নিজস্ব প্রতিবেদক:
ঈদের বাকি আর মাত্র কয়েক দিন। ঈদে কোরবানি ও আনুষাঙ্গিক কাজের জন্য দা, ছুরি, চাপাতি, বটিসহ অন্যান্য উপকরণ বাধ্যতামূলক হয়ে পড়ে। এসব যন্ত্রপাতি শান দেয়া কিংবা নতুন ভাবে তৈরি করার জন্য একমাত্র মাধ্যম কামার। তাই এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন টাঙ্গাইলের কামাররা। পুরোদমে এখনও বিক্রি শুরু না হলেও দিন-রাত চলছে টুং-টাং শব্দে কামারদের কাজ। তবে কয়লার দাম বেশি হওয়ায় অন্যবারের চেয়ে এবার দা, বটি, ছুরি ও চাপাতির দাম কিছুটা বেশি বলে জানা গেছে।
আগামী ২ সেপ্টেম্বর ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ। যতই দিন ঘনিয়ে আসছে ততই বাড়ছে কামারদের ব্যস্ততা। আগুনের শিখায় তাপ দেয়া ও হাতু ড়ি পেটানোর টুং-টাং শব্দে তৈরি হচ্ছে দা, বটি, চাপাতি ও ছুরিসহ নানা রকমের অস্ত্র। পশু কোরবানিতে এসব দেশীয় অস্ত্র অতি প্রয়োজনীয়। একইভাবে চলছে মোটরচালিত মেশিনে শান দেয়ার কাজও। সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন কামারশালায় দেখা যায়, অনেকেই পরিবারের ব্যবহৃত ও অব্যবহৃত দা, বটি ও ছুরি শান দেয়ার জন্য নিয়ে আসছে কামারদের কাছে। তাই সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে কামারদের বিরামহীন ব্যস্ততা। বছরের অন্যান্য সময়ের চেয়েও দোকানে বেড়েছে মৌসুমি কর্মচারীর সংখ্যা।
পার্ক বাজার এলাকার কোমল কর্মকার বলেন, সারা বছরই আমাদের তৈরি জিনিসের চাহিদা থাকে। তবে কোরবানির ঈদে আমাদের জিনিসের চাহিদা অনেকটাই বেড়ে যায়। এ ঈদের পশু কোরবানির জন্য অনেকেই নতুন ছুরি, চাপাতি, চাকু ইত্যাদি কিনতে আসেন। আমরা লোহার এসব জিনিসের চাহিদার কথা মাথায় রেখে আগে থেকেই বেশ কিছু জিনিস বানিয়ে রাখি। আবার অনেকে কোরবানির জন্য এসব ধারালো অস্ত্রের পাশাপাশি বাড়ি ও কৃষি কাজে ব্যবহৃত কুড়াল, কাচি, পাচন, শাবল ইত্যাদি কিনে নিয়ে যান। তিনি বলেন, বছরের প্রায় প্রতিদিন বিভিন্ন লৌহজাত জিনিস বানিয়ে গড়ে ৪০০- ৫০০ টাকা আয় হয়। কিন্তু ঈদের আগে লোহার অস্ত্রের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এখন প্রতিদিন ৩-৪ হাজার টাকা আয় হয়। হাতে অতিরিক্ত কাজের চাপ থাকায় আমরা এখন অনেক ব্যস্ত। এই ব্যস্ততা চলবে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত।
একই বাজারের বাদল কর্মকার জানান, সাধারণত স্প্রিং লোহা ও কাঁচা লোহা ব্যবহার করে এই দা, বটি ও ছুরি তৈরি করা হয়। স্প্রিং লোহা দিয়ে তৈরি উপকরণের মান ভালো, দামও বেশি। আর কাঁচা লোহার তৈরি উপকরণগুলোর দাম তুলনামূলকভাবে কম হয়ে থাকে। এছাড়াও লোহার মানভেদে স্প্রিং লোহা ৫০০ টাকা, নরমাল ৩০০ টাকা, পশুর চামড়া ছাড়ানো ছুরি ১০০ থেকে ২০০, দা ১৫০ থেকে ৩৫০ টাকা, বটি ২০০ থেকে ৪০০, পশু জবাইয়ের ছুরি ৩০০ থেকে শুরু, চাপাতি ৫০০ থেকে এক হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়। টাঙ্গাইল পাঁচআনি বাজারের দুলাল কর্মকার বলেন, বছরের ১১ মাসে ব্যবসা হয় এক রকম আর কোরবানির ঈদের আগের এক মাসে ব্যবসা হয় আরেক রকম। ঈদুল আজহা উপলক্ষে প্রতিটি উপজেলার কামারদের বেচা বিক্রি বেড়ে যায়, ব্যস্ততাও বেড়ে যায়। তিনি আরো বলেন, তবে কোরবানিতে ব্যবহৃত দেশীয় এই অস্ত্রের দাম কিছুটা বাড়লেও এর প্রভাব পড়েনি ক্রেতাদের মাঝে। অনেকেই এই দাম বাড়ার বিষয়টিকে স্বাভাবিক ভাবেই নিয়েছে।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি