২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সন্ধ্যা ৭:৪৮

খাদ্য ও পানির জন্য রোহিঙ্গাদের হাহাকার

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বাংলাদেশে সদ্য আসা রোহিঙ্গারা তীব্র খাদ্য সংকটে পড়েছেন। সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টের দুর্গম স্থানগুলোতে অবস্থান করা রোহিঙ্গাদের মধ্যে এই সংকট এখন প্রতি মুহূর্তেই তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, নতুন আসা রোহিঙ্গাদের জন্য এখনো ত্রাণ তৎপরতা শুরু হয়নি। গত ২৫ আগস্ট থেকে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসা শুরু করে। বিভিন্ন সূত্রে তথ্য অনুযায়ী এক সপ্তাহে প্রবেশ করা রোহিঙ্গার সংখ্যা ইতোমধ্যে এক লক্ষ ছাড়িয়ে গেছে। শুরুর দিকে তারা কুতুপালং ও নয়া পাড়ার নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত শিবির গুলোতে অবস্থান করলেও এখন শিবিরগুলোতে স্থান সংকুলান না হওয়ায় সীমান্ত এলাকার বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করছেন তারা।

টেকনাফের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদ হোসেন সিদ্দিক জানান, বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করা রোহিঙ্গাদের মধ্যে সরকারি, বেসরকারি কিংবা আন্তর্জাতিক কোনো সংস্থাই ত্রাণ দেয়া শুরু করেনি। রোহিঙ্গাদের মধ্যে ত্রাণ দিতে হলে জেলা প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে আসতে হবে। এখানকার বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করা রোহিঙ্গারা কিভাবে দিন যাপন করছে সেই ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই।

নিবন্ধিত শিবিরগুলোতে প্রবেশ করা রোহিঙ্গাদের জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশন ইউএনএইচসিআরের পক্ষ থেকে কিছু ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হলেও তা যথেষ্ট নয়। মোহাম্মদ শফি নামের নিবন্ধিত ক্যাম্পের একজন বাসিন্দা জানিয়েছেন, নতুন আসা রোহিঙ্গাদেরকে কিছু কিছু সহায়তা দেয়া হলেও তা একেবারেই অপ্রতুল। পুরানো বাসিন্দারা তাদের জন্য বরাদ্দ রেশন থেকে যতটুকু পারছেন নতুনদের সঙ্গে ভাগ করে নিচ্ছে। ইউএনএইচসিআরের বাংলাদেশ অফিসের মুখপাত্র জোসেফ ত্রিপুরা বলেন, নিবন্ধিত ক্যাম্পে আসা রোহিঙ্গাদেরকে সীমিত আকারে তাবু, খাদ্য ও ঔষধ দেয়া হয়েছে। নতুন শরণার্থীদের জন্য কাজ করতে স্পটে আমাদের জনবল বাড়ানো হচ্ছে। অস্থায়ী লোকবলও নিয়োগ দেয়া হয়েছে। অনিবন্ধিত ক্যাম্পে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে খাদ্য, ঔষধ ও পানির সংকট বেশি। সেখানে পুরানো বাসিন্দারা নিজেদের খাবার একবেলা করে নতুনদের দিয়ে দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন কুতুপালং অনিবন্ধিত ক্যাম্পের স্বেচ্ছাসেবক মোহাম্মদ আনোয়ার। ক্যাম্পে খাদ্য ও পানির সংকট বাড়ছে, দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া না হলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে।

এই ক্যাম্পে সদ্য আসা রোহিঙ্গা আবদুছ সালাম বলেন, এখানে সাত সদস্যের পরিবার নিয়ে এসে পূর্ব পরিচিত একজনের সাথে ঘর শেয়ার করছি। তারা প্রথম দুইদিন খেতে দিয়েছে। এখন তারাও আর পারছেনা। ফলে প্রতিদিন একবেলা খাবার খেয়ে থাকতে হচ্ছে। দেশে আমাদের মাছের ঘের, চাষের জমি ও অনেকগুলো গবাদি পশু ছিলো। খাবারের কোনো অভাব ছিলো না। এখন পরিস্থিতি অনেক খারাপ। তবে যেসব রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে আসেননি কিংবা আসতে পারেননি তাদের মধ্যে সংকট সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশ মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের একটি প্রতিনিধি দল রোববার বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সীমান্তের দুর্গম আশারতলি এলাকা পরিদর্শনে গিয়েছিলেন।

প্রতিনিধি দলের নেতা ফাউন্ডেশনের চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সভাপতি এডভোকেট জিয়া হাবিব আহসান বলেন, বিভিন্ন মাধ্যমে খবর পেয়ে আমরা ওই এলাকায় গিয়ে দেখি সেখানে পাহাড়ের ভেতর কয়েক হাজার রোহিঙ্গা অত্যন্ত মানবেতর জীবন যাপন করছেন। মূল সড়কের কাছাকাছি পৌঁছাতে না পারায় তাদের কাছে কোনো ধরনের সহায়তাও পৌঁছেনি। তিনি বলেন, আশাপাশে জনবসতি না থাকায় তারা কয়েক দিন না খেয়ে আছেন। অবিলম্বে তাদের কাছে খাদ্য ও বস্ত্র পৌঁছে দেয়া দরকার। তাছাড়া পাহাড়ি এলাকায় মশার উৎপাত বেশি হওয়ায় এসব রোহিঙ্গাদের মধ্যে রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

দৈনিকদেশজনতা/ আই সি

প্রকাশ :সেপ্টেম্বর ৪, ২০১৭ ২:২৮ অপরাহ্ণ