নিজস্ব প্রতিবেদক:
কুমিল্লায় এলপি গ্যাস সিলিন্ডারে গ্রাহক প্রতারণার নয়া কৌশলের খবর পাওয়া গেছে । সিলিন্ডারের মুখ সিল করা নেই। শুধুমাত্র প্লাষ্টিক ক্যাপে মুখ আটকানো। ওজন ১২ কেজি নিশ্চিত হয়ে দোকান থেকে একটি যমুনা এলপি গ্যাস সিলিন্ডার কিনলেন কুমিল্লা জেলার নাঙ্গলকোট উপজেলার গ্রাম্য হাটের চা দোকানী আবদুল লতিফ।
কয়েকদিন ব্যবহার করার পর দেখা গেলো সিলিন্ডার থেকে আর গ্যাস বের হচ্ছে না। এতে তার সন্দেহ হয়। স্থানীয় ঢালুয়া বাজারে ক্রয়কৃত দোকানে সিলিন্ডার নিয়ে গেলে ওজন দিয়ে দেখা যায়, তখনও সিলিন্ডারে ৩ কেজির মত গ্যাস রয়েছে। কিন্তু চুলা জ্বলছে না কেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে দোকানি তাকে জানান, ‘ওই ৩ কেজি তরল গ্যাস নয়, সিলিন্ডারের নিচে পানি রয়েছে।’ আপনার ভাগ্য খারাপ বলে দোকানি তাকে সান্ত¡না দেয়। দোকানি জানালেন, এভাবে বেশ কিছুদিন ধরে সিলিন্ডারে গ্যাসের সাথে পানি পাওয়া যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে তাদের বেশ ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুমিল্লায় এক লাখের বেশি এলপি গ্যাসের গ্রাহক রয়েছে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) গ্যাস সরবরাহ কম থাকায় জেলার অধিকাংশ বাজার দখল করে আছে বেসরকারি এলপি গ্যাসের কোম্পানিগুলো। বাজারে বেসরকারি কোম্পানির মধ্যে বসুন্ধরা, টোটাল, যমুনা, ওমেরা, পদ্মা, বিএম এবং ইউনিভার্সেল নামে ৭টি কোম্পানির গ্যাস পাওয়া যায়। খুচরা বিক্রেতা ও ক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বসুন্ধরা, ইউনিভার্সেল ও যমুনা এলপি গ্যাস সিলিন্ডারে পানি পাওয়া যাচ্ছে। একটি সিলিন্ডারে ১২ কেজি গ্যাসের স্থানে ৩ থেকে ৫ কেজি পানি ভরা থাকলে একজন গ্রাহককে অন্তত আড়াইশ’ থেকে ৫শ’ টাকা গচ্ছা দিতে হচ্ছে।
ক্রেতাদের নিকট থেকে পাওয়া তথ্যমতে, ১০ শতাংশ সিলিন্ডারে পানি পাওয়া যাচ্ছে। এভাবে গ্রাহকরা প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। ভিতরে পানি থাকায় নির্ধারিত ১২ কেজি ওজন ঠিকই থাকে। সিলিন্ডারের মুখ প্লাষ্টিক ক্যাপে বন্ধ করা থাকে। কিন্তু যে সিলিন্ডার এক থেকে দেড় মাস চলার কথা, তা যখন ১০-১৫ দিন চলার পর অচল হয়ে পড়ে তখনই গ্রাহকদের মাঝে সন্দেহ দেখা দেয়। নাঙ্গলকোট সদরের বাসিন্দা গৃহবধূ বেগম জানান, ‘আগে একটি সিলিন্ডারে দেড় মাস রান্না চলত। বেশ কিছুদিন ধরে এক সিলিন্ডার গ্যাসে ১৫-২০ দিনও রান্না করা যাচ্ছে না।’
অধিকাংশ এলপি গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রেতার অভিযোগ, পদ্মা এলপি গ্যাসের পরিবেশকরা কারসাজি করে গ্যাসের সিলিন্ডারে পানি ও ভেজাল গ্যাস রিফিল করে বাজারজাত করছেন। তিনি জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার পদুয়ার বাজারে অবস্থিত ইউনিভার্সেল গ্যাস রিফিল সেন্টার থেকে পানিসহ ভেজাল গ্যাস রিফিল করে বাজারজাত করছেন।
গত ২২ আগস্ট পদ্মা এলপি গ্যাসের পরিবেশক শাকিল যমুনাসহ অন্যান্য কোম্পানীর সিলিন্ডারে গ্যাস রিফিল করে আনার পথে যমুনা এলপি গ্যাসের পরিবেশক বিসমিল্লাহ এন্টারপ্রাইজের মালিক হাজী মোস্তাফিজুর রহমানের লোকজন ঢাকা মেট্রো ন-১৮-৩৭৮২ নাম্বারের একটি পিকআপ ভ্যান তল্লাশি করে ভেজাল রিফিল করা ১২টি যমুনা সিলিন্ডার উদ্ধার করে। এরপর বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমাংসার কথা বলে থামাচাপা দেয়া হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত পদ্মা এলপি গ্যাসের পরিবেশক মো. শাকিল তার গাড়িতে ১২টি যমুনা এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার উদ্ধারের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আসলে ওই সিলিন্ডারগুলো আমাদের লেভার (শ্রমিক) তুলে নেয়। কিন্তু কেন নিল তা আমি জানি না। এছাড়াও তিনি তার কোম্পানীসহ অন্যান্য কোম্পানীর সিলিন্ডার ইউনিভার্সেল গ্যাস রিফিল সেন্টার থেকে রিফিল করার বিষয়টিও স্বীকার করেছেন তিনি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে যমুনা এলপি গ্যাসের পরিবেশক বিসমিল্লাহ এন্টারপ্রাইজের সত্ত্বাধিকারী হাজী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সিলিন্ডার বায়ু ও পানিশূন্য করার পরই তাতে গ্যাস ভরা হয়। তিনি অভিযোগ করে বলেন, অসাধু একটি চক্র যমুনার সিলিন্ডার ব্যবহার করে এ ধরনের অনৈতিক কাজ করছেন।
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (জেএম) মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, গ্যাস সিলিন্ডারে পানি পাওয়ার অভিযোগ তাদের নলেজে এসেছে। আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার কথা চিন্তা করছি।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ