নিজস্ব প্রতিবেদক:
বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার ক্ষুদ্রকাঠী গ্রামের মৃত আইয়ুব আলী সরদারের স্ত্রী মোসা. মনোয়ারা বেগমের (৭০) তিন পুত্র পুলিশ কর্মকর্তা এবং এক কন্যা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা। অথচ ভাগ্যের নির্মম পরিহাসের শিকার হয়ে আজ দু’মুঠো আহারের জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভিক্ষা করছেন তিনি।
জানা গেছে, কৃষক আয়ুব আলী সরদার ও মনোয়ারা বেগম তাদের ৬ সন্তানের প্রত্যেককে অভাব-অনটনের মধ্যে কম-বেশি শিক্ষিত করে গড়ে তুলেছেন। তাদের মধ্যে ৩ সন্তান এএসআই ও একমাত্র কন্যা শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত। অন্য ২ সন্তানের একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, অন্যজন ইজি বাইক ভাড়ায় চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন।
কিন্তু গত ২০১৪ সালের পহেলা অক্টোবর আইয়ুব আলী সরদার মারা যাবার পর মনোয়ারা বেগম বাধ্য হয়ে শেষ বয়সে এসে দুটো ভাতের জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ভিক্ষা করছেন।
জানা গেছে, ৪-৫ মাস আগে ভিক্ষা করতে গিয়ে পা ফসকে পড়ে যান মনোয়ারা বেগম। ওই ঘটনায় তার কোমরের হাড় ভেঙে যায়। ওই সময় থেকে আজ পর্যন্ত বাবুগঞ্জে স্টিল ব্রিজের পশ্চিম প্রান্তের একটি খুপড়ি ঘরে বিনা চিকিৎসায় অর্ধাহারে মানবেতর জীবন যাপন করছেন তিনি।
মনোয়ারা বেগমের পুত্র ইজিবাইক চালক গিয়াস উদ্দিন জানান, আমি সামান্য আয়ের মানুষ কোনো রকম খেয়ে পরে বেঁচে আছি, আমার সাধ্যমতো মাকে চিকিৎসা দেবার চেষ্টা করছি। এখন আমিও সহায়-সম্বলহীন।
তাই বৃদ্ধ মা আজ বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুপথযাত্রী। আমার তিন ভাই পুলিশ অফিসার। তারা তাদের স্ত্রী সন্তান নিয়ে অন্যত্র থাকেন। তারা মায়ের কোনো খোঁজ-খবর নিচ্ছেন না। ভরণ-পোষণের দাবিতে মনোয়ারা বেগম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর গত বছর একটি আবেদন করেন।
জেলা পরিষদের সদস্য ফারজানা বিনতে ওহাব গতকাল সোমবার সকালে ডাক্তার নিয়ে বাবুগঞ্জের ক্ষুদ্রকাঠি গ্রামে মনোয়ারা বেগমের জীর্ণ কুটিরে হাজির হন। ডাক্তার পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তাকে হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন। স্থানীয় সংসদ সদস্যের নির্দেশক্রমে ইউএনও ও স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীরা গতকাল সোমবার তাকে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ