নিজস্ব প্রতিবেদক:
সরকারের নানা উদ্যোগ ও ব্যবসায়ীদের প্রতিশ্রুতির পরও তেমন প্রভাব নেই চালের দামের ঊর্ধ্বগতিতে। আমদানি ও পাইকারি পর্যায়ে আগের তুলনায় চালের দাম কমলেও খুচরা বাজারে সর্বত্র যৌক্তিক হারে কমেনি।
জানা গেছে, আমদানি পর্যায়ে কেজিপ্রতি মোটা ও মাঝারি মানের চালের দাম ৫-৭ টাকা কমলেও পাইকারি পর্যায়ে কমেছে মাত্র ৩-৪ টাকা। দাম কমার এ প্রবণতা খুচরা বাজারে আরও কম। এখানে দাম কমেছে মাত্র ২ টাকা।
অপরদিকে মিলাররা মিল গেটে প্রতিকেজি সরু চালে ২ টাকা দাম কমালেও সেটা খুচরা পর্যায়ে এসে কমেছে মাত্র ১ টাকা। তবে সেটাও সর্বত্র নয়। ফলে ভোক্তা পর্যায়ে চালের দাম এখনও সহনীয় পর্যায়ে নামছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীতে বড় আকারের ২২টি কাঁচাবাজারে এর কমবেশি প্রভাব পড়লেও মহানগরীজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা প্রায় অর্ধশত ছোট কাঁচাবাজারের অধিকাংশ স্থানে কমেনি দাম।
এর চেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, বিভিন্ন এলাকার পাড়া-মহল্লা বা গলির মোড়ের দোকানগুলোয় চালের দাম কমার প্রভাব একদমই নেই। যদিও মহানগরীতে বসবাসরত প্রায় দেড় কোটি জনগোষ্ঠী-ভোক্তার বেশিরভাগই বাজার করেন এলাকার দোকানগুলোয়। কিন্তু মহল্লার ভেতরে ছোট বাজার কিংবা অলি-গলির দোকানে সরকারি নজরদারি না থাকায় এসব খুচরা পর্যায়ের বিক্রেতারা এখনও আগের মতো বেশি দামে কেনার অজুহাত তুলছেন ক্রেতার কাছে। ফলে বাধ্য হয়েই ক্রেতারা বাড়তি দাম দিয়ে কিনছেন চাল।
বর্তমানে মিল গেটে সরু চালের দাম রাখা হচ্ছে মানভেদে প্রতি কেজি ৫৮-৬০ টাকা। পাইকারি পর্যায়ে এটি কেজিতে ৬০-৬২ টাকা। আর খুচরা বাজারে এ চালের দাম কেজিতে ৬৩-৬৫ টাকার মধ্যে এবং গলির মোড়ের বেশিরভাগ দোকানি কোনো সরু চাল ৬৫ টাকার নিচে বিক্রি করছেন না।
অন্যদিকে আমদানি পর্যায়ে মোটা চাল কেজিতে ৪০-৪১ টাকা এবং মাঝারি মানের চাল ৪৪-৪৮ টাকা হলেও পাইকারি বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে মোটা ৪৭-৪৮ টাকা এবং মাঝারি ৫৪-৫৬ টাকা।
এ প্রসঙ্গে রাজধানীর পাইকারি আড়ত বাবুবাজার-বাদামতলীর চাল ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও চাল আমদানিকারক মো. কাওসার আলম খান দাবি করেন, আমদানি পর্যায়, মিল গেট কিংবা পাইকারি পর্যায়ে দাম কমলেও তার প্রভাব খুচরা বাজারে সেভাবে পড়বে না। পড়ার সম্ভাবনাও নেই।
আমদানিকারকদের এলসি মূল্য ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের আমদানি পরিস্থিতি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ভারত থেকে আনা প্রতি কেজি চালের আমদানি মূল্য পড়ছে ৩৪ টাকা থেকে ৩৮ টাকা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারে চালের মূল্যে স্থিতিশীলতা ফেরাতে হলে মিলার পর্যায়ে দাম ২ টাকা কমানো যথেষ্ট নয়।
তারা মনে করছেন, চালের দাম মিল গেটে প্রতিকেজিতে আরও ৩ থেকে ৪ টাকা কমানো উচিত। তাহলে আমদানি করা চালের সঙ্গে বেসরকারি পর্যায়ে দেশে মজুদ করা চালের বাজার মূল্যে একটা সামঞ্জস্য তৈরি হবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাস্কিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কেএম লায়েক আলী বলেন, মিল গেটে চালের দাম এর চেয়ে বেশি কমানো সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, ধানের দাম বেশি হলে চালের দামও বেশি পড়বে। ধানের দাম যে হারে কমেছে, সেই অনুপাতে আমরা চালের দামও কমিয়েছি। লোকসান দিয়ে তো আর ব্যবসা করব না।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ