২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ৭:৫৪

বাংলাদেশিরা নিজ প্রার্থীদেরই ভোট দেননি

দৈনিক দেশজনতা ডেস্ক:

কথা ছিল নিউইয়র্ক প্রাইমারি নির্বাচনে বাংলাদেশি অধ্যুষিত দুই এলাকার দু’জন প্রার্থী তৈয়েবুর রহমান (টি রহমান) এবং হেলাল এ শেখকে নির্বাচিত করতে ৫০ শতাংশ বাংলাদেশি ভোটারই যথেষ্ট ছিলেন।কিন্তু, বাস্তবে সেটি হয়নি। বাংলাদেশিরা ভোটকেন্দ্রে গেছেন ঠিকই, তবে স্বদেশী প্রার্থীকে ভোট দেননি। ফলে আশা জাগিয়েও নিউইয়র্ক নগর পরিচালনায় বাংলাদেশি কোনো প্রতিনিধিত্ব তৈরি হচ্ছে না এবারও। গত ১২ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক সিটি করপোরেশন নির্বাচনের জন্য ডেমোক্রেট চূড়ান্ত প্রার্থী নিশ্চিত করার প্রাথমিক ধাপ প্রাইমারি নির্বাচনে জ্যামাইকা থেকে বাংলাদেশি প্রার্থী তৈয়েবুর রহমান পেয়েছেন ১৬ শতাধিক ভোট। তবে তার প্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান কাউন্সিলর ররি ল্যান্সম্যান প্রায় সাড়ে চার হাজার ভোট পেয়েছেন।

হতাশাগ্রস্ত টি রহমান তার নির্বাচনী অফিসে তাৎক্ষণিক ভোটার সমাবেশে আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমাদের কমিউনিটি এখনও ঐক্যবদ্ধ নয়। আমাদেরই লোকজন ভোট দিয়েছেন ররি ল্যান্সম্যানকে। খোদ আমার নির্বাচনী কেন্দ্রেও ল্যান্সম্যান বেশি ভোট পেয়েছেন। আর কমিউনিটির তথাকথিত যারা নেতা তারা তো প্রকাশ্যে ল্যান্সম্যানের পক্ষে ভোট চেয়েছেন, প্রচারণা চালিয়েছেন, এমনকি পত্রিকায় বিজ্ঞাপনও দিয়েছেন।’তিনি বলেন, ‘এ থেকে বোঝা যায়, তারা চায় না, এখানে বাংলাদেশি কমিউনিটি নগর পরিচালনায় অংশ নিক। এখন লক্ষাধিক বাংলাদেশি ভোটারের বসবাস জ্যামাইকা আর কুইন্সে। এই সংখ্যা হয়তো আরও বাড়তেই থাকবে। কিন্তু, সারাজীবন বাংলাদেশিরা অন্যদের দালালি করবেন, নিজেদের নেতা নিজেরা নির্বাচিত করতে পারবেন না।’

টি রহমানের এই আক্ষেপের পেছনে লুকিয়ে রয়েছে হতাশা। তিনি বলে আসছিলেন, ঐতিহাসিকভাবেই প্রাইমারি নির্বাচনে এখানকার ভোটাররা মাঠে নামেন না। হয়তো ১০-১২ শতাংশ ভোটার ভোটকেন্দ্রে যান। সেখানে বাংলাদেশি ভোটার আছে প্রায় ৭ হাজারের মতো। অর্ধেক বাংলাদেশি ভোটার যদি নির্বাচনের দিন মাঠে যান আর বাংলাদেশি কোনো প্রার্থীকেই চূড়ান্ত প্রার্থী বানাতে ভোট দেন তাহলেই তিনি জয়ী হবেন প্রাইমারিতে। সেটি সম্পন্ন হলেই কেবল মূল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রশ্ন আসত। সেই বিশ্বাস থেকেই প্রাইমারিতে জয়ের ব্যাপারে বেশ আগ্রহী ছিলেন টি রহমান। কিন্তু, বাস্তবতা তার পক্ষে আসেনি। বাংলাদেশিরাই তাকে ভোট দেননি বলে তিনি নিজে স্বীকার করেছেন। এর কারণ হতে পারে, জ্যামাইকায় বাংলাদেশিদের যে প্রভাব প্রতিপত্তি তার কেন্দ্রে অনেকখানি জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টার। এই মসজিদকেন্দ্রিক কমিউনিটি সেন্টারটি বাংলাদেশিদের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত। এখানকার বেইজমেন্টে দেশি সিনিয়র সেন্টার নামক একটি সিনিয়র সিটিজেন কেয়ার সেন্টার আছে। যেখানকার সক্রিয় সদস্য প্রায় শতাশিক বাংলাদেশি অভিবাসী নাগরিক। এই সেন্টারটি ররি ল্যান্সম্যান প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করেছেন তার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে।

এর বাইরে জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারকে কেন্দ্র করে এখানে প্রকাশ্যে ঈদের বড় নামাজ আদায়ের জন্য মাঠ ব্যবস্থাপনার সুযোগ করে দিয়েছেন তিনি। এই মসজিদই একাধিকবার মেয়র বিল ডি ব্লাজিওকে জ্যামাইকাতে নিয়ে আসে এবং বাংলাদেশি কমিউনিটিকে যোগসূত্র স্থাপনে তার ভূমিকা ছিল।

এইসব মিলিয়ে সেখাকার স্থানীয় কমিউনিটি নেতা এবং ডেমোক্রেট দলীয় সমর্থকরা ররি ল্যান্সম্যানের পক্ষেই প্রকাশ্যে কাজ করেছেন। নিজেদের টাকা খরচ করে তাকে নির্বাচিত করতে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়েছেন।এ বিষয়ে স্থানীয় ডেমোক্রেট কর্মী এবং লেবার সংগঠন অ্যাসাল’র প্রধান মাফ মিজবাহ উদ্দীনের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়।

তিনি বলেন, আমাদের যে প্রার্থী, তিনি অতি অল্প সময় নির্বাচনী মাঠে ছিলেন। মাত্র ৪/৬ মাসের প্রচারে কেউ নির্বাচনে জয়ী হয় না। তাকে দীর্ঘদিন ধরে কমিউনিটি এবং অন্যান্য কমিউনিটির সঙ্গে যোগসূত্র স্থাপনে কাজ করতে হতো। সেটি তিনি করেননি, তাই তার জয় হয়নি বলে আমার মনে হয়। তবে তার এই নির্বাচনে এগিয়ে আসা অন্যদের জন্য অবশ্যই আশা যোগাবে, যেন ভবিষ্যতে এই ধারা অব্যাহত থাকে। জ্যামাইকার নির্বাচনী ডিস্ট্রিক্ট ২৪ থেকে যতটা না জয়ের সম্ভাবনা ছিল তার চেয়েও বেশি সম্ভাবনা ছিল ওজোনপার্ক সংলগ্ন নির্বাচনী ডিস্ট্রিক্ট ৩২ থেকে। হেলাল এ শেখ এ নিয়ে ৩ বার নির্বাচনী মাঠে আছেন। এবার তিনি অনেক দিন ধরেই গণসংযোগ করেছেন। একাধিক ফান্ড রেইজিংও করেছেন। তবে, ভোট পেয়েছেন প্রাইমারিতে প্রদত্ত ভোটের মাত্র ৩০ শতাংশ। তার নির্বাচনী এলাকাতেও বাংলাদেশিরা তাকে ভোট দিয়েছেন বলে ফলাফল থেকে মনে হচ্ছে না। সব মিলিয়ে আরও একবার হতাশায় নিমজ্জিত হলো নিউইয়র্ক নগর পরিচালনায় বাংলাদেশিদের লালিত স্বপ্ন। অবশ্য নির্বাচনে পরাজয় হলেও এবার একাধিক বাংলাদেশির মাঠে সক্রিয় থাকাকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন অনেকেই। এর বাইরে মূলধারা থেকে যেসব প্রার্থী নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন, তাদের প্রত্যেকেই বাংলাদেশি কমিউটিনিকে আস্থায় নিতে নজর দিয়েছেন বেশি বেশি। তাই সব মিলিয়ে এবারের নিউইয়র্ক সিটি নির্বাচনের প্রাইমারির ভোটাভুটিকে স্বাগতই জানিয়েছেন বাংলাদেশিরা। কেন না, এই নির্বাচন তাদের নির্বাচনী মাঠে সক্রিয় করেছে। হয়তো অচিরেই অথবা আগামী নির্বাচনেই মিলতে পারে কোনো কোনো সফল ও যোগ্য বাংলাদেশির মুখ। সেই প্রত্যাশাতেই থাকবেন বাংলাদেশি আশাবাদীরা।

দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ

প্রকাশ :সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৭ ১১:৪৪ পূর্বাহ্ণ