নিজস্ব প্রতিবেদক:
বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দশম কারামুক্তি দিবসের আলোচনা সভা থেকে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সরকার উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ হয়েছে দাবি করে অবিলম্বে বিষয়টি জাতিসংঘে তোলার দাবি জানিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বুধবার বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে মহানগর উত্তর বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এই দাবি জানান।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘ আজকে রোহিঙ্গা সমস্যায় ছুটে আসছে ইন্দোনেশিয়া থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রী, ছুটে আসছে তুরস্কে থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রী, ইউনাটেড নেশনস বানী দিয়েছে অবিলম্বে এটা বন্ধ করুন। আমাদের সরকারের এখন পর্যন্ত কোনো দূত কোথাও যায়নি, আমাদের সরকার এখন পর্যন্ত জাতিসংঘে প্রসঙ্গটি উপস্থাপন করেনি।”
‘‘আমরা আজকে এই সভা থেকে জোর দাবি জানাচ্ছি যে, অবিলম্বে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য জাতিসংঘে তোলা হোক, এটা সমাধান করবার ব্যবস্থা করা হোক।”
সরকারের ব্যর্থতার সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ আজকে যখন মিয়ানমার থেকে লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা হিন্দু-মুসলমান তাদেরকে যখন মিয়ানমারের সেনাবাহিনী গুলি করে গণহত্যা চালিয়ে বিতাড়িত করছে, তারা যখন আমাদের এখানে আশ্রয় প্রার্থনা করছে তখন এই সরকার তাদেরকে আশ্রয় দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এই সরকার ব্যর্থ হয়েছে কুটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে মিয়ানমাকে বাধ্য করতে যে এই রোহিঙ্গাকে দেশে ফিরিয়ে সন্মানে তাদের জীবনের জীবনযাপন করতে দিতে হবে, তাদেরকে জীবনের অধিকার দিতে হবে-এই সরকার এই কাজগুলো করেনি।”
‘‘ হিন্দু না মুসলমান তারা আমরা জানি না, তা আমরা বলতে চাই না। কান্ডারি ডুবিছে মানুষ মোর, মানুষ মারা যাচ্ছে, মানুষ মরছে তাকে রক্ষা করতে হবে। সেইদিকে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।”
সরকার আবারো একতরফা নির্বাচনের পায়তারা করছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘‘ আওয়ামী লীগ আজকে তাদের জবর-দখল করা শাসন বন্দুক-পিস্তল দেখিয়ে ভিন্নমতকে স্তব্ধ করে দিতে চায়, বিরোধী দলকে তারা স্তব্ধ করে দিতে চায়। তারা আবারো একটা একতরফা নির্বাচনের পায়তারা করছে। তারা ভাবছে যে, ২০১৪ এর ৫ জানুয়ারির মতো আরেকটা নির্বাচন করবে, আবার ক্ষমতায় আসবে। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, এদেশের মানুষ ২০১৪ এর ৫ জানুয়ারি মতো একতরফা নির্বাচন হতে দেবে না এবং সেই নির্বাচন এদেশের মানুষ মেনে নেবে না।”
একাদশ নির্বাচন ‘অবশ্যই নির্দলীয় নিরপেক্ষ সহায়ক সরকার’ এর অধীনে এবং ‘একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায়’ হতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
গুম হওয়া ও জঙ্গি আস্তানা প্রসঙ্গ
গত কয়েক সাপ্তাহে ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক কল্যাণ পার্টির মহাসচিব এম এম আমিনুর রহমানসহ দুই ব্যবসায়ী গুম হওয়ার ঘটনা তুলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘ এই সরকারের জনগনের কাছে কোনো জবাবদিহিতা নাই, কাউকে মেরে ফেললেও কোনো জবাবদিহিতা করতে হয় না, কাউকে খুন করলেও জবাবদিহি করতে হয় না, কাউকে গুম করলেও জবাবদিহি করতে হয় না।”
‘‘ আর এখন তো আবার নতুন করে আপনার ইয়ে জঙ্গিদমন অভিযানে চলছে, সেই জঙ্গিদমন অভিযানে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পাঁচ বছরের বাচ্চা, ৬ মাসের বাচ্চা, ১৬ মাসের বাচ্চা পর্যন্ত কেউ রেহাই পাচ্ছে না। এই একটা অবস্থা।”
এই অবস্থা থেকে উত্তরণে দলের নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ এই সরকার যতদিন ক্ষমতায় থাকবে ততই বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্থ হবে, ততই বাংলাদেশ আরো নিচের দিকে যাবে, ততই বাংলাদেশের মানুষের নিরাপত্তা থাকবে না। তাই আমরা মহানগরের নেতৃবৃন্দে কাছে অনুরোধ থাকবে- আপনারা মহানগরের প্রতিটি অঞ্চলকে, প্রতিটি পাড়া-মহল্লাকে একটি দূর্গে পরিণত করুন। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ নয় শুধু, গণতন্ত্রের পক্ষে যেন একটা শক্তি হয়ে দাঁড়াতে পারে, দূর্গ হতে পারে, সেইভাবে তুলে ধরুন, আমরা সফল হতে পারবো।’’
মহানগর উত্তর বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি মুন্সি বজলুল বাসিত আনজু‘র সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আহসানউল্লাহ হাসানের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু, ওলামা দলের সভাপতি হাফেজ আবদুল মালেক, মহানগর দক্ষিনের সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার, মহানগর উত্তরের সহ-সভাপতি আব্দুল আলী নকি, যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে ইতালীয় নাগরিক তাভেল্লা সিজার হত্যা মামলার আসামী মালয়েশিয়ায় অবস্থান নেয়া মহানগর উত্তরের সভাপতি এম এ কাইয়ুম মোবাইল ফোনের মাধ্যমে নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন।
দৈনিক দেশজনতা /এন আর