নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশের উত্তর, উত্তর পূর্বাঞ্চল এবং মধ্যাঞ্চলে প্রধান নদীগুলোর বেশিরভাগ এখনও বিপদসীমার ওপরে থাকলেও গত ২৪ ঘণ্টায় পানি কমেছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। আগামী ৭২ ঘণ্টায় পানি আরও কমার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। প্রতিদিন মোট ৯০টি পয়েন্ট পানি মাপে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৯টি পয়েন্টেই পানি কমেছে বলে জানান হয়েছে কেন্দ্রের ওয়েবসাইটে।
জুলাইয়ের শেষ দিক থেকে দেশের উত্তরাঞ্চলের বেশ কিছু জেলা এবং সিলেট অঞ্চলে বন্যা দেখা দেয়। সিলেটের পানি দ্রুত নেমে গেলেও উত্তরের বিস্তীর্ণ এলাকা এখনও পানির নিচে রয়েছে। তবে বড় বন্যা বলতে যা বোঝায়, সেই পরিস্থিতি এখনও তৈরি হয়নি বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। আর সহসা এমন পরিস্থিতি তৈরি হবে বলে আশঙ্কাও নেই তাদের।
বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা অববাহিকা, গঙ্গা-পদ্মা অববাহিকা এবং মেঘনা অববাহিকা একসঙ্গে বিপদসীমা অতিক্রম করলেই সেটাকে বড় বন্যা বলে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র-যমুনা অববাহিকাই কেবল বিপদসীমার ওপরে রয়েছে। আর পানি কমা অব্যাহত থাকায় বাকি দুই নদীও এখন বিপদসীমার ওপরে যাওয়ার আশঙ্কা তারা করছেন না।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রে ওয়েসবাইটে দেয়া তথ্য অনুযায়ী উত্তরে বক্ষপূত্র-যমুনা, উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে পদ্মা এবং উত্তর পূর্বাঞ্চলে সিলেট অঞ্চলে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি হ্রাস পাচ্ছে। তবে উত্তরে গঙ্গা নদীর পানির সমতল সামান্য বৃদ্ধি পেয়েছে।
আগামী ৭২ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানির সমতল হ্রাস অব্যাহত থাকদের পারে। গঙ্গা নদীর পানির সমতল আগামী ২৪ ঘণ্টায় সামান্য বাড়তে পারে, যা পরে স্থিতিশীল হয়ে যেতে পারে। যদিও পদ্মা নদীন পানি সমতল আগামী ৪৮ ঘণ্টায় কমতে পারে। সিলেট অঞ্চলে সুরমা নদীর পানি আগামী ২৪ ঘণ্টায় আরও কমতে পারে। তবে কুশিয়ারা নদীতে বেড়ে যেতে পারে।
জানতে চাইলে বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘প্রধান নদীগুলোর পানি কমছে। ক্রমেই আরও উন্নতি হবে। আমাদের পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামী ৩০ তারিখ পর্যন্ত বন্যা সৃষ্টি হওয়ার মতো বৃষ্টি উজানে হবে না। ফলে এই মাসে আবার নতুন করে বন্যা দেখা দেয়ার আশঙ্কা আমরা করছি না।’
পূর্বাভাস কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী যমুনা নদীর পানি গত ২৪ ঘণ্টায় জামালপুরের বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে ১৪ সেন্টিমিটার, বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে ১৩ সেন্টিমিটার, সিরাজগঞ্জের কাজীপুরে ১৭ সেন্টিমিটার, সিরাজগঞ্জে ১৪ সেন্টিমিটার এবং মানিকগঞ্জের আরিচায় ১০ সেন্টিমিটার কমেছে।
আত্রাই নদীর পানি পাবনার বাঘাবাড়ীতে ১২ সেন্টিমিটার এবং কালিগঙ্গা তারাঘাটে ৭ সেন্টিমিটার কমেছে। পদ্মা রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ পয়েন্টে ১২ সেন্টিমিটার কমেছে। এছাড়া ভাগ্যকুলে পাঁচ সেন্টিমিটার এবং শরীয়তপুরের সুরেস্বরে দুই সেন্টিমিটার কমেছে পদ্মার পানি। সুরমা নদী সিলেটের কানাইঘাটে ১৮ সেন্টিমিটার, সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে পুরাতন সুরমা ১০ সেন্টিমিটার কমেছে। কুশিয়ারা নদী সিলেটের জকিগঞ্জের অমলশীদে ৯ সেন্টিমিটার এবং শেওলায় কমেছে ১১ সেন্টিমিটার।
পূর্বাভাস কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী গত ২৪ ঘন্টায় সবচেয় পানি বেড়েছে ধলেশ্বরীর নদীতে। জাগির পয়েন্টে ২২ সেন্টিমিটার, লাখপুরে ১১ সেন্টিমিটার, নারায়ণগঞ্জ পয়েন্টে এই নদীতে পানি বেড়েছে ৫ সেন্টিমিটার। ঘুর নদী নাটোরের সিংগাইরে বেড়েছে চার সেন্টিমিটার। উত্তরে মহানন্দা নদীর পানি চাঁপাইনবাবগঞ্জে তিন সেন্টিমিটার এবং একই জেলার রোহানপুর পয়েন্টে ৬ সেন্টিমিটার বেড়েছে। যে নদীগুলোর পরিসংখ্যান দেয়া হয়েছে, তার প্রতিটি এখনও বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে। কালিগঞ্জা নদী তারাঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার সর্বোচ্চ ৮৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে।
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ