২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১:২২

‘খানা-খন্দে পরিবহন ব্যবসায় ধস

নিজস্ব প্রতিবেদক:

মালিকরা ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানের প্রায় ৮০ ভাগই ব্যাংক ঋণ নিয়ে রাস্তায় নামান। আর এখান থেকে যে আয় হয় তা দিয়ে ঋণ শোধ করতে হয়, ড্রাইভার-হেলপারের বেতন দেওয়া হয়। মালিক পক্ষকেও এ দিয়ে সংসার চালাতে হয়। পরিবহন মালিকরা জানালেন সড়ক-মহাসড়কের খানা-খন্দে যেভাবে গাড়ি বিকল হওয়া শুরু হয়েছে তাতে ব্যবসা বন্ধ হওয়ার আর বেশিদিন বাকি নাই। তারপর আবার ব্যাংকের লোকজন এসে ঘাড়ের ওপর খাড়া, টাকা দিতে হবে না হলে আমাদের গাড়ি নিয়ে যাবে অথবা আমাদের কোমরে দঁড়ি পরাবে’।

এদিকে ঢাকা-বগুড়া মহাসড়ক, হাটিকুমরুল বনপাড়া মহাসড়ক ও বঙ্গবন্ধু পশ্চিম মহাসড়ক, নলকা-সিরাজগঞ্জ আঞ্চলিক সড়ক ও সিরাজগঞ্জের মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কগুলো খানাখন্দে যেন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। পরিবহন ব্যবসায়ী আমজাদ আলী আক্ষেপ করে বলছিলেন ‘প্রতিটি ট্রিপেই বিকল হয়ে আসছে গাড়ি। আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি। রাস্তা-ঘাটের যে অবস্থা তাতে গাড়ি বন্ধ করা ছাড়া আর উপায় নাই।’  জানা যায়, এ ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তরা পরিবহন শ্রমিকদের চাইতেও দুরবস্থায় রয়েছেন। পরিবহন মালিকরা মনে করছেন ব্যাংক ঋণ নির্ভর এই খাতে সড়ক-মহাসড়ক জুড়ে যে খনা-খন্দ সৃষ্টি হয়েছে তা দ্রুত ঠিক না করলে এ ব্যবসা ধ্বংস হয়ে যাবে। সারাদেশে ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান রয়েছে প্রায় ৮০ হাজার। এছাড়া পণ্য ও মালামাল পরিবহনের সঙ্গে কুলি, শ্রমিক ও ব্যবসায়ী সংশ্লিষ্টরা রয়েছে । সব মিলিয়ে এই খাতে প্রায় কোটি মানুষের আয়-রোজগার নির্ভর করছে। সড়ক-মহাসড়ককের খনা-খন্দে যদি গাড়ি না চলে তাহলে তাদের আয়ও বন্ধ হয়ে যাবে।

ট্রাক ড্রাইভার লিটন আহমেদ বলেন, প্রতিটি ট্রিপে গাড়ির কাজ করাতে হয় রাস্তায় খানা-খন্দের কারণে। এভাবে চলতে থাকলে আমরাসহ মালিক পক্ষ অনেক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। তিনি বলেন, গাড়ির প্রতিটা নাট-বল্টু প্রায় খুলে খুলে পড়ছে। বডি ভেঙে যাচ্ছে। গাড়ি মেরামতকারী মিস্ত্রি নজরুল ইসলাম জানান, রাস্তাঘাটের খানা-খন্দের কারণে আগের তুলনায় আমাদের কাজ অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। সিরাজগঞ্জ জেলা মটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আনছার আলীর সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, বর্তমানে সড়ক-মহাড়কে যে অবস্থা তাতে গাড়ি চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এই খানাখন্দ যদি দ্রুত সংস্কার করা না হয় তাহলে প্রতিটি রোডের গাড়ি বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া আর উপায় নাই। তিনি আরো বলেন, আমরা খানাখন্দ দ্রুত সংস্কারের জন্য সওজ অফিসে লিখিত অভিযোগ করেছি।

সিরাজগঞ্জ জেলা ট্রাক ও ট্যাঙ্কলরি মালিক গ্রুপের সভাপতি নূর কয়েম সবুজ বলেন, আমরা পণ্য পরিবহনের জন্য চরম বিপাকে পড়েছি। রাস্তা-ঘাটের অবস্থা এতই খারাপ যে একটি ট্রিপ পাঠালে রাস্তা থেকেই ড্রাইভারের ফোন- গাড়ি বিকল হয়ে পড়েছে। এখন কি করব। তিনি আরো বলেন, গাড়ি যেভাবে বিকল হয়ে পড়ছে। আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি। এভাবে চললে গাড়ির ব্যবসা থেকে বিরত থাকতে হবে। তাই দ্রুত সড়ক-মহাসড়ক সংস্কার করে পরিবহন শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।

সিরাজগঞ্জ জেলা বাস, মিনিবাস ও কোচ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মনিরুজ্জামান (মনি) বলেন, সড়ক-মহাসড়ক দ্রুত সংস্কারের জন্য বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছি। এটা যদি দ্রুত সংস্কার করা না হয় তাহলে সিরাজগঞ্জ থেকে পরিবহন আর চালাতে পারবো না।’ তিনি সড়ক-মহাসড়ক দ্রুত সংস্কার করে পরিবহন শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান। এদিকে বরাদ্দ নেই এমন অজুহাতে কয়েক বছর ধরেই সওজের রাস্তা সংস্কার ও মেরামত কাজে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। জোড়াতালির কাজ সারাবছর চললেও নেই টেকসই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও উদ্যোগ। মাঝে মাঝে মন্ত্রী ও সওজের বড় কর্মকর্তারা পরিদর্শনে এলে শুধু তড়িঘড়ি করে মেরামত করা হয়। কর্মকর্তারা চলে যাওয়ার কয়েকদিন পরই আবার সেই আদি চিত্র ভেসে ওঠে।

সিরাজগঞ্জ সওজ নির্বাহী প্রকৌশলী আবু হেনা মোস্তফা কামাল জানান, হাটিকুমরুল মোড়ে প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪টি সেকশন বা ভাগে ‘ক্লোভার-লিফ’ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া প্রায় ২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে নলকা থেকে সিরাজগঞ্জ শহর হয়ে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিমপাড়ে মুলিবাড়ি পর্যন্ত চার লেন রাস্তা নির্মাণের পরিকল্পনাও রয়েছে। এ জন্যই কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। এই কর্মকর্তা জানালেন তবে দ্রুত এ সমস্যা সমাধান করে হবে।

দৈনিকদেশজনতা/ আই সি

প্রকাশ :আগস্ট ৭, ২০১৭ ১:২০ অপরাহ্ণ