নিজস্ব প্রতিবেদক:
পাবনার খামারিরা ঈদুল আজহা সামনে রেখে দেশীয় পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজা করছেন। তাদের শেষ মুহূর্তের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটছে। তবে ভারতীয় গরু আমদানির খবরে খামারিদের মনে লোকসানের আশঙ্কা ভর করেছে। পাবনার ৯ উপজেলায় ছোটবড় মিলিয়ে রয়েছে প্রায় ২৮ হাজার গো-খামার। গত কয়েক দশকে গড়ে ওঠা এসব খামারের প্রধান ব্যবসা দুগ্ধ উৎপাদন। তবে তারা কুরবানির পশু মোটাতাজাকরণেও পিছিয়ে নেই। গত কয়েক বছরে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের কুরবানির বাজারে দেশী জাতের প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে মোটাতাজা করা গরু সরবরাহ করায় পাবনার গরুর আলাদা কদর জন্মেছে। প্রশাসনিক তৎপরতায় খামারিরা সচেতন হওয়ায় অসাধু পন্থা নয়, খামারিরা বৈজ্ঞানিক কৌশলে প্রাকৃতিকভাবে মোটাতাজা করণে ঝুঁকেছেন।
সরেজমিনে পাবনার আটঘরিয়া ও ঈশ্বরদীর বিভিন্ন খামার ঘুরে দেখা যায়, সারাবছর ধরে লালন-পালন করা পশুগুলোকে আকর্ষণীয় করে তুলতে শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততা চলছে। খামারের শ্রমিকদের যেন দম ফেলার ফুরসত নেই। কেউ কাটছেন ঘাস-খড়, কেউ খৈল, লালিগুড়, ভূষির মিশ্রণে গরুকে খাবার তৈরি করে দিচ্ছেন। কেউবা পরম যত্নে লালিত পশুকে দিচ্ছেন খুদের ভাত। খামারিদের দাবি চিকিৎসকের পরামর্শে অনেকে ভিটামিন ওষুধ খাওয়ালেও ক্ষতিকর স্টেরয়েড বা ইনজেকশন ব্যবহার করছেন না।
পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার খিদিরপুর গ্রামের গো-খামারি আবু তালেব জানান, সারাবছর পরিশ্রম করে, অর্থ লগ্নি করে শেষ মুহূর্তে লোভে পড়ে অনেকেই মোটাতাজা করণে অসাধু পন্থা বেছে নিতেন। কিন্তু, এ পদ্ধতিতে ডেক্রামেথাসন ও স্টেরয়েড ট্যাবলেট খাওয়ানোর পর গরুর চামড়ার ভেতরে বাড়তি পানির স্তর জমে গরুকে বেশি মোটাতাজা ও সবল দেখায়। এতে কমে যায় গরুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। তিনি বলেন, ইনজেকশন বা ওষুধ দিয়ে দ্রুত মোটাতাজা করা গরুর গায়ে শক্তি থাকে না, মাদকাসক্ত মানুষের মতো ঝিমায়। এসব গরু অনেক সময় মানুষের মতো স্ট্রোক করে মারা যায়।
বিগত দু’বছর এ অঞ্চলের মুনাফালোভী খামারি ও চাষিরা কৃত্রিম পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজা করে বাজারে বিক্রি করতে না পেরে লোকসান দিয়েছেন। ফলে তারা জানিয়েছেন এ বছর পাবনা জেলায় শতকরা ৮০ থেকে ৮৫ ভাগ খামারি ও চাষি প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজা করছেন। গো খামারিরা জানান, দেশী জাতের পাশাপাশি পাবনা ব্রিড, অস্ট্রেলিয়ান-ফ্রিজিয়ান, ভারতের হরিয়ান, পাকিস্তানি সাহিয়াল জাতের পাশাপাশি স্থানীয় সংকর জাতের গরুর সমাহার এখন খামারগুলোতে। সদর উপজেলার একরাম মেম্বার, আটঘরিয়ার হাজি শফিউদ্দিন ও দেবোত্তর গ্রামের রকিবুল ইসলাম জানান, ৮০-৯০ হাজার টাকা দিয়ে বাজার থেকে এঁড়ে বাছুর কিনে প্রায় ৫০-৬০ হাজার টাকার খাদ্য খাওয়ানোর পর সেই ষাঁড় বিক্রি করতে হয় দুই থেকে আড়াই লাখ টাকায়। তারা জানান, সারাবছর কঠোর পরিশ্রম করার পর ঈদের সময় যদি আবার ভারত থেকে গরু আসতে থাকে, তাহলে তাদের পোষা গরুর আর দাম থাকে না। বাধ্য হয়ে লোকসানে বিক্রি করতে হয়।
বর্তমানে বাজারে গো-খাদ্যের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় গরু লালন-পালন করাও অসম্ভব হয়ে পড়েছে চাষিদের জন্য। পাবনার বেড়া উপজেলার গরু ব্যবসায়ী মকবুল হোসেন বলেন, পাবনার গরুর চাহিদা ঢাকার বাজারে ভালো। প্রতিবছরই আমি পাবনা থেকে গরু কিনে ঢাকায় বিক্রি করি। কিন্তু এ বছর ঈদের মাত্র ক’দিন বাকি থাকলেও একটি গরুও কিনতে পারিনি। কারণ ভারতের গরু আমদানি শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, খামারিদের খরচ বেড়েছে সত্যি, কিন্তু বেশি দামে গরু কিনে তা বিক্রি করতে না পারলে লোকসান গুণতে হবে। জেলা প্রাণিসম্পদ জানিয়েছে বিভাগআসন্ন কুরবানি ঈদে পাবনায় পর্যাপ্ত মজুদ থাকায় জেলায় কুরবানির পশুর সঙ্কট হবে না। জেলার ২৮ হাজার খামারে কুরবানির জন্য প্রস্তুত হয়েছে প্রায় দেড় লাখ গরু। সদর উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান জানান, গরু মোটাতাজাকরণ ব্যবসাটি খুব লাভজনক। কিন্তু গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধি এবং ভারতীয় গরু বাজারে আসায় খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। পাবনা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আবদুল গফুর জানান, ভারতীয় গরু আমদানি নিষিদ্ধ করে, খামারিদের সরকারি সহায়তা দিলে গরু মোটাতাজাকরণে তারা স্বল্প সময়ে অধিক লাভবান হবেন।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি