নিজস্ব প্রতিবেদক:
শেরপুরে অবাধ ও নির্বিচারে চলছে বক নিধনের মহোৎসব। সাম্প্রতিক বন্যায় তলিয়ে যাওয়া ফসলি মাঠ থেকে পানি সরে গেলে জমিতে আটকা মাছ ও জলজ ছোট প্রাণির সন্ধ্যানে হাজার হাজার বক নামছে সেখানে। আর তাতে অসাধু পাখি শিকারিরা বক নিধনের উৎসবে মেতেছে।
স্থানীয় লোকজন জানান, এবারের বন্যায় জেলার নকলা, নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদীর দুই শতাধিক গ্রামের প্রায় ৪০ হাজার একর জমির ফসল পানির নিচে তলিয়ে যায়। বর্তমানে পানি নামতে শুরু করেছে। ওই সব অঞ্চলের ফসলি জমিতে বেশ কিছু মাছ ও ছোট জলজ প্রাণি ধানক্ষেতের আইলে আটকা পড়ে।
নকলার কৃষক তাবেজ উদ্দিন, হাওলা শেখ, মজিদ, নারু মিয়াসহ আরো অনেকে জানান, সবচেয়ে বেশি বক শিকার হচ্ছে নকলার উরফা, চন্দ্রকোণা, বানেশ্বরদী, টালকী, পাঠাকাটা, চরঅষ্টধর, গৌড়দ্বার, গনপদ্দী, নকলা ইউনিয়নের বিভিন্ন খাল-বিল, নদীর তীরবর্তী এলাকার ফসলি জমিতে।
বক শিকারের কৌশল সম্পর্কে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ফসলের মাঠে কলা ও চাও গাছের পাতা দিয়ে বিশেষভাবে তৈরি ঘর বানিয়ে সেখানে শিকার করা হয় বক। সকালে ওই ঘরের ভেতরে বসে শিকারিরা পালা বক উড়িয়ে মুক্ত বকগুলোকে আকৃষ্ট করে। পরে মুক্ত বক এসে ওই ঘরের উপরে বসতেই ভেতর থেকে বকের পা টেনে ধরে শিকার করা হয়। তাছাড়া বিষটোপ, চিকন প্লাস্টিকের সুতার মাধ্যমে তৈরি ফাঁদ দিয়ে এবং ছোট মাছ বা ব্যাঙ বড়শিতে গেঁথে টোপ ফেলেও শিকার করা হয় বক। এভাবে অবাধে বক শিকারের মহোৎসব চলছে।
এই প্রতিবেদকের কথা হয় বক শিকারি হাসমত, গফুর ও রতনের সঙ্গে। তারা জানান, প্রতিজন দিনে ৫ থেকে ১০টি বক শিকার করতে পারেন। এখন পর্যন্ত তারা হাজারো বক শিকার করেছেন বলে জানান।
ফেরুষা গ্রামের বক শিকারি জাহাঙ্গীর, আলমগীর ও ঝাডুর ভাষ্য, তারা প্রতিটি বক ৯০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি করেন। তবে শীত মৌসুমে দাম আরো বেশি পাওয়া যায়।
বক ক্রেতা আফজাল, তালহা, ওসমান, লিটন জানান, বক শিকার না করতে শিকারিদের তারা বোঝালেও কোনো ফল হয় না। আর তারা বক কিনছেন, কারণ তারা না কিনলেও বকগুলো অন্য জায়গায় বিক্রিা হবে। তাই তারা কিনে নিচ্ছেন।
বক শিকারের ফলে প্রকৃতির খাদ্যচক্রের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে বলে জানান পরিবেশবাদী সংগঠন শাইনের নির্বাহী পরিচালক মুগনিউর রহমান মণি। তিনি বলেন, বক অপকারী পোঁকা খায় এবং উপকারী পোঁকাকে নিরাপদে রাখে। এ ছাড়া এর বিষ্ঠা ফসলি মাঠের উপকারে আসে। বক সফল নষ্ট করে খাদ্য সংগ্রহ করে না। যে কারণে জলজ উদ্ভিদেরও কোনো ক্ষতি হয় না। পরিবেশে বকের অবদান অপরিসীম।
মুগনিউর রহমান বলেন, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর অনেক স্থানেই খাদ্য সংগ্রহের জন্য বক মাঠে নামছে এবং অসাধু শিকারিরা তা নিধনযজ্ঞে নেমেছে। তাতে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে। তার সংগঠনের পক্ষ থেকে বক শিকারিদের আটক করা হচ্ছে এবং তাদের পরিবেশগত ও আইনগত দিক বোঝানো হচ্ছে বলে জানান তিনি। তিনি মনে করেন, বক শিকারিদের রুখতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ করা খুবই জরুরি।
এই অসময়ে বক শিকার করা হচ্ছে এমন কোনো তথ্য তার জানা ছিল না বলে জানান নকলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খান আব্দুল হালিম সিদ্দিকী। তবে এখন থেকে পুলিশ প্রশাসন নজরদারি করবে। তিনি বলেন, শুধু বক নয় শিকার নিষিদ্ধ কোনো পাখি ধরতে দেওয়া হবে না।
এ সম্পর্কে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজীব কুমার সরকার জানান, বন্য পশু ও পাখি শিকার করা আইনত দ-নীয় অপরাধ। নিষিদ্ধ পশু পাখি শিকারি সে যেই হোক না কেন তাকে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না।
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ