নিজস্ব প্রতিবেদক:
ভারতের চেন্নাইয়ে চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরেছেন পুলিশের টিয়ারশেলে চোখে আঘাত পাওয়া তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী সিদ্দিকুর রহমান (২৩)। শুক্রবার বিকেল ৩টা ১৫ মিনিটে দিকে তিনি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান। এ সময় বিমানবন্দরে সিদ্দিকুর রহমানকে রির্সিভ করে তার সহপাঠীরা। পরে তারা বিমানবন্দরের সামনের সড়কে চোখে কালো কাপড় বেঁধে মানববন্ধন করেন।
সিদ্দিকুর রহমানের সহপাঠী শেখ ফরিদ জানান, সোয়া ৩টার দিকে বিমানবন্দরে পৌঁছেছে সিদ্দিকুর রহমান। বিমানবন্দর থেকে তাকে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে নেয়া হবে। দেশে ফেরার আগে বৃহস্পতিবার চেন্নাইয়ের শঙ্কর নেত্রালয়ের চিকিৎসক লিঙ্গম গোপালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন সিদ্দিকুর রহমান। তাকে ৫ থেকে ৬ সপ্তাহের ওষুধ দেয়া হয়েছে।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সিদ্দিকুর রহমানের চোখ ভালো হবে কিনা। তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। বাম চোখের রেটিনার ৯০ শতাংশের বেশি নষ্ট হয়ে গেছে। আর ডান চোখ তো আগেই নষ্ট হয়েছে। চেন্নাইয়ে অস্ত্রোপচারের পর এক সপ্তাহ অতিবাহিত হলেও সিদ্দিকুর রহমানের চোখের কোন উন্নতি হয়নি। তবে অস্ত্রোপচারের পর চিকিৎসক জানিয়েছেন, তার চোখে আলো ফিরবে কিনা। তা ৪ থেকে ৬ সপ্তাহ পর জানা যাবে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় গত ২৭ জুলাই দুপুরে একটি ফ্লাইটে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিদ্দিকুর রহমানকে চেন্নাইয়ের শঙ্কর নেত্রালয়ে নেয়া হয়। তার সঙ্গে গিয়েছিলেন জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডাঃ জাহিদুল আহসান মেনন ও বড় ভাই নওয়াব আলী। চেন্নাইয়ে নেয়ার পর ২৮ জুলাই প্রথম চিকিৎসকে দেখানো হয়।
পরে ৩১ জুলাই চিকিৎসক সিদ্দিকুর রহমানের চোখ পরীক্ষা করে জানান, তার দুই চোখই নষ্ট হয়ে গেছে। তবে রোগী চাইলে তারা অস্ত্রোপচার করবেন। ১ আগস্ট রোগীর কাছ থেকে সম্মতি পেয়ে ৪ আগস্ট অস্ত্রোপচার করা হয়। সিদ্দিকুর রহমান চেন্নাই যাওয়ার পর স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম জানান, সিদ্দিকুর রহমান যাতে অন্তত একটি চোখে দেখতে পান। সেজন্য চিকিৎসকরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছেন। সিদ্দিকুর রহমান দেশে ফিরলেই তাকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে চাকরি দেয়া হবে। চেন্নাইয়ে পাঠানোর আগে সিদ্দিকুর রহমান জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
গত ২০ জুলাই শাহবাগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হওয়া নতুন সাতটি সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করছিলেন। এ সময় শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী সিদ্দিকুর রহমান। এরপর জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে।
পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, সিদ্দিকুরের ডান চোখে আলো ফেরার সম্ভাবনা নেই। তবে বাঁ-চোখের অবস্থাও ভালো না। পরে তার চোখের চিকিৎসার ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার নির্দেশে ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের তত্ত্বাবধানে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাকে চেন্নাইয়ের শংকর নেত্রালয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠান।
দৈনিক দেশজনতা/এন আর