২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ৮:২৮

প্রধান বিচারপতির সাথে দেখা করতে যাওয়া বাকশালের পদধ্বনী’

নিজস্ব প্রতিবেদক:

ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় ও প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে সরকারের মন্ত্রীদের আপত্তিকর বক্তব্যের প্রতিবাদে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা বলেছেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের প্রধান বিচারপতির সাথে দেখা করতে যাওয়া বাকশালের পদধ্বনী।

তারা বলেন, এই সরকারের মন্ত্রীরা বিচার বিভাগ ও প্রশাসনের সাথে পার্থক্য বোঝে না। ওবায়দুল কাদের সরকারের মন্ত্রী, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হয়ে কোন এখতিয়ার বলে তিনি প্রধান বিচারপতির সাথে দেখা করলেন তা জাতি জানতে চায়। তিনি বিচার বিভাগের পবিত্রতা নষ্ট করেছেন। এটা জনগণ সহজভাবে নেয়নি।

প্রতিবাদ সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ সর্বসম্মতিক্রমে যে রায় দিয়েছেন তা দেশের ইতিহাসে মাইল ফলক। এ রায়ের ফলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও আইনের শাসন ফিরে এসেছে। যারা এ রায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে তারা বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। যারা এ রায়ের বিরুদ্ধে তারা কি বিচার বিভাগের স্বধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন? তারা মনে করেন আন্দোলন করে রায় পাল্টাবেন। আন্দোলন করে এ রায় পাল্টানো সম্ভব নয়। আপনারা সুপ্রিম কোর্টের মান-সম্মান ও ঐতিহ্যের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন।

তিনি বলেন, এ বিএম খায়রুল হকের প্রধান বিচারপতি হওয়ার কোনো যোগ্যতা ছিল না তা তিনি প্রমাণ করেছেন। তিনি তার রায়ে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল রেখে দিয়েছেন। ত্রয়োদশ সংশোধনীর আদালতে ঘোষিত রায়ে তিনি আরো দুটি সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে রাখার কথা বলেন। কিন্তু তার অবসরে যাওয়ার ১৬ মাস পরে যে লিখিত রায় দিয়েছেন সেখানে এ বিধান রাখা হয়নি। এর থেকে প্রমাণ হয় তিনি নিচুমনের পরিচয় দিয়েছেন। কোনো বিচারপতি এমটা করতে পারেন না। তিনি প্রধান বিচারপতি থেকে যেসব রায় দিয়েছেন তা বেআইনী ঘোষণা করতে হবে।

ষোড়শ সংশোধনীর রায় নিয়ে আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক আপত্তিকর বক্তব্য দেয়ায় তাকে অপসারণ ও গ্রেফতার, মন্ত্রীদের বক্তব্যের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের ভাবমুর্তি ক্ষুণ্ণ করা ও নিম্ন আদালতের চাকরি বিধিমালার গেজেট অবিলম্বে প্রকাশের দাবিতে আজ বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

 

সভাপতির বক্তব্যে জয়নুল আবেদীন বলেন, আমরা আইনজীবীদের ঐক্য চেয়েছিলাম, ঐক্যবদ্ধ বার চেয়েছিলাম। কিন্তু আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা তাদের এজেন্ডা থেকে বের হতে পারেনি।

তিনি বলেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক গণতন্ত্র ধ্বংস করার জন্য ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করেছেন। এজন্য তিনি ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় বিতর্কিত করছেন। তিনি তার বক্তব্যের মাধ্যমে বিচার বিভাগের সাথে প্রতারণা করেছেন। জনগণ তাকে ক্ষমা করবে না। প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করছি তাকে আইন কমিশন থেকে অপসারণ করুন।

মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, মনে হচ্ছে দেশে বাকশালী সরকার রয়েছে। বিচার বিভাগ, প্রশাসন, সরকার সব কিছু একাকার হয়ে গেছে। ওবায়দুল কাদের প্রধান বিচারপতির সাথে দেখা করতে যাওয়া বাকশালের পদধ্বনী মনে হচ্ছে। মন্ত্রীদের লাগামহীন বক্তব্য বিচার বিভাগকে হেয় প্রতিপান্ন করছে।

তিনি বলেন, বিচার বিভাগকে হেয় করায় আপনাদের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকার কোনো অধিকার নেই। এ সরকারের এমনসব মন্ত্রী যারা বিচার বিভাগ ও প্রশাসনের সাথে পার্থক্য বোঝে না। ওবায়দুল কাদের সরকারের মন্ত্রী, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কোন এখতিয়ার বলে তিনি প্রধান বিচারপতির সাথে দেখা করলেন তা জাতি জানতে চায়। তিনি বিচার বিভাগের পবিত্রতা নষ্ট করেছেন।

সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীনের সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, সুপ্রিম কোর্ট বারের সম্পাদক ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন, সানাউল্লাহ মিয়া, তৈমুর আলম খন্দকার, সাবেক সম্পাদক বদরুদ্দোজা বাদল, আরিফা জেসমিন, কায়সার কামাল, আবেদ রাজা, গাজী কামরুল ইসলাম সজল, মির্জা আল মাহমুদ, তাহসিন আলী প্রমুখ।

দৈনিক দেশজনতা /এন আর

প্রকাশ :আগস্ট ১৬, ২০১৭ ৮:১১ অপরাহ্ণ