এম,এ,জাফর লিটন
উল্লাপাড়া (সিরাজগঞ্জ) :
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সিরাজগঞ্জ-৪ (উল্লাপাড়া) আসনে ক্ষমতাসীন দল আ’লীগ ও দেশের বৃহত্তম দল বি,এন,পি’র সম্ভাব্য প্রার্থীরা প্রচারনা চালালেও দেশের বৃহত্তম ইসলামপন্থী দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী উল্লাপাড়ার রাজনীতিতে এগিয়ে চলছে নিরব গতিতে। সিরাজগঞ্জের জামায়াতের দূর্গ হিসেবে খ্যাত এই উল্লাপাড়ার রাজনীতির একক ও অপ্রতিদ্বন্দি শক্তি এখন জামায়াত। যেমন রয়েছে ভোটার তেমনি রয়েছে সুশৃঙ্খল কর্মী বাহিনী। ১৯৯১ থেকে ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে না জিতলেও নিকটতম প্রতিদ্বন্দিতা গড়ে প্রমান করেছে উল্লাপাড়ার রাজনীতিতে কেন অপরিহার্য জামায়াত ? ফলে ২০১৯ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল আলহাজ্ব মাওলানা রফিকুল ইসলাম খাঁনকে এম,পি হিসেবে বিজয়ী করে উল্লাপাড়া আসনে স্থায়ী শক্তি হতে চায় জামায়াত। সেই সাথে সকল দমন পীড়নের দাঁতভাঙ্গা জবাব দিতে সময়ের অপেক্ষায় দলটির কর্মী সমর্থকরা। স্বাধীনতার পর থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে জামায়াত যতটা দমন পীড়নের শিকার হয়েছে ঠিক ততটাই আঁচ লেগেছে উল্লাপাড়ার রাজনীতিতে। জামায়াতের দূর্গ বলে কথা। উল্লাপাড়া জামায়াতের নেতা থেকে শুরু করে কর্মী সমর্থক কেউ বাদ যায়নি,নাশকতার মামলা থেকে। ফলে ২০০৮ সালের পর থেকে অদ্যবধি ধরপাকড়,গণগ্রেফতার নির্যাতনের সব ষ্টিম রোলার চলেছে উল্লাপাড়ার জামায়াত নেতা-কর্মীদের উপরে। তারপরেও যতই নির্যাতন বেড়েছে ততই যেন ইস্পাত পাথরের মত উল্লাপাড়ায় শক্তিশালী হচ্ছে জামায়াত। প্রকাশ্যে তৎপরতা চালাতে না পারলেও আড়ালে আবডালে ঠিকই কার্যক্রম চালাচ্ছে দলটি। এমনকি গত ৯ বছর ধরে নিজের ঘরে পর্যন্ত ঠিকমত ঘুমাতে পারছেনা উল্লাপাড়ার জামায়াত নেতাÑকর্মীরা। উপজেলা ও শহর এবং ইউনিয়ন পর্যায়ের জামায়াত শিবিরের নেতৃবৃন্দের বেশিরভাগ একাধিকবার কারাবরণ করেছে। সূত্র জানায়, ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে মরহুম এ্যাড, আবু বকর সিদ্দিক জামায়াত প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িপাল্লা প্রতীক নিয়ে মাত্র ১৫০০ ভোটে হেরে যান। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনেও বিপুল ভোট পেয়ে আবু বক্কার সিদ্দিক ৩য় স্থান লাভ করে। ২০০১ সালের নির্বাচনে মাওলানা রফিকুল ইসলাম খাঁন জামায়াত ্রপার্থী হতে চাইলে ৪দলীয় জোট নেতৃবৃন্দের মধ্যস্থতায় পরবর্তী নির্বাচনে খাঁন সাহেবকে প্রার্থী করার আশ্বাস দিয়ে বি,এন,পি প্রার্থী সাবেক এম,পি আকবর আলী মনোনয়ন পান। সে নির্বাচনে জামায়াতের বিশাল ভোট ব্যাংক আকবর আলীকে দিলে তিনি ২য় বারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। নির্বাচনের পর থেকেই আকবর আলী জামায়াতসহ নিজ দলের লোকজনকে অবহেলা করে একলা চলো নীতি গ্রহণ করায় অনেকটা কোনঠাসা হন তিনি। অপরদিকে ঢাকা মহানগর জামায়াতের আমীর হিসেবে রফিকুল ইসলাম খাঁন এলাকার দল,মত নির্বিশেষে সবার জন্য কাজ করা, সমাজসেবা মূলক কাজে অংশ নেয়া আর মানুষের বিপদে আপদে পাশে দাঁড়ানোর কারণে নিজের ইমেজ তৈরী করতে সমর্থ হন । সর্বশেষ ২০০৮ সালের নির্বাচনে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আসনটি জামায়াত নেতা মাওলানা রফিকুল ইসলাম খাঁন’কে ছেড়ে না দিয়ে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে অবস্থানে অটল থাকেন তিনি। ফলে বি,এন,পি’র একটি অংশও জাম্য়াাত নেতা রফিকুল ইসলামের সাথে ঐক্যবদ্ধ হন ফলে ঐ নির্বাচনে দাঁড়িপাল্লা প্রতীক নিয়ে এককভাবে ৯৮ হাজার ভোট পেয়ে আ’লীগ প্রার্থী শফিকুল ইসলামের কাছে ২০ হাজার ভোটে হেরে নিজের অবস্থান ও জনপ্রিয়তার জানান দেন রফিকুল ইসলাম খাঁন। অপরদিকে এম আকবর আলী ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে ২০ হাজারের অধিক ভোট পান। ঐ নির্বাচনে আকবর আলী প্রার্থী না হলে রফিকুল ইসলাম খাঁন নিশ্চিত এম,পি নির্বাচিত হতেন। ২০১১ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও জামায়াত মনোনীত প্রার্থী হিসেবে দূর্গনগর ইউনিয়নে ১৪ হাজার ভোট পেয়ে আফছার আলী ও সলপ ইউনিয়নে শহিদুল ইসলাম ৬ হাজার ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের একতরফা নির্বাচনে সারা দেশের ন্যায় জামায়াতও এখানে প্রার্থী না দিলেও উপজেলা নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে বর্তমান উপজেলা জামায়াতের আমীর অধ্যাপক শাহজাহান আলী প্রার্থী হন। তাঁর বিজয় নিশ্চিত দেখে নির্বাচনের আগে তাঁকে আটক করা হয়। ফলে কারাগার থেকে জামায়াত প্রার্থী শাহজাহান ১ লক্ষ ৯ হাজার ভোট পেয়ে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর ৪ দফা কারারুদ্ধ হয়ে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয় থেকে বরখাস্ত হন। তিনি হাইকোর্টে রিট করলেও তা খারিজ হয়ে যায়। এ ব্যাপারে উল্লাপাড়া উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা জামায়াতের আমীর অধ্যাপক শাহজাহান আলী জানান, উল্লাপাড়ার রাজনীতিতে জামায়াত একটি শক্তিশালী দল। আর জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল এখানকার কৃতী সন্তান আলহাজ্ব মাওলানা রফিকুল ইসলাম খাঁন উল্লাপাড়া বাসীর আশা আকাঙ্খার প্রতীক। ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠিত হলে কিম্বা সুযোগ পেলে রফিকুল ইসলাম খাঁনকে বিজয়ী করতে ভূল করবেনা উল্লাপাড়াবাসী। মিষ্টিভাষি,আকর্ষনীয় ব্যক্তিত্ব রফিকুল ইসলাম খাঁন উল্লাপাড়ার অপমার জনগনের বিস্বস্ত বন্ধু। উল্লাপাড়ার উন্নয়ন, অগ্রগতির এই নায়ককে আগামীতে জাতীয় সংসদে দেখতে মুখিয়ে আছে এই জনপদের অযুত জনতা। সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে শুধু সময়ের অপেক্ষা । তবে এটা বলাই যায়, উল্লাপাড়ার রাজনীতির প্রধান শক্তি জামায়াত সময়ের বিবর্তনে বদলে দেবে রাজনীতির হিসেব নিকেষ,বদলে দেবে নির্যাতিত মজলুম মানুষের ভাগ্য। তবে ২০১৯ সালের নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে সবাইকে।