স্বাস্থ্য ডেস্ক:
বাংলাদেশে এখন প্রায় আড়াই কোটি মানুষ অপুষ্টিতে ভুগছে। গত ১০ বছরে অপুষ্টিজনিত সমস্যায় ভোগা মানুষের সংখ্যা বেড়েছে ৭ লাখ। দেশে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে স্থূলতার প্রবণতা দেখা গেছে। তবে দেশে শিশু ও নারীর পুষ্টি পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। গতকাল শুক্রবার প্রকাশিত ‘বিশ্বে খাদ্যনিরাপত্তা ও পুষ্টি পরিস্থিতি ২০১৭’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের পুষ্টি পরিস্থিতির এই তথ্য দেওয়া হয়েছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও), জাতিসংঘর কৃষি উন্নয়নবিষয়ক সংস্থা ইফাদ, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি), জাতিসংঘ শিশু সংস্থা (ইউনিসেফ) ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) যৌথভাবে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।
এফএওর প্রধান কার্যালয় ইতালির রাজধানী রোম থেকে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত এক বছরে বিশ্বে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা বেড়েছে ৩ কোটি ৮০ লাখ। বর্তমানে বিশ্বে ৮১ কোটি ৫০ লাখ মানুষ ক্ষুধার্ত অবস্থায় ঘুমাতে যায়। বিশ্বের সব কটি দেশের মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা ও পুষ্টি পরিস্থিতি তুলে ধরতে প্রতিবছর প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। তবে বাংলাদেশের কত লোক খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে বা ক্ষুধার্ত, সে তথ্য প্রতিবেদনে নেই।
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক নাজমা শাহীন বলেন, ‘বেশ কয়েক বছরে দেশের খাদ্য ও পুষ্টি পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক বন্যা, হাওর ও পাহাড়ে বিপর্যয় এবং রোহিঙ্গা পরিস্থিতির কারণে অবস্থার অবনতি ঘটতে পারে। এ জন্য খাদ্যনিরাপত্তা, নারী-শিশুসহ সব বয়সী মানুষের পুষ্টির ব্যাপারে সরকারকে বিশেষ মনোযোগী হতে হবে।’ প্রতিবেদনে ২০০৫ সালের তথ্যের সঙ্গে ২০১৬ সালের তথ্যের তুলনা করা হয়েছে। তাতে দেখা যায়, বাংলাদেশের ৫ বছরের কম বয়সী খর্বাকৃতির শিশু ৪৫ শতাংশ থেকে কমে ৩৬ দশমিক ১ শতাংশ হয়েছে। কৃশকায় শিশু এখন ১৪ শতাংশের কিছু বেশি। ১৮ বছরের বেশি বয়সী মানুষের মধ্যে স্থূল হওয়ার প্রবণতা বেড়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৪-০৬ সালে বাংলাদেশে অপুষ্টির শিকার মানুষ ছিল ২ কোটি ৩৭ লাখ। এখন ২ কোটি ৪৪ লাখ, যা মোট জনসংখ্যার ১৫ দশমিক ১ শতাংশ। ১০ বছর আগে এটি ছিল ১৬ দশমিক ৬ শতাংশ। অপুষ্টির শিকার মানুষের মোট সংখ্যা বাড়লেও জনসংখ্যার অনুপাতে কমেছে। তবে অপুষ্টিজনিত সমস্যায় ভোগা মানুষের সংখ্যা কমার হার দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে ধীর। ভারতে অপুষ্টির শিকার মানুষের হার ২০০৬ সালে ছিল ২০ দশমিক ৫ শতাংশ, যা ২০১৬ সালে কমে হয় ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ। নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ ও মিয়ানমারে অপুষ্টিজনিত সমস্যায় ভোগা মানুষের হার কমছে বাংলাদেশের তুলনায় দ্রুতগতিতে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) বিশেষ ফেলো এম আসাদুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির কারণে মানুষ আগের চেয়ে বেশি খাদ্য পাচ্ছে, আয় বেড়েছে, এটা ঠিক। তবে কী ধরনের খাদ্য পাচ্ছে, তা ভালোমতো পর্যালোচনা করার দরকার। সরকার অপুষ্টি মোকাবিলায় কী ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে, তা পূর্ণ মূল্যায়ন করতে হবে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বজুড়ে ২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত পুষ্টি ও খাদ্যনিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছিল। কিন্তু গত এক বছরে পরিস্থিতির বেশ অবনতি হয়েছে। মূলত বিশ্বজুড়ে সংঘাত বেড়ে যাওয়া এবং বন্যা-খরার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে খাদ্যনিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এসব কারণে বিশ্বের খাদ্য উৎপাদন ও সাধারণ মানুষের কাছে খাদ্য প্রাপ্তির পরিমাণ কমেছে। এর প্রভাব হিসেবে পুষ্টিহীনতা বেড়ে গেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত এক বছরে বিশ্বে অপুষ্ট মানুষের সংখ্যা ৭ কোটি ৭৭ লাখ থেকে বেড়ে ৮ কোটি ৮১ লাখ ৫০ হাজার হয়েছে। বিশ্বে বর্তমানে ৫ বছরের কম বয়সী ১৫ কোটি ৫০ লাখ শিশু খর্বাকৃতির, ৫ কোটি শিশু কৃশকায়, যাদের ২ কোটি ৭৬ লাখ দক্ষিণ এশিয়ার। গতকাল ইতালির রোমে যে সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়, সেখানে বলা হয়েছে, গত এক যুগে বিশ্বে সংঘাত ও অশান্তি ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। যেসব স্থানে সংঘাত ও অশান্তি বেড়েছে, সেখানকার শিশুরা সবচেয়ে বেশি অপুষ্টির শিকার। এই প্রতিবেদন প্রমাণ করে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) পূরণ করতে হলে শান্তি প্রতিষ্ঠায় আরও মনোযোগী হতে হবে।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি