নিজস্ব প্রতিবেদক:
কোরবানি ঈদের আগে যখন মানুষ ঢাকা ছাড়তে শুরু করে তখনই পাইকারি বাজারে সবধরনের চালের দাম বাড়ে। মোটা ও চিকন চালে মানভেদে এক-দুই টাকা দাম বাড়ে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। ঈদের আগে খুচরা বাজারে এই দাম বৃদ্ধির প্রভাব না পড়লেও এখন পড়ছে। সবধরনের চালের দামই বেড়েছে।
গত মাসে চালের শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ করা হয়। এর আগে গত জুনে শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়। প্রথম দফায় শুল্ক কমানোর পরে খাদ্য অধিদপ্তর চালের দাম কেজিতে ছয় টাকা কমবে বলে আশা করেছিল। অবশ্য তখন দুই টাকা কমেছিল। দ্বিতীয় দফায় শুল্ক কমালেও দাম কমেনি, বরং বেড়েছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ভারত, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম থেকে আমদানি করা চালের দর তেমন পরিবর্তন হয়নি। দেশে আসার পরে আমদানি চালের দর পড়ছে ৩৪ থেকে ৩৬ টাকা। এরপরেও ক্রেতাদের তা ৪৩ থেকে ৪৭ টাকায় কিনতে হচ্ছে।
শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মিনিকেট চালের প্রতিটি বস্তায় দাম বেড়েছে ১৫০ টাকা। আর ব্যবসায়ীরা তা খুচরায় বিক্রি করছেন ৬২ টাকা কেজি দরে।
অন্যান্য চালের মধ্যে মোটা স্বর্ণা প্রতি কেজি ৪২ থেকে ৪৪ টাকা, পারিজা ৪৩ থেকে ৪৪ টাকা, বিআর-২৮ ৫০ থেকে ৫২ টাকা, সাধারণ মানের নাজিরশাইল ৫০ থেকে ৫২ টাকা, উন্নত মানের নাজিরশাইল ৫২ থেকে ৫৬ টাকা, পাইজাম ৪৮ থেকে ৫০ টাকা, কাটারিভোগ ৭২-৭৩ টাকা এবং পোলাও চাল (পুরনো) ১০০ টাকা, (নতুন) ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, ধানের দাম বেড়ে যাওয়ায় মিলগুলো চালের দাম বাড়িয়েছে। এছাড়া পরিবহন ব্যয় বেড়ে গেছে। ঈদের আগেই রাজধানীর বাজারে চালের দাম কেজি প্রতি পাইকারিতে দুই টাকা এবং খুচরায় তিন টাকা বেড়েছে। ঈদের পরেও গত তিন দিন ধরে এই বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। মিল মালিকরা ৫০ কেজির প্রতি বস্তায় মিনিকেট চালের দাম ১০০ টাকা বাড়িয়েছেন। মাঝারি ও মোটা চালের দামও একই হারে বাড়িয়েছেন মিল মালিক ও আমদানিকারকরা।
প্রতি বছর ঈদুল আজহার আগে পরিবহন সংকটের কারণে ভাড়া বেড়ে যায়। এ কারণে ব্যবসায়ীরা আগে ভাগেই প্রস্তুতি নিয়ে বেশিরভাগ চাল মোকাম থেকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। জানা গেছে, এবারও বেশিরভাগ ব্যবসায়ী আগেই চাল এনেছেন। তবে দাম বাড়ানোর কারণ হিসেবে বাড়তি পরিবহন ব্যয়ের অজুহাত দেখাচ্ছেন। এর আগে তারা বন্যার কারণে দাম বাড়িয়েছিলেন।
অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা জানান আমদানি বাড়লেও ভারত থেকে বেশি দামে চাল আনতে হচ্ছে। মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের জাহান রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী মো. শাহ আলম স্বপন জানান, সপ্তাহের ব্যবধানে সব চালের দর বেড়েছে প্রতি বস্তায় (৫০ কেজি) ১০০ টাকা। আমদানিকারক ও মিল মালিকরা দর বাড়িয়ে দিয়েছেন।
রাজধানীর কলতাবাজার এলাকার পাইকারি চাল ব্যবসায়ী আজাদ হোসেন বলেন, ‘ধানের মৌসুম শেষ। এখন বাজারে ধান পাওয়া যাচ্ছে না। যা আছে তা প্রতিদিন দাম বাড়ছে। আগামী নভেম্বরের আগে নতুন ধান আসবে না। এজন্য ধানের দাম বেড়েছে। তাছাড়া ঈদের আগে পরে ছুটির কারণে ধান ও চাল আনা-নেয়ায় বেশি ভাড়া দিয়েও ঠিকমতো ট্রাক পাওয়া যায় না। এতে পরিবহন ব্যয় বেশি হচ্ছে। তাছাড়া বন্যায় উত্তরাঞ্চলে চালকলে উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। এসব কারণে চালের দাম বেড়েছে।’ এছাড়াও রাজধানীর মোহাম্মদপুর, কলতাবাজার, চকবাজার এলাকার কয়েকজন পাইকারি ব্যবসায়ী সামনে চালের দাম আরও বাড়তে পারে বলে জানান তারা।
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ