালোনিয়ার পুলিশ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য-সহ বিভিন্ন বিভাগ সৈকত শহর বার্সেলোনা থেকেই নিয়ন্ত্রিত হয়। কিন্তু কর ব্যবস্থা, বৈদেশিক সম্পর্ক, প্রতিরক্ষা, বন্দর, বিমানবন্দর, রেল ব্যবস্থা মাদ্রিদ থেকে নিয়ন্ত্রিত হয়। কাতালোনিয়া থেকে আদায় হওয়া কর জমা পড়ে মাদ্রিদের রাজকোষে। সেখান থেকেই অন্য সব রাজ্যের মতো কাতালানদের জন্য অর্থ বরাদ্দ করে স্পেনের সরকার। এই ব্যবস্থা নিয়েই আপত্তি কাতালানদের।

উত্তর স্পেনের বাসকিউ এবং নাভারে প্রদেশ যে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা পায়, দীর্ঘ দিন ধরে কাতালোনিয়াও সেই রকম স্বাধীনতার দাবি করে আসছে। বাসকিউ এবং নাভারে প্রদেশ থেকে স্পেনের কেন্দ্রীয় সরকার কর আদায় করে না। প্রাদেশিক প্রশাসনই তা আদায় করে। কোন খাতে, কী ভাবে সে অর্থ ব্যয় হবে, তাও প্রাদেশিক প্রশাসনই স্থির করে।

বহু বছর ধরে জাতীয় অর্থনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসা কাতালোনিয়া এই অধিকার বারবার দাবি করেও পায়নি। শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং পরিকাঠামো উন্নয়নে যে পরিমাণ বরাদ্দ বার্সেলোনা চায়, মাদ্রিদ তাও দেয় না বলে অভিযোগ।

কাতালানরা সাংস্কৃতিক দিক থেকেও স্পেনের মূল ধারার চেয়ে কিছুটা আলাদা। ১৯৩৯ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত স্পেনে যে একনায়কতন্ত্রী শাসন চলেছিল, সেই সময়ে কাতালানদের সংস্কৃতি, পরম্পরা এবং ভাষাকে নানা ভাবে কোণঠাসা করার চেষ্টা হয়েছিল বলেও মাদ্রিদের বিরুদ্ধে বার্সেলোনার ক্ষোভ রয়েছে।

২০১০ সালে স্পেনের সাংবিধানিক আদালত এক সনদের অংশবিশেষ খারিজ করে দিয়েছিল। যে সনদে কাতালোনিয়াকে স্পেনের মধ্যেই একটি আলাদা জাতি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল এবং ওই অঞ্চলে আরও বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসনের কথা বলা হয়েছিল। আদালতের এই রায় কাতালানদের মধ্যে মাদ্রিদ বিরোধী ক্ষোভ আরও বাড়িয়ে তোলে। স্বাধীনতার দাবি আরও তীব্র হতে শুরু করে। ২০১৪ সালে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করে গণভোটের আয়োজন হয়েছিল কাতালোনিয়ায়।

স্প্যানিশ জাতীয় ফুটবলার জেরার্ড পিকেও কাতালোনিয়ার স্বাধীনতার পক্ষেও মুখ খুলেছেন। তিনি গণভোটে অংশও নিয়েছে। এজন্য তাকে যদি জাতীয় দল থেকে বাদও দেওয়া হয়, তা হলেও তিনি স্বাধীনতার দাবিতেই অনড় থাকবেন বলে জানিয়েছেন জনপ্রিয় ফুটবলার।

দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ

প্রকাশ :অক্টোবর ৩, ২০১৭ ১২:৪৯ অপরাহ্ণ