২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | বিকাল ৫:৩৩

আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব স্বাক্ষরতা দিবস

নিজস্ব প্রতিবেদক:

স্বাক্ষরতা অর্জন করি, ডিজিটাল বিশ্ব গড়ি’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সারাদেশে আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব স্বাক্ষরতা দিবস। তবে পটুয়াখলীর প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে এখনও নিরক্ষরতার হার উদ্বেগজনক। এই পরিস্থিতিতে স্বাক্ষরতা অর্জনে সরকার বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিলেও মাঠ পর্যায়ে তার অনেকটাই রয়ে গেছে কাগজে কলমে। পরিস্থিতি উত্তোরণে পিছিয়ে পড়া নিরক্ষর জনগোষ্ঠীকে দীর্ঘ মেয়াদী কর্মমুখী শিক্ষাদানের পরামর্শ দিচ্ছেন মাঠ পর্যায়ে কর্মরতরা। জানা গেছে, সরকারি হিসাবে সারাদেশে স্বাক্ষরতার হার বর্তমানে ৭২.৩ শতাংশ হলেও গণস্বাক্ষরতার অভিযানের হিসাবে দেশে বর্তমানে ৫৪ শতাংশ মানুষ স্বাক্ষর জ্ঞান সম্পন্ন। এ অবস্থায় পটুয়াখালী জেলার বিশেষ করে প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ এখনও অক্ষর জ্ঞান অর্জন করতে পারেনি। এর মধ্যে রয়েছে খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষও। এসব মানুষ এখনও ‘টিপসই’র উপর নির্ভর করেন। যার ফলে সমাজে যেমন বিভিন্নভাবে তারা নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত, তেমনি নানা ভাবে প্রতারিতও হচ্ছে।
তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রালয়ের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে ১৯৯১ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো মোট ছয়টি প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের ৮০ লাখ নিরক্ষর মানুষকে স্বাক্ষরতার আওতায় এনেছে। তবে পটুয়াখালী জেলা শহরের এই দফতরের কার্যক্রম চলছে খুড়িয়ে খুড়িয়ে। অফিসে মোট জনবল সংখ্যা তিনজন হলেও অফিস প্রধান বর্তমানে তিন জেলার দায়িত্ব পালন করছে। এ কারণে ব্যাহত হচ্ছে সাক্ষরতা অর্জনের লক্ষ্যমাত্র। এদিকে সরকার সারাদেশে ১৫ থেকে ৪৫ বছর বয়সী মানুষের স্বাক্ষরতা অর্জনের জন্য ‘মৌলিক স্বাক্ষরতা’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নিলেও অর্থের বিনিময়ে এই প্রকল্পে নাম সর্বস্ব কিছু এনজিওকে কাজ পাইয়ে দেয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। ফলে এই প্রকল্পের সফলতা নিয়েও অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী ইউনিয়নের পূর্ব বাহেরচর গ্রামের তুলশি রানী চক্রবর্তী বলেন, ‘গরীব ঘরে জন্ম নেওয়ায় বাপ-মা ল্যাহাপড়া (লেখাপড়া) হরাইতে পারে নাই। নিজের নামডাও ল্যাখতে হারতাম না। বিভিন্ন জায়গায় স্বাক্ষর দিতে না পাইরা টিপসই দিতাম।’

পটুয়াখালীর বাউফলের ১৫নং চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের চরমেয়াজনের বাসিন্দা মনিরুল মৃধা বলেন, ‘এহন (এখন) কাম-কাইজ করলেও হিসাব-নিকাশ জানতে ওয়। ল্যাহাপড়ার এত গুরুত্ব, আগে বুঝলে শত কষ্ট হলেও ল্যাহাপড়া হিকতাম (শিখতাম)।’ পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান বলেন, স্বাক্ষর-জ্ঞানহীন মানুষদের জন্য বিশেষ প্রকল্প প্রনয়ণ ও সঠিকভাবে বাস্তবায়ন প্রয়োজন। পটুয়াখালী শিশু অধিকার রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব মাহফুজা ইসলাম  বলেন, স্বাক্ষর জ্ঞানহীন এসব মানুষে নিজেরাই শুধু শিক্ষার আলো থেকে দূরে থাকছেন না, তাদের সন্তানরাও শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ফলে তারা অধুনিক এই সভ্যতার যুগে অশিক্ষা আর দারিদ্রতাকে পুঁজি করে বেড়ে উঠছে। ২০২১ সালের মধ্যে দেশে শতভাগ স্বাক্ষরতা অর্জন ও কর্মমুখী শিক্ষার মাধ্যমে দারিদ্র্যতা দূরীকরণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। আর এ ক্ষেত্রে উপকূলীয় জনপদের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর বিষয়টি মানুষকে মাথায় রেখে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শ দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।

দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ

প্রকাশ :সেপ্টেম্বর ৮, ২০১৭ ১১:১০ পূর্বাহ্ণ