নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাংলাদেশে শরণার্থী হয়ে আসা রোহিঙ্গাদের নিবন্ধন কার্যক্রমকে স্বাগত জানিয়েছে মিয়ানমারের সংখ্যালঘু মুসলিম জনগোষ্ঠী। বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধিত হওয়ার ফলে রোহিঙ্গা জাতি হিসেবে তাদের পরিচয় নিশ্চিত হচ্ছে। তবে চলমান কার্যক্রমে তথ্য বিভ্রাটের কথা জানিয়েছেন নিবন্ধিত রোহিঙ্গারা। তারা বলছেন, নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় প্রথম দিকে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি ব্যবহার করা হলেও পরবর্তীতে তা আর হচ্ছে না। ফলে নিবন্ধিতরা মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিক কিনা তা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়ছে।
এই বিষয়ে কুতুপালং ক্যাম্পের একটি রোহিঙ্গা স্কুলের শিক্ষক আবু তাহের টেলিফোনে জানান, গত ১১ সেপ্টেম্বর থেকে এই নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়েছে, যা এখনো চলমান রয়েছে। ধীরগতিতে চললেও এই কার্যক্রমের ফলে এরই মধ্যে ৪ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা নিবন্ধিত হয়েছেন। কিন্তু প্রথম দিকে তাদের পরিচয়পত্র দেখে রোহিঙ্গা হিসেবে শনাক্ত করা গেলেও এখন আর তা সম্ভব হচ্ছে না।
নিবন্ধিত বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা জানিয়েছেন, কার্ডগুলোর একেকটাতে একেক রকম তথ্য দেয়া হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে রোহিঙ্গাদের যে কার্ড দেয়া হয়েছে তার শিরোনাম ছিল ‘রোহিঙ্গা পিপল রেজিষ্ট্রেশন’। কার্ডে নিবন্ধিত ব্যক্তির নিজের নাম, বাবার নাম, মায়ের নাম, জন্মতারিখ, ধর্ম, জন্মস্থান, দেশ, জাতীয়তা, নিবন্ধনের তারিখ ও ঠিকানা উল্লেখ করা হয়। তারমধ্যে জন্মস্থান হিসেবে ‘মিয়ানমার’ এবং জাতীয়তা ‘রোহিঙ্গা’ উল্লেখ করা হয়।
কিন্তু পরবর্তীতে বেশ কিছু নিবন্ধন কার্ডের কোথাও ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটির উল্লেখ করা হয়নি। সেসব নিবন্ধন কার্ডের শিরোনাম ছিল ‘মিয়ানমার ন্যাশনাল রেজিষ্ট্রেশন’। তাতে জাতীয়তা ক্যাটাগরিতে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দের জায়গায় ‘মিয়ানমার’ লেখা হয়। ফলে পুরো কার্ডের কোথাও ‘রোহিঙ্গা’ শব্দের উল্লেখ পাওয়া যায়নি। ফলে বিভ্রান্তিতে পড়ে গেছেন রোহিঙ্গারা।
কার্ড পাওয়া রোহিঙ্গারা আশঙ্কা করছেন, মিয়ানমার সরকার তাদেরকে ‘রোহিঙ্গা’ না বলে বাঙালি হিসেবে বিশ্বের কাছে তুলে ধরার যে অপচেষ্টা করছেন, এই নিবন্ধনে তারই প্রতিফলন ঘটছে। কেননা রোহিঙ্গা জাতি হিসেবে বিশ্বের বুকে পরিচিত হতে চাইলেও নিবন্ধনের কোথাও তার উল্লেখ থাকছে না।
এছাড়াও শুধুমাত্র ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী রোহিঙ্গাদের নিবন্ধন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শিশু-কিশোরদের নিবন্ধনের আওতায় আনা হয়নি। ফলে বাংলাদেশে আসা প্রকৃত রোহিঙ্গার পরিসংখ্যান জানা সম্ভব হচ্ছে না।
কার্যক্রম শুরুর আগে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধন করা হবে। এবং যতদিন রোহিঙ্গা শরণার্থীরা বাংলাদেশে প্রবেশ করতে থাকবে, এই কার্যক্রমও অব্যাহত থাকবে। সেসময় আরও বলা হয়, নিবন্ধনের সময় ১০ আঙ্গুলের ছাপ ও ছবি নেওয়া হবে। তাদের মিয়ানমারের ঠিকানা, নাম, বাবা-মা’র নামসহ নানা বিষয়ে তথ্যও নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার জেলা পরিসংখ্যান অফিসের উপ-পরিচালক মো. ওয়াহিদুর রহমানকে ফোন করা হলে তিনি রোববার দুপুরে সাংবাদিকদের জানান, তিনি জরুরী বৈঠকে আছেন। পরে এ বিষয়ে কথা বলবেন।
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ