নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজধানীর গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালের নার্স শারমিন সুলতানা শিকুর মৃত্যুর ঘটনায় তার প্রেমিকের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে মামলা হয়েছে।
গত ১১ জুলাই শিকু মারা যাওয়ার পর পুলিশ একটি অপমৃত্যুর মামলা করলেও ঘটনার দেড় মাসের বেশি সময় পর গত ৩১ অগাস্ট ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে মামলা করেন তার বাবা মুন্সী শরীফ হোসেন।
মামলায় শিকুর কথিত প্রেমিক নকিয়া মোবাইল কোম্পানির কর্মী মো. মেহেদী হাসান (২৬) ছাড়াও তার বাবা মকবুল হোসেন, মা সেলিনা হোসেন এবং বোন সাদিয়া হাসানকে আসামি করা হয়েছে।
ওইদিনই শুনানি নিয়ে ঢাকার মহানগর হাকিম মো. খুরশীদ আলম দুইটি মামলা তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে গুলশান থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন।
শিকুর বাবার মামলায় বলা হয়েছে, গত ১১ জুলাই হাসপাতালে কর্মরত থাকার সময় শিকু বিষাক্ত ইনজেকশনের মাধ্যমে আত্মহত্যা করেন। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্বজনদের খবর দেয়। পুলিশ মৃতদেহের সুরতহাল করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।
মামলার আরজিতে মুন্সী শরীফ হোসেন বলেছেন, ঘটনার তাৎক্ষণিকতায় বিবেচনাবোধ লোপ পাওয়ায় পুলিশের করা অপমৃত্যু মামলায় তিনি স্বাক্ষর করেছিলেন। কিন্তু পরে তিনি বুঝতে পারেন, এটি স্বাভাবিক আত্মহত্যা নয়। তার মেয়েকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে, বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েও অন্যায়ভাবে প্রত্যাখ্যান করা হয়। যার প্রতিক্রিয়ায় শিকু মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে।
আরজিতে আরও বলা হয়, সাভার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ার সময় একই বর্ষের শিক্ষার্থী মেহেদীর সঙ্গে পরিচয় হয় শিকুর। উচ্চ মাধ্যমিক পাসের পর উইনাইটেড হাসপাতালে নার্সিংয়ে ভর্তি হন শিকু। পরে পাস করে ওই হাসপাতালেই গত ১২ মার্চ চাকরি নেন শিকু।
মেহেদী বিভিন্ন সময় শিকুর কাছ থেকে টাকা ধার নিয়েও ফেরত দেননি অভিযোগ করে বলা হয়, সম্পর্কের এক পর্যায়ে মেহেদী শিকুকে জানান, তার বাবা-মা কোনো নার্সকে ছেলের বউ হিসেবে মেনে নেবে না।
শিকুর বাবা বলেন, “আমার মেয়ের গায়ের রং নিয়েও খোঁচা দিয়ে কথা বলত মেহেদী। আর প্রায়ই টাকা ধার নিত। কিন্তু উল্টো বলত আমরা নাকি গরীব। আমাদের কাছে আমার মেয়ের ও মেহেদীর ফেইসবুকে কথাবার্তার রেকর্ড রয়েছে।”
শিকুর ভাই মুন্সী সালাউদ্দিন শরীফ বলেন, উচ্চ মাধ্যমিকের পর সরকারি তিতুমীর কলেজে ভর্তি হন মেহেদী। সে সময় মেহেদী থাকতেন নর্দায়। পরে তিনি যমুনা ফিউচার পর্কের একটি রেস্তোরাঁয় কাজ পান।
মেহেদীর গ্রামের বাড়ি পাবনার সাঁথিয়া থানার পিড়াহাটি পশ্চিমপাড়া গ্রামে। আর শিকুদের বাড়ি মানিকগঞ্জের সিংগাইর থানার কাশিমপুর গ্রামে।
মামলার তদন্তের বিষয়ে গুলশান থানার ওসি (তদন্ত) সালাউদ্দিন জানান, তিনি এখনো আদালতের আদেশ এবং বাদীর কোনো আরজি বা নথিপত্র হাতে পাননি।