সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি:
সিরাজগঞ্জের পাঁচটি উপজেলায় বন্যার পানির কারণে কলেজ, মাদ্রাসা, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ও প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ৪০৭ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। নিস্তারানি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সিমা খাতুনের মা আলেয়া খাতুন বলেন, ‘আমার বাড়ীতে পানি। বাহিরে পানি। পুরো এলাকাসহ বিদ্যালয়ে পানি ওঠার কারণে ওয়াবদায় আশ্রয় নিয়েছি। এখন স্কুল বন্ধ।’ উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র আশিকুর রহমান বলেন, ‘প্রায় ১০দিন ধরে স্কুলে পানি উঠেছে। আমাদের বাড়ীতেও কোমর পানি। বই খাতা পানিতে ভিজে যাচ্ছে। পড়া লেখার খুব কষ্ট হচ্ছে। স্কুল কবে খুলবে তাও জানি না।’ বেলকুচি উপজেলার রাজাপুর কলেজের একাদশ শাখার ছাত্র সুমন সরকারের বাবা এশারত আলী বলেন, ‘বাড়ীতে পানি ওঠার পর কলেজ আশ্রয় নিয়ে ছিলাম, সেখানেও কোমর পানি। ছেলেকে কলেজে যাওয়াতো দুরের কথা। আমরা স্ত্রী সন্তান নিয়ে থাকতে পারছি না। এখন কলেজ ছেড়ে ওয়াপদায় যেতে হবে।’
সিরাজগঞ্জ জেলা শিক্ষা অফিস ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলার কাজিপুর, সদর বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলার নিন্মাঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পানি আটকে পড়ায় পর্যায়ক্রমে পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. শফিউল্লাহ বলেন, `১৪৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আঙ্গিনাসহ শ্রেণিকক্ষে পানি উঠায় পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে। পানি কমা শুরু হয়েছে। আগামী এক-সপ্তাহের মধ্যে পুনরায় ক্লাস চালু করা হবে।’ প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সিদ্দিক মো. ইউসুফ রেজা বলেন, ‘বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হওয়ায় ২৬১টি প্রাথমিক বিদ্যালয় পাঠদান বন্ধ করা রয়েছে। ৩৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্যা দুর্গতদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে খুলে দেওয়া হয়েছে। বন্যায় সাতটি প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ ও ৩০৭টি প্রতিষ্ঠান আংশিক ক্ষতি গ্রস্থ হয়েছে।’
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবি) নির্বাহী উপ-সহকারী প্রকৌশলী রনজিৎ কুমার সরকার জানান, যমুনার পানি দ্রুত কমে যাচ্ছে। ২৪ ঘণ্টায় সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে ২৪ সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার ৯০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ১-২ দিনের মধ্যে নিন্মাঞ্চল থেকে পানি নেমে যাবে বলে ধারনা করা হচ্ছে। সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক কামরুন নাহার সিদ্দিকা জানান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিদিনই ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। শিশু খাদ্য ও গো-খাদ্যের ব্যবস্থা করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। পানি কমতে শুরু করেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে পানি নেমে গেলেই আবার ক্লাস শুরু হবে। এদিকে, সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি ধীরগতিতে কমছে। পানি কমলেও এখনো দুর্ভোগ কমেনি। পানিবন্দী মানুষ গরু-ছাগলের সঙ্গে ছোট বাচ্চাদের নিয়ে দুর্বিসহ জীবনযাপন করছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১০ কেজি চাল ও চিড়া-গুড় মুড়ি বিতরণ করা হলেও শিশু খাদ্য বিতরণ না করায় শিশুদের নিয়েও বিপাকে রয়েছে বানভাসীরা।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি