নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাখাইন থেকে জীবন বাঁচাতে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নারীদের ওপর দালাল ও লম্পটদের কালো হাত বিস্তার লাভ করে চলেছে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও রাখাইন বৌদ্ধদের হামলার মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের একটি বড় অংশই অবিবাতিত তরুণী। এসব তরুণীর মধ্যে অনেক সুন্দরী তরুণীও রয়েছে। তারা সবাই বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পসহ ভিন্নভিন্ন জায়গায় নানাভাবে ঠাঁই নিয়েছেন। প্রাণ বাঁচাতে নিজ দেশ ছেড়ে পালিয়ে আসলেও এসব তরুণীরা শান্তিতে নেই। প্রতিনিয়ত তাদের তাড়া করছে এ দেশীয় লম্পট ও দালালদের কালো হাত। এ নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন রোহিঙ্গা তরুণীরা। নিরাপত্তাহীনতা তাদের পরিবারকেও ভাবিয়ে তুলেছে বলে জানা গেছে।
যেসব মা অথবা বাবার কাছে সুন্দরী তরুণী রয়েছে তারা চরম নিরাপত্তা সঙ্কটে ভুগছেন। মা-বাবার চেয়েও বেশি আতঙ্কে রয়েছে সুন্দরী তরুণীরা। পালিয়ে আসা তরুণীদের মধ্যে অধিকাংশরই কোনো না কোন আত্মীয় হত্যার শিকার হয়েছেন। এই নিয়ে তারা শোকের সাগরে ভাসছে। তার উপর লম্পটদের হানা তাদেরকে অসহায় করে তুলেছে।
জানা যায় পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সাহায্য-সহযোগিতায় কাজ করছেন স্থানীয় লোকজন। এছাড়াও দূর-দূরান্ত থেকেও লোক গিয়ে অসহায় রোহিঙ্গা সহযোগিতা করছেন। কিন্তু কিছু স্থানীয় দুষ্টু লোক রোহিঙ্গাদের সাথে নিষ্ঠুর আচরণ করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তারা রোহিঙ্গাদের গরু-ছাগলসহ নানা জিনিসপত্র লুট করছে। একইভাবে সুন্দরী রোহিঙ্গা তরুণীদের উপর কুনজর দিয়েছে স্থানীয় কিছু লম্পট শ্রেনীর লোক ও পতিতার দালালরা। তারা সুন্দরী রোহিঙ্গা তরুণীদের টার্গেট করে নানাভাবে কুপ্ররোচনা দিচ্ছে। ভাগে না পেয়ে অপহরণ পর্যন্ত করছে। অন্যদিকে পতিতার দালাল চক্রও টার্গেট করেছে সুন্দরী রোহিঙ্গা তরুণীদের। তারা অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে সুন্দরী তরুণী ও তাদের পরিবারকে ফুঁসলাচ্ছে। এতে নিরাপত্তা সঙ্কট ভুক্তভোগীদের কুরে কুরে খাচ্ছে।
মিয়ানমারের বুচিদং টমবাজার থেকে পালিয়ে এসে কুতুপালং অস্থায়ী রোহিঙ্গা বস্তিতে ঠাঁই নিয়েছে তরুণী হামিদা। তার বাবাকে মিয়ানমারের সেনারা গুলি করে হত্যা করেছে। মা ও এক ছোট বোনের সাথে ৪ দিন আগে সে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। কিন্তু বাংলাদেশে এসেও স্বস্তিতে নেই তরুণী হামিদা ও মা আলেয়া খাতুন। সুন্দরী হওয়ায় কিছু লম্পট তরুণীটিকে ঘিরে রয়েছে। একই সাথে দালালও তাদের আশেপাশে ঘুরঘুর করছে। গত তিনদিন ধরে নানাভাবে তরুণী হামিদা ও তার মাকে ফুঁসলাচ্ছে লম্পট ও দালালরা। নানাভাবে লোভও দেখাচ্ছে। তারা তরুণী হামিদাকে কুপ্রস্তাবও দিয়েছে। বিনিময়ে টাকা দিবে বলে প্রলোভন দিচ্ছে। শুধু লম্পট যুবকেরা নয়, কয়েকজন দালালও হামিদার মাকে টাকার প্রস্তাব দিয়েছে। তরুণী হামিদাকে তারা হোটেলে রাখবে। বিনিময়ে অনেক অনেক টাকা দেবে। হামিদা বলেন, ‘বাবাকে চোখের সামনে মরতে দেখেছি। নিজের প্রাণ বাঁচাতে চরম আতঙ্ক নিয়ে পালিয়ে এসেছি। কিন্তু এখানে এসেও শান্তি নেই। প্রতিনিয়ত লম্পটদদের কালো হাত তাড়া করছে। এই আতঙ্কের কারণে একটুও শান্তি পাচ্ছিনা। মা আলেয়া খাতুন বলেন, ‘নিজ দেশ ছেড়ে জান বাঁচাতে পালিয়ে এসেছি। সুন্দরী মেয়েকে নিয়ে এখানে এসেও বিপদ পিছু রয়েছে। আমার খুব ভয় হচ্ছে, না জানি মেয়েটা হাতছাড়া হয়ে যায়। তাই রাতদিন মেয়েকে নিজ হাতে ধরে রেখেছি।’
প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তায় পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি নিয়োজিত রয়েছে। কিন্তু পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির সংখ্যা খুব অপ্রতুল হওয়ায় নিরাপত্তার প্রকট সঙ্কট বিরাজ করছে। নিরাপত্তার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন বাড়ানোর পাশাপাশি নজরদারিও বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল।
এ ব্যাপারে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার ড. একেএম ইকবাল হোসেন বলেন, ‘পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তার জন্য উখিয়া ও টেকনাফে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য দেয়া হয়েছে। তারা সার্বক্ষণিক নজরদারি রাখছে। তারপরও দুষ্টু লোকদের খোঁজ পেলে আটক করে পুলিশের খবর দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’ জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণের প্রশাসন যেমন কঠোর তেমনিভাবে তাদের নিরাপত্তাও দেয়া হচ্ছে। এর জন্য পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির বিপুল সদস্য নিয়োজিত হয়েছে। তারপরও নিরাপত্তা সঙ্কট তৈরি হলে যে কেউ নিরাপত্তা বাহিনী বা প্রশাসনকে জানাবেন। আমরা ব্যবস্থা নেবো।’
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ