নিজস্ব প্রতিবেদক:
আকাশে সূর্য হাসার পর থেকে জলজট থেকে আপাতত মুক্তি মিলেছে চট্টগ্রামবাসীর। কিন্তু পানি নেমে যাওয়ার পর সড়কের পরিস্থিতি দেখে হতবাক বন্দরনগরীর বাসিন্দারা। পানির নিচে থেকে সড়কের ওপরের অংশ ক্ষয়ে গেছে বহুলাংশে। তৈরি হয়েছে হাজারো খানাখন্দক, কোথাও কোথাও তৈরি হয়েছে বিরাটাকারের গর্ত। বর্ষা মৌসুম বলে সড়ক সংস্কারে হাতও দিতে পারছে না সিটি করপোরেশন। তাই ভোগান্তি থেকেও আপাতত মুক্তির আশা নেই। সিটি করপোরেশনের হিসাবে জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহের প্রবল বৃষ্টিতে নগরের ৩০০ কিলোমিটার সড়ক আগেই ভেঙেছে। মাঝখানে কিছুদিন বিরতির পর জুলাইয়ের শেষে আবার শুরু হয় টানা বৃষ্টি। এ সময় জলাবদ্ধতায় সড়কগুলোর গর্ত একেকটি ডোবায় রুপ নিয়েছে। যার উপর লাফিয়ে লাফিয়ে চলেছ যানবাহন। বৃষ্টি থামলে ১৫ দিনের মধ্যে এসব সড়কের ভাঙাচোরা অংশ মেরামতের কথা বললেও তার কিছুই করতে পারেনি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। কোনো কোনো সড়কের গর্তে ভাঙাচোরা ইট ফেলে চলার পথে যন্ত্রণার উপসম করা যায়নি।
চট্টগ্রাম মহানগরের মোট সড়কের দৈর্ঘ্য এক হাজার ১৭৪ কিলোমিটার। চলতি বছরের ৩১ মে, ১২ জুন এবং ৩ ও ৪ জুলাইয়ের ভারী বর্ষণে মোট সড়কের প্রায় ৩০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসব সড়কের কোথাও পিচঢালাই উঠে গিয়ে বড় গর্ত, কোথাও খানাখন্দ সৃষ্টি হয়। এর মধ্যেই চলছে পানির পাইপ বসানোর জন্য ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়ি এবং চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) উড়ালসড়কের নির্মাণকাজ। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী মহিউদ্দিন আহমদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আগস্টের শুরুতে আকাশে সুর্য হাসায় নগরীতে জলাবদ্ধতা তেমন নেই। এ সুযোগে নগরীর বেশ কিছু সড়কের গর্তের সংস্কার কাজ করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘পুরোপুরি সড়ক সংস্কার করতে টানা ১৫ দিন রোদের প্রয়োজন। এরমধ্যেও ওয়াসা নির্ধারিত সময়ে পাইপলাইন বসানোর কাজ শেষ করতে না পারার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলোর সংস্কার কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।’ সম্প্রতি একদিন নগরীর সিডিএ অ্যাভিনিউয়ের নাসিরাবাদ এলাকায় মিনিবাসের একটি চাকা সড়কের বড় গর্তে আটকে থাকতে দেখা গেছে। পরে যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে স্থানীয় লোকজনের সহায়তা চাকা ওপরে তোলা হয়। চালকের সহকারী জামাল হোসেন বলেন, যাত্রী নিয়ে বহদ্দারহাট থেকে নিউমার্কেটে যাচ্ছিলেন তারা। বহদ্দারহাট থেকে নাসিরাবাদ পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটারের মধ্যে অন্তত চারটি বড় গর্তে চারবার গাড়ির চাকা আটকে যায়। ১০ মিনিটের পথ পাড়ি দিতে এখন ৩০-৩৫ মিনিট লাগছে। নাসিরাবাদ এলাকায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে আছেন নগর পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক মনজুর আলম মজুমদার। তিনি বলেন, প্রতিদিন চার থেকে পাঁচটি গাড়ির চাকা গর্তে পড়ে আটকে যায়। বাড়তি সময় দিয়েও যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। নাসিরাবাদ থেকে প্রায় ১০০ মিটার দূরে দুই নম্বর গেট মোড়। নগরের ব্যস্ততম চৌরাস্তার এই মোড় ছোট-বড় গর্তে ভরা। এখানে এসে থমকে যাচ্ছে গাড়ির গতি।
নাসিরাবাদ দুই নম্বর গেটে থেকে বেবি সুপার মার্কেট পর্যন্ত বায়েজিদ বোস্তামী সড়কের দূরত্ব প্রায় এক কিলোমিটার। সড়কের এই অংশের অনেক জায়গায় পিচ উঠে গেছে। রয়েছে কাদাপানি। বেবি সুপার মার্কেটের সামনে অন্তত ছয়টি বিশাল গর্ত রয়েছে। গর্ত এড়াতে সড়কের এই পাশ এড়িয়ে চলছেন অনেক গাড়িচালক। সড়কের এই অংশ থেকে চা-বোর্ড পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার অংশ অনেকটা ভালো। তবে বায়েজিদ বোস্তামী মাজার গেট থেকে অক্সিজেন মোড় পর্যন্ত তিনটি অংশে চলছে ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়ি।
সড়কের পাবলিক কলেজ গেট এলাকায় সড়কের এক পাশজুড়ে বিশাল এক গর্ত। পাশের একটি কারখানার দুই শ্রমিক ইউসুফ ও মোহাম্মদ আজাদ ঠেলাগাড়ি করে ইট-পাথর ফেলে গর্তটি ভরাট করার চেষ্টা করেন। গাড়ি ঠিকভাবে চলার জন্য কারখানা কর্তৃপক্ষ এ উদ্যোগ নেয় বলে জানান তাঁরা।
নগরের অক্সিজেন থেকে মুরাদপুর পর্যন্ত হাটহাজারী সড়কের সাড়ে তিন কিলোমিটারের অধিকাংশ জায়গায় ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। সড়কের বিভিন্ন অংশে এক পাশে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
এই সড়কে নিয়মিত যাত্রী পরিবহন করেন টে¤েপাচালক আবদুল আলিম। তিনি বলেন, মুরাদপুর থেকে অক্সিজেন যেতে ১২ থেকে ১৫ মিনিট লাগার কথা। এখন এক ঘণ্টার বেশি সময় লাগে। আগে যেখানে ১০টি ট্রিপ (যাওয়া-আসা) দেওয়া যেত, এখন সাতটির বেশি দেওয়া যায় না। এ ছাড়া গর্তে পড়ে গাড়ির যন্ত্রাংশ খারাপ হচ্ছে নিয়মিত।
সিডিএ অ্যাভিনিউয়ের মুরাদপুর মোড় থেকে বহদ্দারহাট মোড় পর্যন্ত সড়কের ছোট-বড় গর্ত যেমন রয়েছে, তেমনি পিচঢালাইও উঠে গেছে। বহদ্দারহাট মোড় থেকে শুরু হওয়া আরাকান সড়কের অবস্থা এক কথায় ভয়াবহ। সিডিএর উড়ালসড়কের র্যা¤েপর নির্মাণকাজের জন্য বহদ্দারহাট মোড় থেকে চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা পর্যন্ত সড়কের এক পাশ বন্ধ আছে। অন্য পাশেও খানাখন্দে ভরা।
চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা থেকে বুড়ির পুকুরপাড় পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার সড়কের কোথাও কোথাও পিচঢালাই উঠে গেছে। সড়ক বেহালের কারণে বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে বুড়ির পুকুরপাড় পর্যন্ত এক পাশ বন্ধ রয়েছে।
নগরের পোর্ট কানেকটিং (পিসি) সড়কের বড়পুল এলাকায় সড়কের গর্তের সামনে ঝুঁকি এড়াতে গাছ রেখে দিয়েছেন স্থানীয় লোকজন। এই সড়কের সরাইপাড়া, ওয়াপদা, নয়াবাজার এলাকায় সড়কের দুই পাশে বিশাল বিশাল গর্ত আছে।
একই অবস্থা আগ্রাবাদ এক্সেস রোডেরও। আগেই বেহাল হওয়া বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল সংযোগ সড়ক, খাজা সড়ক, শাহ আমানত সেতু সংযোগ সড়ক, বিমানবন্দর সড়ক, র্স্ট্যান্ড রোড, ঢাকা ট্রাঙ্ক (ডিটি) রোড, হালিশহর সড়ক, কাপাসগোলা সড়ক, ফিরিঙ্গি বাজার সড়ক, মেরিনার্স সড়ক, জুবিলী রোড, মিয়াখান সড়কের খানাখন্দগুলো বড় হয়েছে, অনেক জায়গায় পিচ উঠে গেছে।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে প্রাকৃতিক কারণে নির্ধারিত সময়ে পানির পাইপ বসানোর কাজ শেষ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, দ্রুত কাজ শেষ করতে তাঁরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
উড়ালসড়কের নিচের সড়ক সাময়িকভাবে সংস্কার করে দেওয়া হচ্ছে বলে জানান সিডিএর প্রকল্প পরিচালক মাহফুজুর রহমান।
দৈনিকদেশজনতা/এন এইচ