নিজস্ব প্রতিবেদক:
অতিবৃষ্টি ও বন্যার কারণে গত মাসের মাঝামাঝি থেকেই বাড়তে শুরু করেছে সব ধরনের সবজি ও কাঁচা খাদ্যপণ্যের দাম। পাইকারি ও খুচরা—দুই বাজারের ব্যবসায়ীরাই বন্যার অজুহাত দেখিয়ে, উৎপাদন কম হওয়া এবং বন্যায় রাস্তাঘাট ভেঙেচুরে ডুবে যাওয়ায় ট্রাকের সময় ও ভাড়া বৃদ্ধির কথা বলে পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার যুক্তি দেখাচ্ছে। কিন্তু আড়তদারদের কাছ থেকে জানা গেছে, বাজারে সরবরাহ আশঙ্কাজনকভাবে কমেনি। আবার ট্রাক ভাড়া যতটা বেড়েছে, তার তুলনায় পণ্যের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধির হিসাব মেলে না। তা ছাড়া পাইকারি বাজারে খাদ্যপণ্যের যে মূল্য দেখা গেছে, খুচরা বাজারে গিয়ে তা বেড়ে যাচ্ছে অস্বাভাবিক মাত্রায়। এসব অনুসন্ধানে এটাই স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে বৃষ্টি-বন্যার অজুহাতে খাদ্যপণ্যের বাজারে আগুন লেগেছে মূলত অসাধু ব্যবসায়ীদের অতিমুনাফার প্রবণতায়।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, ৪৫ টাকার নিচে কোনো মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে না। একটু ভালো মানের চাল কিনতে হলে কেজিতে গুনতে হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকা। চালে বাড়তি খরচের কারণে যখন সাধারণ মানুষের কষ্ট বেড়েছে, তখন এর সঙ্গে যোগ হয়েছে সব ধরনের কাঁচা পণ্যের বাড়তি দাম। অর্থাত্ দেশের মানুষের বেঁচে থাকার প্রধান উপকরণ ভাত-তরকারি খেতেই আগের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ ব্যয় করতে হচ্ছে।
রাজধানীর পাইকারি, খুচরা ও ঢাকার বাইরের কয়েকটি অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানায়, কাঁচাবাজারে সবজির সরবরাহ কম নেই। তবে বন্যার কারণে বিভিন্ন এলাকার কৃষি জমি ডুবে যাওয়ায় উত্পাদন ধীরে ধীরে কমছে। এ জন্য সব ধরনের সবজিই অতিরিক্ত দামে বিক্রি হচ্ছে। আগামী দুই মাস পর্যন্ত দাম কমার কোনো লক্ষণই নেই।
ঢাকার কারওয়ান বাজারের পাইকারি বিক্রেতারা জানান, বৃষ্টিতে আমাদের অনেক পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে। আবার ভারতে বন্যার কারণে আমদানি মূল্য বেড়েছে। তাই দাম না বাড়িয়ে উপায় নেই। দু-এক দিনের মধ্যে পেঁয়াজের পাল্লা (পাঁচ কেজি) ২৫০ থেকে আরো ১০-১৫ টাকা বেড়ে যেতে পারে। আর ঈদের আগে দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই। কাঁচা মরিচের দাম পাইকারি যেখানে ৮০-১০০ টাকা কেজি, সেখানে খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৩০-১৫০ টাকায়। বন্যা শুরুর আগে কাঁচা মরিচ খুচরা বিক্রি হয়েছে ৯০-১০০ টাকা কেজি দরে।
বাজারের তথ্য মতে, পেঁয়াজ ও মরিচের মতোই দ্বিগুণ হয়েছে সব ধরনের সবজির দাম। আবার ঢাকার পাইকারি বাজারে যে দাম, খুচরা বাজারে তার চেয়ে ১৫-২০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের সবজিই। খুচরা বাজারে ৬০ টাকার কমে পাওয়া যাচ্ছে না কোনো সবজি। বেগুন পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা কেজি দরে। আর খুচরা বাজারে বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়, যা এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি শিম বিক্রি হচ্ছে ১০০-১২০ টাকায়, যার পাইকারি মূল্য ৮০ টাকা। আবার প্রতি কেজি বরবটি বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকায়, যা বৃষ্টি-বন্যা শুরুর আগে ছিল ৪০-৪৫ টাকা। অথচ এর পাইকারি মূল্য ৪০-৪৫ টাকা। একইভাবে কেজিতে ১৫-২০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে করল্লা, কচুর লতি ও চিচিঙ্গা বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৫ টাকায়, ঝিঙা ৬৫-৭০ টাকা, পটোল ৫৫-৬০ টাকায় এবং পেঁপে ৪৫ টাকায় এবং কচুর মুখী ৪৫-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে কম দামের সবজি বলতে বাজারে রয়েছে শুধু আলু, ২৫-২৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর এক মাস আগে ফার্মের মুরগির যে ডিম বিক্রি হতো ডজনপ্রতি ৮০ টাকায় তা এখন বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা পর্যন্ত।
তবে সরবরাহে কোনো প্রকার ঘাটতি নেই বলে জানালেন কারওয়ান বাজারের আড়তদাররা। গাউছিয়া সবজি ভাণ্ডারের আড়তদার জামাল মিয়া জানান, বন্যায় কিছু জমি তলিয়ে গেলেও সরবরাহে কোনো ধরনের ঘাটতি নেই। প্রচুর সবজি আসছে। কিন্তু দাম একটু বেশি। কারণ সবজির একটি মৌসুম প্রায় শেষ দিকে। এখন নতুন সবজি লাগানো শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু বন্যার কারণে সেটা হচ্ছে না। তবে নতুন করে বাজারে সবজি আসা ও দাম কমার জন্য আরো অন্তত দুই মাস অপেক্ষা করতে হবে বলে জানান তিনি।
ঢাকার বাইরের কয়েকটি অঞ্চলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেখানেও সব ধরনের খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে গেছে।
দৈনিকদেশজনতা/এন এইচ