দেশ জনতা ডেস্ক:
স্কুল শিক্ষক দিয়ে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে পাঠদান কার্যক্রম চলছে। একাদশ শ্রেণি চালু করার ১০ বছর চলে গেলেও আজ পর্যন্ত এসব স্কুলে একাদশ শ্রেণির জন্য শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করা হয়নি। এতে সংকটের মুখে পড়েছে সরকারি মাধ্যমিক স্কুুল। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) সংকট নিরসনে দফায় দফায় পদ সৃষ্টির প্রস্তাব করলেও ফলাফল শূন্য।
এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় এ বছর ১০ বোর্ডের অধীনে ১৪ লাখ ৩১ হাজার ৭২২ জন পাস করেছে। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৪ হাজার ৭৬১ জন। এর মধ্যে আট বোর্ডের অধীন এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯৭ হাজার ৯৬৪ জন। মাধ্যমিকে অভাবনীয় ফলাফল করে পাসের আনন্দে আত্মহারা শিক্ষার্থীদের কপালে এখন দুশ্চিন্তার ভাঁজ। একাদশ শ্রেণিতে কোথায় ভর্তি হবে? ভর্তিচ্ছু ও তাদের অভিভাবকদের এ টেনশনের মধ্যে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণির ভর্তিতে অনলাইনে আবেদন শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যেসব সরকারি মাধ্যমিক স্কুলে একাদশ শ্রেণি চালু করা হয়েছে, সে সব প্রতিষ্ঠানের স্কুল শাখায় মেধাবী শিক্ষার্থী রয়েছে। কিন্তু কলেজের কার্যক্রম ভালোভাবে চালু না হওয়ায় নিজের প্রতিষ্ঠানে ভর্তিতে আগ্রহী হচ্ছে না শিক্ষার্থীরা। মানসম্মত কলেজের ঘাটতি কমাতে এসব প্রতিষ্ঠানের দিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশেষ নজর প্রয়োজন। এতে করে প্রতি বছর এসএসসি পাস করা শিক্ষার্থীদের কলেজে ভর্তি নিয়ে ভোগান্তি কমে যেত। কয়েক শিক্ষক জানান, সরকারি মাধ্যমিক স্কুলের প্রধান নির্বাহী হচ্ছেন প্রধান শিক্ষক। সরকারি কলেজগুলোতে পাঠদান করেন বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা। তাই স্কুলে প্রভাষকদের পদায়ন করলেও প্রধান শিক্ষকের অধীনে তারা থাকতে চান না।
জানা গেছে, দেশের পুরনো ৩৩৩টি সরকারি মাধ্যমিক স্কুলে সহকারী শিক্ষকের পদ আছে দশ হাজার ছয়টি। এর মধ্যে এক হাজার ৬৯১টি পদই দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মচারীর পদও শূন্য রয়েছে প্রায় দুই হাজার। প্রধান শিক্ষক নেই প্রায় ১শ’ স্কুলে। এই তীব্র শিক্ষক স্বল্পতার মধ্যেই সহকারী শিক্ষক দিয়ে স্কুলে কলেজ শাখার কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে নামকাওয়াস্তে। দেশের মাধ্যমিক পর্যায়ে সবচেয়ে বড় ও মানসম্পন্ন সরকারি স্কুলে একাদশ শ্রেণি চালু করা হয়। উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের সরকারি কলেজগুলোতে ছাত্রছাত্রী ভর্তির সঙ্কুলান না হওয়ায় ২০০৭-০৮ শিক্ষাবর্ষে প্রথমে রাজধানীর দুটি স্কুলে একাদশ শ্রেণিতে পাঠদান চালু করা হয়। প্রতিষ্ঠান দুটি হলো গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুল এবং শেরেবাংলা নগর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। পরে ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষে সাতটি প্রতিষ্ঠানে একাদশ শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি শুরু হয়।
স্কুলগুলো হলো- রাজধানীর শেরেবাংলা নগর সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়, মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়, খিলগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল, রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল, খুলনা জিলা স্কুল এবং বরিশাল জিলা স্কুল। পরে সুনামগঞ্জের সরকারি এসসি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং সিলেটের সরকারি অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়েও একাদশ শ্রেণিতে পাঠদান চালু করা হয়। শিক্ষকের পদ সৃষ্টি না হওয়ায় দু’তিন বছর পর খুলনা জিলা স্কুল, বরিশাল জিলা স্কুল ও সুনামগঞ্জ এসসি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে একাদশ শ্রেণির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। প্রথমে স্কুলগুলোতে দু’তিন জন করে সরকারি কলেজের প্রভাষক পদায়ন বা পদায়নের উদ্যোগ নেয়া হলেও পরবর্তী সময়ে আর শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়নি। স্কুলগুলোতে দু-একজন কলেজ শিক্ষক পদায়ন হলেও তারা স্কুল শিক্ষকদের সঙ্গে চাকরি করতে স্বস্তিবোধ করছে না। আবার স্কুল শিক্ষকরাও কলেজ শিক্ষকদের মেনে নিতে পারছেন না।